ছক কষেই ডনকে আরবে রেখেছে পাকিস্তান
খন নেই, মানে আগে ছিল।
এখন নেই মানে, আপাতত নেই। সময় হলে আবার সে ফিরবে তার নিরাপদ আশ্রয়ে। যথোচিত খাতিরে মর্যাদায় তাকে ফিরিয়ে আনবে আইএসআই ও পাকিস্তানের সেনা।
দাউদ ইব্রাহিম সম্পর্কে নওয়াজ শরিফের বিশেষ দূত শাহরিয়ার খানের মন্তব্যকে ঠিক এই ভাবেই দেখছেন ভারতের গোয়েন্দারা। শাহরিয়ার কাল লন্ডনে দাবি করেন, পাকিস্তান থেকে দাউদকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে রয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারাও বলছেন, শাহরিয়ার যা বলছেন, তা একেবারে মিথ্যা নয়। পাকিস্তান তার স্বার্থেই দাউদকে আরবের কোনও শহরে পাঠিয়েছে। তাড়িয়ে দেওয়ার কথাটা নির্ভেজাল ও হাসকর মিথ্যা। দাউদ আরবে গিয়েছে পাক-সেনা এবং আইএসআইয়ের সাহায্য নিয়েই। তবে গত এপ্রিলেও যে দাউদ করাচিতেই ছিল, তার প্রমাণ দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের কাছেই রয়েছে। আইপিএল-এর ম্যাচ গড়াপেটার তদন্তে নেমে দাউদ ও ছোটা শাকিলের মোবাইলে আড়ি পাতে পুলিশ। জানা যায়, দাউদ ও তার ডান হাত ছোটা শাকিল পাকিস্তান থেকে টেলিফোনে ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ন্ত্রণ করছে।
একটি গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, দাউদ এখন সৌদি আরবে ‘উমরাহ’ বা তীর্থ করতে গিয়েছে। শুক্রবার মক্কা প্রদেশের জেড্ডা শহরে সে ঈদ পালন করেছে। আর ডি-কোম্পানির অন্য পাণ্ডারা যে এখন করাচিতেই রয়েছে, তার প্রমাণও মিলেছে। শুক্রবার ছোটা শাকিল করাচি থেকে মুম্বইয়ের বহু লোককে এসএমএসে ‘ঈদ মুবারক’ জানিয়েছে। মুম্বইয়ে অনেক সাংবাদিক সেই শুভেচ্ছা-বার্তা পেয়েছেন। দাউদের গ্যাংয়ের অন্যরাও নিজেদের পরিবারের লোকদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে মুম্বইয়ে টেলিফোন করেছেন।
প্রশ্ন হল, কেন দাউদ পাকিস্তানের বাইরে? তীর্থ করতে! কোম্পানি সামলাতে? গোয়েন্দারা বলছেন, এত দিন যারা আদরে খাতিরে নিরাপদ আশ্রয় জুগিয়ে এসেছে, তাদের প্রতিও তো কিছুটা দায়িত্ব রয়েছে ডনের! আগামী মাসে নিউইয়র্কে ভারত-পাক প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হতে পারে। সেখানে দাউদকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে মনমোহন সিংহ প্রশ্ন তুললে নওয়াজ শরিফ যাতে বুকে হাত দিয়ে তা উড়িয়ে দিতে পারেন, সেই জন্যই দাউদকে আপাতত পাকিস্তানের বাইরে রাখা হয়েছে।
ঠিক এ ভাবেই আগরা শীর্ষ সম্মেলনের টেবিলেও সত্যের সাদা চাদর পেতেছিল পাকিস্তান। দিল্লিতে পারভেজ মুশারফের সঙ্গে বৈঠকে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী দাউদ প্রসঙ্গ তোলেন। মুম্বইয়ে ১৯৯৩ সালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের প্রধান চক্রীকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। মুশারফ সেই দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দেন। সাফ জানান, দাউদ পাকিস্তানে নেই। পরে গোয়েন্দারা খোঁজ নিয়ে দেখেন, সত্যিই দাউদ সে সময় পাকিস্তানে ছিল না। আইএসআই তাকে সৌদি আরব হয়ে সিঙ্গাপুরের গোপন ঠিকানায় নিয়ে গিয়েছিল। মুশারফ ইসলামাবাদে ফিরে যাওয়ার পরেই বিশেষ বিমানে করে দাউদকে করাচিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পৌঁছে দেওয়া হয় ক্লিফটন এনক্লেভের ‘হোয়াইট হাউস’ নামের প্রাসাদে।
এ বারেও কি সেই একই ছক পাকিস্তানের? তা যদি হয়ও, প্রাক্তন পাক বিদেশসচিব শাহরিয়ার ইতিমধ্যেই যা বলে ফেলেছেন, তার ভিত্তিতেই যথেষ্ট চাপ তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন ভারতের কূটনীতিকরা। এবং সেটাই করতে চায় দিল্লি। কারণ শাহরিয়ারকেই ভারতের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দূত নিয়োগ করেছেন নওয়াজ।
আইপিএল ম্যাচ গড়াপেটায় দাউদ ও পাকিস্তান থেকে তার কাজ-কারবার সম্পর্কে যে সব নতুন তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা-ও ইসলামাবাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, “১৯৯৩-এর মুম্বই-বিস্ফোরণ সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ পাঠানোর কাজ কখনওই বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। এখন নতুন তথ্য হাতে এসেছে। তাই মুম্বই-বিস্ফোরণের অভিযুক্তদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না।”
নয়াদিল্লি যে তাঁর মন্তব্যকে অস্ত্র করবে, তা বুঝতে পেরেই গত কালের মন্তব্য থেকে ডিগবাজি খেয়েছেন শাহরিয়ার। আজ তাঁর বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি ওই কথা বলেছেন। দাউদ কোথায় রয়েছে, সে বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। প্রাক্তন পাক বিদেশসচিবের বক্তব্য, “বিদেশ মন্ত্রকে থাকার সময় আমি কোনও দিনই জানতাম না দাউদ কোথায় থাকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হয়তো এ বিষয়ে ধারণা থাকতে পারে। বিদেশ মন্ত্রক জানে না। সে পাকিস্তানে আছে কিনা, কখনও ছিল কি না, তা নিয়ে আমার কোনও ধারণা নেই।”
শাহরিয়রের দাবি উড়িয়ে দিয়ে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের কর্তারা বলছেন, ম্যাচ গড়াপেটার তদন্তে নেমেই দাউদের পাকিস্তানে হাজির থাকার প্রমাণ মিলেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মোবাইল ফোনের ৮টি নম্বরে আড়ি পাতা হয়। তাতেই জানা যায়, দাউদ ও ছোটা শাকিল নিজে বুকিদের নির্দেশ দিয়েছে। ক্রিকেটারদের ভয় দেখাতে দাউদের এজেন্টরা ছোটা শাকিলের নাম ব্যবহার করেছে। এপ্রিল পর্যন্তও দাউদ পাকিস্তান থেকেই ফোনে কথা বলেছে। তাই চার্জশিটে দাউদের নামও রয়েছে। সব তথ্যপ্রমাণও আদালতে হাজির করা হবে। মুম্বই পুলিশও বলছে, দাউদ প্রায়ই করাচি থেকে মুম্বইয়ে দিদি হাসিনা পার্কারের সঙ্গে কথা বলে। এই হাসিনা ওরফে ‘বড়ি আপা’-ই দাউদের হয়ে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা চালান।
শাহরিয়ার দাউদকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেও সেটা কোনও মতেই সম্ভব নয় বলেই মনে করেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা। কারণ পাক-সেনা ও আইএসআইয়ের হাঁড়ির খবর জানে সে। আইএসআই যেমন দাউদকে ভারতের হাত থেকে রক্ষা করে, তেমনই দাউদও তার ড্রাগ-পাচার ও যাবতীয় বেআইনি ব্যবসার মুনাফার মোটা অংশ আইএসআই অফিসারদের দেয়। ও দেশে পাখতুন অঞ্চলে সাম্প্রতিক নির্বাচনেও দাউদের টাকা খেটেছে। কারণ এই এলাকাটিই দাউদের ড্রাগ ব্যবসার আঁতুড়ঘর।
আবার কবে করাচিতে ফিরবে ডন? গোয়েন্দারা মনে করছেন, আইএসআইয়ের সবুজ সঙ্কেত পেলে আগামী সপ্তাহেই। অথবা মনমোহন-নওয়াজ শরিফ বৈঠক বহাল থাকলে, সেপ্টেম্বরের শেষে। তার পরে ক্লিফটন এনক্লেভের হোয়াইট হাউস বা করাচির আর দুই ডেরার কোনও একটি ফের ভরে উঠবে ডনের প্রিয় পাকো র্যবান পারফিউমে। সিগারের ধোঁয়ায়।

দাউদের তিন ডেরা
স্থায়ী ঠিকানা
• ক্লিফটন এনক্লেভ (হোয়াইট হাউস), হাউস নম্বর ৩৭,
স্ট্রিট নম্বর ৩০, ডিফেন্স হাউসিং অথরিটি, করাচি
অস্থায়ী ডেরা
• এফ-৬/২, হাউস নম্বর ২৯, স্ট্রিট নম্বর ২২, করাচি
• নুরাবাদের পাহাড়ি এলাকায় প্রাসোদপম বাংলো, করাচি

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.