পড়াশোনায় ভাল, বেশ ছটফটে মেয়েটি হঠাৎ কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যাচ্ছিল। হ্যানা স্মিথের এই পরিবর্তন চোখে পড়েছিল স্কুলের শিক্ষিকারও। তবে বয়ঃসন্ধির সময়ে এমনটা হয়েই থাকে ভেবে বিশেষ মাথা ঘামাননি। গত সপ্তাহে আত্মঘাতী হয় হ্যানা। তার পর থেকেই ঝড় উঠেছে ব্রিটিশ সমাজে। জানা গিয়েছে, একটি সোশ্যাল সাইটে বন্ধুরা তাঁকে এতটাই হেয় করত যে এই চরম পথ বেছে নেয় সে। অনলাইনে উত্যক্ত হয়ে আত্মহত্যার ঘটনা এই প্রথম নয় অবশ্য। ঠিক এই একই কারণে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে আত্মহত্যা করেছিল কিয়ারা পাগস্লে নামে আয়ারল্যান্ডের একটি স্কুলের ছাত্রী।
লাটভিয়ার আস্ক ডট এফএম নামের এই সোশ্যাল ওয়েবসাইটির বিশেষত্ব হল এখানে নিজের পরিচয় না জানিয়েই যে কোনও ধরনের মন্তব্য করা যায়। পরিচয় ফাঁস না হলে কোনও মন্তব্যের দায় নিতে হয় না। এই বিশেষ সুবিধাটির সুযোগ নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে প্রচুর বন্ধু। যেমনটা হয়েছিল হ্যানার ক্ষেত্রে। তার ওজন থেকে শুরু করে আত্মীয়ের মৃত্যু, কোনও কিছুতেই তাকে হ্যাটা করতে ছাড়ত না ওই সাইটের বন্ধুরা। ‘ব্লিচ খেয়ে মরো’, প্রায়ই এই ধরনের নানা মন্তব্য করত তার বন্ধুরা। কারা সেই মন্তব্য করছে জানা যেত না তা-ও। ফলে বন্ধুদের উপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করে সে। শেষ পর্যন্ত এই মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পেতে বেছে নেয় মৃত্যু।
হ্যানার মৃত্যুর পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এই ওয়েবসাইটটিকে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন। ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে পরিচয় প্রকাশ না করেই এমন ধরনের মন্তব্য করার স্বাধীনতা কেন দেওয়া হয়, অথবা যারা এই ধরনের মন্তব্য করে তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ কেন করা হয় না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন দেশের বহু পরিবারও। নিজেদের ওয়েবসাইকে বাঁচাতে মরিয়া দুই ভাই মার্ক এবং ইলজা টেরেবিন জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে দিকে নজর দেবেন তাঁরা। ২০১০ সালে এই সোশ্যাল ওয়েবসাইটটি প্রতিষ্ঠা করেন টেরেবিন ভ্রাতৃদ্বয়। ওয়েবসাইটটির রমরমা ব্যবসায় এখন তাঁরা কোটিপতি। নিজের পরিচয় ফাঁস না করে মন্তব্য করতে পারার সুবিধাটির জন্যই তিন বছরের মধ্যেই ওই সাইটের সদস্যসংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়েছে। |