কেন্দ্রীয় নেতারা চান, লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন বাড়ুক পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তা বলে তৃণমূলের জন্য এনডিএ-র দরজা যেন পুরোপুরি বন্ধ না হয়। আবার রাজ্য নেতারা চান, ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে তাঁদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা যেন বাড়ে। তার জন্য প্রয়োজন শাসক দলকে চাপে রাখা। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চ্যালেঞ্জ নিয়েই সোমবার, ১২ অগস্ট কলকাতা যাচ্ছেন বরুণ গাঁধী। যাবেন সিঙ্গুরেও। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে গাঁধী পরিবারের এই তরুণই এখন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে রয়েছেন। বরুণের সঙ্গে কলকাতা যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাঁর সহকারী নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং সঙ্ঘ-বিজেপির সমন্বয়কারী নেতা রামলাল। মোদী, অরুণ জেটলি এবং দলের সভাপতি রাজনাথ সিংহ, তিন জনেই পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতাদের বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস। ফলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস-সিপিএম যাতে শক্তি বাড়াতে না পারে, সে দিকেই লক্ষ্য রেখে এগোতে হবে। তা ছাড়া দিল্লিতে সম্প্রতি সঙ্ঘের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মোদী-জেটলি-সুষমা স্বরাজদের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে সমস্ত রাজ্যে এনডিএ-র সম্ভাব্য শরিক রয়েছে, সেখানে কোনও নেতিবাচক বার্তা দেবে না বিজেপি।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছেন, মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করায় তাঁর আপত্তি রয়েছে। কিন্তু সূত্র বলছে, মমতাকে না চটিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে কিছু আসন সমঝোতার আশা রাখছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র বিজেপি সাংসদ যশোবন্ত সিংহ গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে মুখ খুললেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এমন কোনও পদক্ষেপে নারাজ, যা মমতাকে অস্বস্তিতে ফেলে। বরং মমতার সঙ্গে কংগ্রেসের যখন তিক্ততা বেড়েছে, তখন কংগ্রেসকেই মূল নিশানায় রাখতে চান তাঁরা। তাই এক বিজেপি নেতা সম্প্রতি মন্তব্য করেন, “আমরা ছোট রাজ্যের পক্ষপাতী, কিন্তু ন্যানো রাজ্যের পক্ষে নয়।”
তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ ও তাঁর সতীর্থরা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি বাড়াতে হলে তৃণমূলের সঙ্গেও টক্কর দিতে হবে। তাই তাঁদের আশা, রাজ্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর কলকাতায় গিয়ে বরুণও সেই অনুযায়ী অবস্থান নেবেন। বস্তুত, বরুণ তথা গাঁধী পরিবারের ক্যারিশমাকে হাতিয়ার করেই লোকসভার প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে দিতে চাইছেন রাহুলরা। কলকাতার জামাই বরুণকে স্বাগত জানানোর জন্য তাই এলাহি আয়োজন করা হয়েছে। বিমানবন্দরে সংবর্ধনার পর অন্তত দু’শো গাড়ির মিছিল করে প্রথমে বরুণকে নিয়ে যাওয়া হবে কালীঘাটের মন্দিরে। সেখান থেকে মহাজাতি সদন ও অন্য কয়েকটি সভায়।
মঙ্গলবার সিঙ্গুরে যাবেন বরুণ। তাঁর এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ। মমতার বিরোধিতার জেরেই টাটার ন্যানো কারখানা চলে গিয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতে। কারও কারও মতে, বরুণকে সিঙ্গুরে নিয়ে গিয়ে রাজ্য নেতৃত্ব এই বার্তাই দিতে চান যে, বিজেপি শিল্প ও কৃষির সহাবস্থান চায়। সিঙ্গুরের কৃষকদের সঙ্গেও বরুণ কথা বলবেন বলে ঠিক রয়েছে। যদিও বরুণকে আজ এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “যা বলার কলকাতায় গিয়েই বলব।” |