সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত ভোটে সুফল মিলেছে হাতে হাতে। তাই দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে রেশনে চাল দেওয়ার প্রকল্প কোনও অবস্থাতেই বন্ধ করবে না রাজ্য সরকার। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়িত হলেও রাজ্য যে এই প্রকল্প বন্ধ করবে না, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। এক বৈঠকে মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে এই মর্মে নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
এই ব্যাপারে মমতার মনোভাব কতটা দৃঢ়, সস্তার চাল প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণেই তা পরিষ্কার। রাজ্যের খাদ্য দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলতি আর্থিক বছরে সস্তার চাল প্রকল্পে ৬৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যা চলতি আর্থিক বছরে খাদ্য দফতরের মোট বাজেট-বরাদ্দের চেয়েও বেশি। প্রকল্প পুরোদমে চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত করতে ২২ অগস্ট বিষয়টি নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যসচিব।
গরিব ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখাই যে মুখ্যমন্ত্রীর এই সঙ্কল্পের অন্যতম মূল লক্ষ্য, তা স্পষ্ট। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রের খবর, সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের সাফল্যে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে রেশনে চাল দেওয়ার প্রকল্পের অবদান কম নয়। বিশেষত রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জঙ্গলমহল, সুন্দরবনের আয়লা-বিধ্বস্ত অঞ্চল ও জমি-বিতর্কে জর্জরিত সিঙ্গুর এলাকায় এই প্রকল্পের সুবাদে পঞ্চায়েতে তাঁদের বিপুল সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের বিশ্বাস, সেই কারণেই যে-কোনও মূল্যে এই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন রূপায়ণের ফলে রাজ্যকে বাড়তি আর্থিক ভার বহন করতে হবে জেনেও তিনি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরতে নারাজ।
খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা আইন বলবৎ করতে হলে রাজ্যের ঘাড়ে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বোঝা চাপবে। তা সত্ত্বেও আমরা দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে রেশনে চাল দেওয়ার নিজস্ব প্রকল্প বন্ধ করব না।” মন্ত্রী জানান, বর্তমানে রাজ্যের ছ’লক্ষ ৩২ হাজার পরিবারকে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল দেওয়া হয়। মাসে ওই পরিবারগুলিকে এই দরে ৫৫ কিলোগ্রাম করে চাল দেওয়া হয়। এর সুফল পাচ্ছেন প্রায় ৩১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ। এই প্রকল্পে বছরে তিন লক্ষ মেট্রিক টন চাল বণ্টন করা হয়।
খাদ্যমন্ত্রীর হিসেব, কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্য নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়িত করলে এ রাজ্যে ছ’কোটি ৪৮ লক্ষ মানুষ সেই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। তবে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে রেশনে চাল দেওয়ার প্রকল্পে এখন যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের আওতায় আনা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী। তখনও ওই সব পরিবারের জন্য রাজ্য সরকার নিজস্ব প্রকল্পটি পৃথক ভাবে চালু রাখবে। যাঁরা খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতায় আসবেন, তাঁদের জন্য পৃথক রেশন কার্ড তৈরি করা হবে। ওই আইনে উপভোক্তাদের তিন টাকা কিলোগ্রাম দরে চাল দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেওয়া হবে দু’টাকা কিলোগ্রাম দরে গম আর এক টাকা কিলোগ্রাম দরে বাজরা। ওই আইনে প্রতি মাসে মাথাপিছু আট কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। |