|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
প্রাণহীন শহরের ইতিকথা |
মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের সঙ্গে বাবরের যুদ্ধ হয় খানোয়া-র প্রান্তরে, ১৫২৭-এর মার্চে। এই যুদ্ধ যেমন ভারত-ইতিহাসের দিকচিহ্ন, তেমনই এক শহরের ইতিবৃত্তেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের জন্য বাবর ঘাঁটি গেড়েছিলেন খানোয়া থেকে ষোলো কিলোমিটার দূরে, সিক্রি গ্রামের হ্রদের পাশে। যুদ্ধে জিতে তিনি সেখানে এক উদ্যান তৈরি করিয়ে তার নাম দেন ‘বাগ-ই-ফত্’ (বিজয়-উদ্যান)। আকবরের সময় এটি পরিচিত ছিল ‘ফতপুর’ নামে, তিনি হয়ত বাবরের স্মৃতিতেই নাম দেন ‘ফতাবাদ’। ১৫৭১-এ এখানেই শহর তৈরির নির্দেশ দেন আকবর, ১৫৮৫ পর্যন্ত আগ্রার পাশাপাশি ভারতের রাজধানী ছিল ফতপুর সিক্রি, আজ যা তাজমহল-পাগল ভ্রমণকারীদের সময়-বাঁচলে-ঘুরে-আসা-র ‘ট্যুরিস্ট স্পট’।
ফতপুর সিক্রি সম্পর্কে প্রচলিত গল্পে নানা গোলমাল। শহরটা হঠাৎ কেন তৈরি হল? শুধু কি তা আকবরের শেখ সলিম চিস্তি-কে সম্মানজ্ঞাপন? বেড়াতে গিয়ে সবাই দেখেন কয়েকটা রাজপ্রাসাদ। বাকি ‘শহর’টা কোথায়, অভিজাত বা সাধারণের ঘরবাড়ি, বাজার-দোকান, অফিস, কারখানা? পুরোটাই কি পরিকল্পনামাফিক তৈরি, না স্বাভাবিক নিয়মে বেড়ে ওঠা শহর? ১৫৮৫-তে আকবর কেন চলে গেলেন শহর ছেড়ে, আর সম্রাট চলে যাওয়ার পরই কি শহরটা ফুরিয়ে গেল?
সৈয়দ আলি নাদিম রেজাভি তাঁর ফতপুর সিক্রি রিভিজিটেড (অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৩৯৫.০০) বইয়ে তন্নতন্ন করে এমন বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন। দেখিয়েছেন সুলতানি আমলের আগে থেকে সিক্রি-র অস্তিত্ব ছিল, একাধিক সুলতানি স্থাপত্যের সঙ্গে খুঁজে বার করেছেন বাবরের জলটুঙ্গি। আকবরের প্রাসাদ চত্বরের বিভিন্ন ভবনের আসল ব্যবহার কী ছিল তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এবং তা করতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বহু মিথ ভেঙেছেন। বহু বিতর্কিত ‘ইবাদতখানা’র অবস্থান ছাড়াও বাড়িঘর, একাধিক বাজার, অফিস, এমনকী ‘চিতাখানা’রও হদিশ দিয়েছেন। চমৎকার জল সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল সিক্রিতে, তাই জলাভাবে রাজধানী ত্যাগের গল্প টেঁকে না। আকবর চলে যাওয়ার পরেও বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে ফতপুর অন্তত বছর পঞ্চাশ বেঁচে ছিল— শাহজাহান এখানে একটি প্রাসাদও তৈরি করান। আকবরি প্রাসাদের প্রায়-বিলুপ্ত দেওয়ালচিত্র বিশ্লেষণ ছাড়াও পাথরে খোদিত রাজমিস্ত্রিদের অজস্র নাম আর চিহ্ন থেকে নতুন ভাবনার সূচনা করেছেন তিনি। এ ভাবে মৃত শহরকে অনেকটাই জীবন্ত করে তুলতে পেরেছেন রেজাভি। এই বই ভাল করে পড়লে আর একটু সময় নিয়ে ফতপুর যেতে ইচ্ছে করবে, সে যাত্রা না-হয় তাজমহল বাদই থাকল। |
|
|
|
|
|