• ইসলামাবাদ • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এ বার পাকিস্তান। তালিবানের সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করছে একের পর এক দেশ। কিছু দিন আগেই মার্কিন কর্তৃপক্ষের মুখে শোনা গিয়েছে এ কথা। এ বার শোনা গেল পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মুখে। তুলনায় শান্তিকামী যে তালিবানরা, তাদের সঙ্গে একটা সার্বিক আলোচনার বসার কথা বলছেন তিনি। (ছবিতে: ধৃত তালিবান)
হঠাৎ এমন বক্তব্য? গত ৩০ জুলাই উত্তরপশ্চিম পাকিস্তানের জেল ভেঙে আড়াইশো তালিবান বন্দি পালানোর পরই কি আবার নতুন করে মত পাল্টাচ্ছে পাক সরকার? বোঝা মুশকিল। আরও বেশি মুশকিল এই জন্যই যে, জুলাই-এর তৃতীয় সপ্তাহেই ইসলামাবাদ একটি মন্তব্য করেছিল যে তালিবানের সঙ্গে যে কোনও আলোচনারই নেতৃত্বে থাকা উচিত আফগানিস্তানের। তার পর আবার এখন এ সব কথা কেন? কী ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ? |
কী ভাবছেন, তা বোধহয় তাঁরা নিজেরাও জানেন না। কেননা তালিবানের সঙ্গে কথাবার্তার পরিবেশ ঠিক কোন পথে তৈরি করা যায় তা নিয়ে ইসলামাবাদের মধ্যেই তো তীব্র মতভেদ। শরিফ যা-ই বলুন না কেন, তাঁর বিরোধিতা করার জন্য প্রস্তুত তাঁরই সরকারের অনেক নেতা। এবং পাক সেনা-মহল?
সেনাবাহিনী আলোচনায় মত দেবেই বা কেন? উত্তর পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে এখনও প্রত্যহ তালিবানের আক্রমণ চলছে, প্রতিটি ঘটনাতেই সাধারণ মানুষ নিহত হচ্ছেন, তালিবানি হুমকিতে গ্রামীণ সমাজ তটস্থ হয়ে রয়েছে, এ সবের মোকাবিলা তো পাক প্রশাসন করছে না, করছে সেনাবাহিনীই। সুতরাং রাওয়ালপিন্ডিতে এখনও সঙ্গত দ্বিধা: কথোপকথন ইত্যাদিতে তালিবান চিড়ে ভিজবে কি? হিংসার তাণ্ডব না থামলে কথাবার্তার পরিবেশ তৈরি হওয়া সম্ভব কি? অর্থাৎ, ভারতের মাওবাদী সমস্যাও যেখানে এসে ঠেকে যাচ্ছে, পাকিস্তানের তালিবান সমস্যাতেও সেই একই ঘুলঘুলাইয়া। অস্ত্র সংবরণ আগে, না আলোচনা আগে? পারবেন কি শরিফ, এই ধাঁধার সমাধান বার করতে?
|
• অসলো • সেই অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেভিক। দুই বছর আগে নরওয়ের এই নাগরিক এলোপাথারি গুলি ছুড়ে সাতাত্তর জনকে মেরে ফেলেছিলেন, প্রায় সকলেই ছাত্রছাত্রী। বিচারে একুশ বছরের নির্বাসন হয়েছে তাঁর। জেলে বসেই ব্রেভিক ঠিক করেছিলেন, পড়াশোনা করবেন। জেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন, কোনও ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পেলে যাতে তাঁকে জেলের অভ্যন্তরেই পড়াশোনার সুযোগ দেওয়া হয়। জেল কর্তৃপক্ষ রাজি হয়। ব্রেভিক অ্যাপ্লিকেশন পাঠান নরওয়ের বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব অসলো-য়। কিন্তু অসলো বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর দরখাস্ত গ্রহণ করতেই রাজি হল না! স্রেফ বাতিল করে দিল! এত ঘৃণ্য অপরাধীকে তথাকথিত ‘নৈতিক সংশোধন’-এর সুযোগ দিতেও তারা রাজি নয়!
|
ক্ষমতার মহলে একটা ছদ্মনাম আছে তাঁর। ‘কূটনীতির শেখ’। আরও একটা বিশেষণ আছে তাঁর জন্য, তত ভাল শুনতে নয় : ‘স্মুথ অপারেটর’। কূটনীতিটা নাকি তিনি বড্ড ভাল বেঝেন, নানা মতের লোকজনকে নিজের হাতে সহজেই এনে ফেলতে পারেন। গত সপ্তাহে সেই হাসান রওহানি ইরানের সপ্তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করলেন। অনেক আশা তাঁর ওপর ইরানবাসীর, এবং তাবৎ বিশ্বের। তিনি নাকি এমন গোত্রের ‘মডারেট’ নেতা, যিনি চরমপন্থী ইসলামি শিবিরকে না চটিয়েও পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার ক্ষমতা রাখেন। ইরানের উপর থেকে মার্কিন ও অন্যান্য পশ্চিমি দেশের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তোলার চেষ্টা করতে পারেন।
বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার চোটে ইরান দেশটার হাঁড়ির হাল আজ বেশ কয়েক বছর যাবৎ। সুতরাং প্রেসিডেন্ট রওহানি সুবাতাসের দূত, এই খবর দিকে দিকে রটে গিয়েছে অ্যাদ্দিনে। সর্বময় ধর্মগুরু আয়াতোল্লা খামেনেই তাঁর উপর ভরসা রাখছেন। আবার মার্কিন সংবাদপত্রেও তাঁর সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক মন্তব্য করা হচ্ছে। ‘কূটনীতির শেখ’ ক্ষমতার আসনে বসেই কূটনীতির খেলা শুরু করে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশ ‘সম্মানজনক’ শর্তে পরমাণু আলোচনায় মার্কিন দেশের সঙ্গে বৈঠক করতে রাজি। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আহমদিনেজাদের ক্রমাগত অগ্নিবর্ষী বক্তব্যের পর, ইজরায়েলকে হামেশা উড়িয়ে দেবার হুমকির পর নিশ্চয়ই এই নতুন প্রেসিডেন্টের অবস্থান ইরানি মার্কিনি সকলের কাছেই খুব ‘নতুন’ ঠেকছে। কিছু মার্কিন সংবাদপত্র এমনও লিখেছে যে প্রেসিডেন্ট রওহানি আমেরিকাকে পরমাণু অলোচনার নতুন রাউন্ডে ‘আমন্ত্রণ’ জানাচ্ছেন। অতটা আশাবাদ হয়তো ভিত্তিহীন, তবু ওয়াশিংটন নিশ্চয়ই এই মুহূর্তটির সদ্ব্যবহার করতে ভুল করবে না। নিশ্চয়ই তারা চেষ্টা করবে রওহানিকে বেশি চাপ না দেওয়ার! কূটনীতির অতল খাদ থেকে যে একটু নিরাপদ তলে উঠে আসতে পারছে মার্কিন-ইরান সম্পর্ক, সে তো কেবল রওহানির জন্যই! |