সন্তান হলেই টাকা চাই, অস্থায়ী কর্মীদের জুলুমে ক্ষুব্ধ রোগীরা |
হাসপাতালের সাইনবোর্ডে পরিষ্কার লেখা রয়েছে, অবৈধ ভাবে কাউকে টাকা দেবেন না। অথচ ঠিকঠাক পরিষেবা পাওয়ার জন্য হাসপাতালের আয়া বা সাফাইকর্মীদের মতো অস্থায়ী কর্মীদের টাকা দেওয়াটাই রীতিমতো দস্তুর হয়ে উঠেছিল অনেক দিন ধরে। সরকারি হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পর ‘মিষ্টি মুখ করানো’র অছিলায় জোর করে বেশ বড় অঙ্কের টাকা আদায় করেন আয়া ও সাফাইকর্মীরা, অনেক দিন থেকেই এমন অভিযোগ করে আসছিলেন বনগাঁ হাসপাতালের প্রসূতি ও তাঁদের আত্মীয় পরিজনেরা। তবে কর্মীদের দাপটে এত দিন ধরে সেই ভাবে মুখ খোলেননি কেউই। কিন্তু সম্প্রতি একটি ঘটনায় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল তাঁদের।
সোমবার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বনগাঁ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বোয়ালদহ এলাকার বাসিন্দা খালেদা মণ্ডল। ওই দিনই এক পুত্র সন্তান প্রসব করেন তিনি। অভিযোগ, এর পরেই খালেদার আত্মীয়দের কাছে দু’হাজার টাকা দাবি করে বসেন ওই আয়া ও সাফাই কর্মীরা। খালেদার দাদা নাজমুল হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্করের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, ওই কর্মীরা এত টাকা চাইছেন কেন জিজ্ঞাসা করলে কর্মীরা তাঁদের জানান, এটাই নিয়ম। ওই টাকা সবাই ভাগ করে নেন তাঁরা।” নাজমুল জানান, অত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁদের ছিল না। তাঁরা পাঁচশো টাকা দিতে রাজি হন। অভিযোগ, তা নিতে অস্বীকার করে কর্মীরা দু’হাজার টাকাই দাবি করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত গয়না বন্ধক রেখে এগারোশো টাকা দিতে পারেন নাজমুলরা। |
সরকারি হাসপাতালে সাধারণত গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন। আর্থিক সামর্থ্য নেই বললেই চলে। অথচ দিনের পর দিন এই ভাবে তাঁদের উপর জুলুমবাজি চলায় ক্ষুব্ধ তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, বেশিরভাগ সময়েই টাকা না দিলে কাজ হয় না। সাধ্যের বাইরে গিয়েও টাকা দিতে বাধ্য হন তাঁরা। অনেকেরই অভিযোগ, অতিরিক্ত টাকা না দিলে আয়ারা কোনও কাজ তো করেনই না। উল্টে দুর্ব্যবহার করেন। প্রসূতিদের একাংশের ক্ষোভ, “হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে লেখা রয়েছে, অবৈধভাবে কাউকে টাকা না দিতে। অথচ দিনের পর দিন এই ভাবে টাকা নেওয়াটাই রেওয়াজ হয়ে যাচ্ছে কীভাবে?” খালেদার এক আত্মীয়ের কথায়, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি, দেওয়ালের লেখাটা এ বার বদলে ফেলুন। না হলে তো হাসপাতালের সম্মানই থাকছে না।”
হাসপাতাল সুপার গয়ারামবাবু বলেন, “অভিযুক্ত সাফাইকর্মী ও আয়াদের আপাতত কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। এমন ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না।” কিন্তু এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, এমন কোনও ঘটনার কথা তাঁরা জানতেন না। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য বিশ্বজিৎ দাসও বলেন, “এ সব মেনে নেওয়া যায় না।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, “এই ভাবে টাকা আদায় করা চলতে পারে না। প্রসূতিরা টাকা ফেরত নিয়ে যাবেন। কড়া ব্যবস্থা নিয়ে এই জুলুমবাজি বন্ধ করা হবে।” |