পথ-দুর্ঘটনায় জখম হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি ও সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আট পুলিশকর্মী। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী শহরের রাস্তায় বেপরোয়া যান চলাচল রুখতে লালবাজারের কর্তাদের কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। দোষীরা যাতে আইনের ফাঁক গলে বেরোতে না পারে, পুলিশের পাশাপাশি তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেন পরিবহণ দফতরকেও। এই ঘটনার পরে ট্রাফিক বিভাগকে নজরদারি ও আইনি ব্যবস্থা আরও কঠোর করতে নির্দেশ দিয়েছেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা।
পুলিশ জানায়, ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে হাজরা রোড ও হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের মোড়ে রাস্তার উপরে একটি অস্থায়ী ছাউনিতে বসে ডিউটি করছিলেন ওই পুলিশকর্মীরা। ওই সময়ে হাজরামুখী ৩৭ নম্বর রুটের একটি বেসরকারি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে গার্ড ওয়াল ও পরে সোজা ওই পুলিশের ছাউনিতে ধাক্কা মারে। আহতদের প্রথমে এসএসকেএম এবং পরে সেখান থেকে একবালপুরে, ডায়মন্ড হারবার রোডের এক বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে খবর। |
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্মীদের কাছে বিস্তারিত বিবরণ শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরে দুর্ঘটনাস্থলে স্পিড ব্রেকার বসানোর কথা বলেন কালীঘাট থানার ওসি-কে। আহতদের দেখতে দুপুর ১টা নাগাদ এসএসকেএমে যান তিনি।
এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে বাসের চালক অর্জুন রায়কে। বাসটি হাওড়া থেকে ঢাকুরিয়া যাচ্ছিল। ধৃত চালক পুলিশকে জানান, মোমিনপুরের কাছে বাসটির ব্রেকে গণ্ডগোল দেখা দেয়। এর পরেই যাত্রীদের নামিয়ে তাঁরা ফিরছিলেন। ফাঁকা রাস্তায় তাঁরা বাসটিকে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কালীঘাট সেতু থেকে হাজরার দিকে নামার সময়ে ব্রেক পুরোপুরি অচল হয়ে যায়।
অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন পুলিশকর্মী অমিত সরকার। তিনি বলেন, “তখন বৃষ্টি পড়ছিল বলে আমরা অনেকেই ওই ছাউনির নীচে ছিলাম। বাসটির গতি বেশি না থাকলেও কন্ডাক্টর ও হেল্পার চিৎকার করে সরে যেতে বলছিলেন। কয়েক জন সরে গেলেও বাকিরা ছাউনি থেকে বেরোতে পারেননি।” এ দিনের দুর্ঘটনার জন্য পুলিশের একাংশ দায়ী করেছেন কর্তাদেরই। তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তার নামে যে ভাবে রাস্তার উপরে ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে যে কোনও দিন আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশকর্মীদের চিকিৎসার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে এসএসকেএম-এর সুপার তমালকান্তি ঘোষ জানান, আহতদের মধ্যে দু’জনের চোট বেশি, বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। লালবাজারের কর্তারা মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের চুক্তি রয়েছে। পুলিশকর্মীদের এখনই ছেড়ে না দিয়ে সেখানে ২৪ ঘণ্টা নজরদারিতে রাখা যেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “এসএসকেএম-এ রোগীর চাপ খুব বেশি হওয়ায় আহতদের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।”
তমালবাবু বলেন, “প্রথম থেকেই পুলিশকর্তারা আহতদের নামী বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছিলেন। হয়তো সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাঁদের আস্থা একটু কম ছিল। আমরা দু’জনকে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলাম। বাকিদের পরীক্ষা করে মনে হয়েছিল, তাঁদের ভর্তি করে শুধু শুধু এতগুলো শয্যা আটকে লাভ নেই। এমনিতেই আমাদের এখানে শয্যার অভাব।” অন্য দিকে, আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের ডেপুটি মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট চিরন্তন বসুর বক্তব্য, “আমরা যে কোনও ট্রমা কেসে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে কিছু জরুরি পরীক্ষা এবং রোগীকে নজরদারিতে রাখার চেষ্টা করি।” |