দাউদ ছিল, তাড়িয়ে দিয়েছি, মেনে নিল নওয়াজ সরকার
দাউদ ইব্রাহিম তাদের দেশেই লুকিয়ে ছিল বলে স্বীকার করে নিল পাকিস্তান সরকার। লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিশেষ দূত শাহরিয়ার খান বলেন, “দাউদ তখন পাকিস্তানেই ছিল।
তবে পরে তাকে পাকিস্তান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার ধারণা, সে এখন সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে রয়েছে।”
ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক ফের গড়ে তোলার উপরে জোর দিয়েছিলেন নওয়াজ শরিফ। সেই কারণে প্রাক্তন কূটনীতিক শাহরিয়ার খানকে বিশেষ দায়িত্বও দিয়েছেন তিনি। সেই
দাউদ ইব্রাহিম
শাহরিয়ারের দাউদ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি ভারতের দীর্ঘদিনের বক্তব্যকে ফের সত্যি বলে তুলে ধরলেও তাতে কাজের কাজ কতটা হবে, জঙ্গি দমনে ইসলামাবাদ কতটা কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে সাউথ ব্লকের অন্দরমহলে। আর তার কারণ হিসেবে কূটনীতিকরা বলছেন, আগরা মহাবৈঠকের ঠিক আগের দিনটির কথা।
কী হয়েছিল সে দিন?
পারভেজ মুশারফ-অটলবিহারী বাজপেয়ীর বৈঠকের আগের দিন পাক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে সরাসরি দাউদের পাকিস্তানে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের তৎকালীন ‘নাম্বার-টু’ লালকৃষ্ণ আডবাণী। এতে কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে পারভেজ বলে উঠেছিলেন, “আডবাণীজি, এমন একটা ছোট বিষয় তুলছেন কেন?” জবাবে আডবাণী সাফ বলেছিলেন, “দাউদ-প্রশ্ন পাকিস্তানের কাছে ছোট হলেও ভারতের কাছে নয়।” তখন পারভেজ জানান, দাউদ ছিল বটে পাকিস্তানে, কিন্তু এখন আর নেই! তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সে দুবাইতে রয়েছে। নর্থ ব্লকে ফিরে গোয়েন্দাদের কাছ থেকে আডবাণী জানতে পেরেছিলেন, পারভেজের কথা ঠিক। কিন্তু কেন দাউদকে ‘তাড়িয়ে’ দেওয়া হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে কূটনীতিক ও গোয়েন্দা-কর্তারা যা জেনেছিলেন, তা-ও কিছু কম আশ্চর্যের নয়। তা হল, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সময় দিল্লি যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ সন্ত্রাসবাদী দাউদের প্রসঙ্গ তুলবে, তা জানাই ছিল ইসলামাবাদের। তাই ঠিক ওই সময় দাউদকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাকে ‘তাড়িয়ে দেওয়া’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন পারভেজ! দাউদের ব্যাপারে এ বারেও গন্ধটা সেই রকম ‘সন্দেহজনক’ বলে মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা।

ঈদের জমায়েতে ভাষণ হাফিজ মহম্মদ সঈদের। লাহৌরে। ছবি: এএফপি
কেন? কূটনীতিকদের বক্তব্য, একটা জায়গায় সে বারের সঙ্গে এ বারের বিস্তর মিল। আগরা বৈঠকের আগে কার্গিল নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। এ বারে নওয়াজের সঙ্গে বৈঠকের আগে পুঞ্চে পাক সেনার হামলার ঘটনা নিয়ে দিল্লির ক্ষোভ চরমে। এই পরিস্থিতিতে আগামী সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা নওয়াজ শরিফের। ইসলামাবাদের বিলক্ষণ জানা আছে, যদি বৈঠক হয়, সেখানে ভারত যেমন ২৬/১১-র মূল পান্ডা তথা লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সঈদের পাকিস্তানে বহাল তবিয়তে থাকার কথা তুলবে, তেমনই উঠবে দাউদের প্রসঙ্গও। তাই দাউদকে তাড়ানোর দাবি করল ইসলামাবাদ। শান্তি আলোচনা শুরু আগে এটা পাকিস্তানের একটি কৌশল। কূটনীতিকদের একাংশ আবার বলছে, নওয়াজ কিন্তু ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির কথা বলেছেন। সম্ভবত সে জন্যই দাউদকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি বার্তা দিতে চেয়েছেন দিল্লিকে।
কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন ওই কূটনীতিকরা। কারণ, ইসলামাবাদের রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির পাক সেনা সদর দফতরের বিরোধ। গোয়েন্দা-কর্তাদের বক্তব্য, পাক সেনা দেখাতে চাইছে, গণতান্ত্রিক পথে নির্বাচিত সরকারের থেকেও তাদের ক্ষমতা বেশি। তাই নওয়াজ যখন মুম্বই-হামলার অভিযুক্তদের বিচার দ্রুত শেষ করার কথা বলছেন, তখন পাক সেনা ও আইএসআই লস্কর প্রধান হাফিজ সঈদকে আরও বেশি করে মদত দিচ্ছে। সেটা আজ আরও পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে সঈদের আচরণে। আজ লাহৌরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে ঈদের নমাজের নেতৃত্ব দিয়েছে সে! এ দিন প্রার্থনায় অংশ নিতে যাওয়ার আগেই টুইটারে হাফিজ হুমকি দিয়ে বলেছে, “কাশ্মীর, প্যালেস্তাইন ও বর্মায় নিপীড়িতদের স্বাধীনতার মুক্ত বাতাসে ঈদ উদ্যাপন করার সময় আর বেশি দূরে নেই।” ইসলামাবাদের সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির ক্রমবর্ধমান দূরত্ব তাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভারতের।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে রিপোর্ট, পাক সেনা ও আইএসআইয়ের মদতে পুষ্ট লস্কর-প্রধান এখন নয়াদিল্লিতে হামলার ছক কষছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, দিল্লির একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক ভবনে হামলার নির্দেশ দিয়েছে হাফিজ স্বয়ং। এই তথ্য পাওয়ার পরেই রাজধানীতে সতর্কতা জারি হয়েছে। ঈদের পরব থেকে আগামী সপ্তাহের স্বাধীনতা দিবস জঙ্গিরা এই সময়টাই হামলার জন্য বেছে নেবে বলে আশঙ্কা গোয়েন্দাদের। আর সেই কাজে তাদের পিছনে পাক সেনা তথা আইএসআইয়ের মদত থাকবে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
পাকিস্তানের অন্দরমহলে দ্বিচারিতার এই সব উদাহরণ দেখিয়েই আজ কানওয়াল সিব্বল, অজিত দোভাল, এন সি ভিজ, জি পার্থসারথির মতো প্রাক্তন কূটনীতিকরা এবং একাধিক গোয়েন্দা ও সেনা অফিসার মনমোহন-সরকারকে সতর্ক করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন নওয়াজ শরিফের বৈঠক অবিলম্বে বাতিল করুন মনমোহন। তাড়াহুড়ো করে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনায় যাওয়া উচিত নয় বলেই মত তাঁদের। প্রাক্তন কূটনীতিকদের একাংশের অভিযোগ, নওয়াজ-সরকারের উপর যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে ব্যর্থ মনমোহন-সরকার। নওয়াজ ক্ষমতায় এসেই বলেছিলেন, মুম্বই-হামলায় অভিযুক্তদের বিচার যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেটা তিনি দেখবেন। ভারতকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবথেকে সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের (এমএফএন) মর্যাদা দেওয়া হবে। বাস্তবে এই দু’ক্ষেত্রে কোনও অগ্রগতি তো দূরের কথা, ইসলামাবাদের তরফে নেতিবাচক বার্তাই মিলছে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.