|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
হাতের কাছে অনেক দুর্লভ সম্ভার |
কয়েক বছর ধরে পশ্চিমী দুনিয়ায় ভারতীয় চিত্রকলা, বিশেষত মুঘল চিত্রকলা নিয়ে প্রদর্শনী ও বইপ্রকাশ অনেক দিন পর গুরুত্ব পাচ্ছে। জুরিখ-এ মিউজিয়াম রিটবার্গ আয়োজিত প্রদর্শনীর মতো আন্তর্জাতিক উদ্যোগ খুবই দুর্লভ ঘটনা, আর তার সঙ্গে আর্টিবুস আসিয়াই প্রকাশিত মিলো সি বিচ, এবেরহার্ড ফিশার ও বি এন গোস্বামী সম্পাদিত দু’খণ্ডের মাস্টার্স অব ইন্ডিয়ান পেন্টিং ১১০০-১৯০০ (ভারতে প্রকাশক নিয়োগী বুকস) সংকলনটি আরও বড় প্রাপ্তি, কারণ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা এই ২৪০টি চিত্রনিদর্শন আর কখনও একত্র হবে কি না সন্দেহ। বিশেষত মুঘল চিত্রকলার দুটি সেরা নিদর্শন, তেহরানের গুলশন অ্যালবাম এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ অ্যালবাম, এ দুটি জুরিখ-এ প্রদর্শিত হলেও পরে এই প্রদর্শনী যখন নিউ ইয়র্কে মেট্রোপলিটান মিউজিয়াম-এ যায় তখন কূটনৈতিক কারণে সেখানে দেখানো যায়নি। কাজেই বই-ই ভরসা। জুরিখ-এর ৮৪০ পাতার দু’খণ্ড ক্যাটালগে প্রদর্শনীর সব ছবি এবং নানা বিশেষজ্ঞের পঞ্চাশটি নিবন্ধে ভারতীয় চিত্রকলার অন্তত মধ্য পর্বের ইতিহাস অনেকটা ধরা রইল।
বিদেশের নানা সংগ্রহের কয়েকটি সাম্প্রতিক প্রকাশনা অনেক দুর্লভ সম্ভারকে আগ্রহী পাঠকের হাতের কাছে এনে দিয়েছে। ওয়াশিংটন ডি সি-র স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনের ফ্রিয়ার ও স্যাকলার গ্যালারির সংগ্রহের অনুপুঙ্ক্ষ প্রকাশিত হয়েছে মিলো ক্লিভল্যান্ড বিচ-এর দি ইম্পিরিয়াল ইমেজ/ পেন্টিংস ফর দ্য মুঘল কোর্ট (মাপিন) বইয়ে। দু’দশক আগের প্রথম সংস্করণ এখন পরিবর্ধিত-পরিমার্জিত। কল্পসূত্র, বসন্তবিলাস কি ভাগবতপুরাণ-এর মতো প্রাক-মুঘল চিত্রনিদর্শন, আকবরি তুতিনামা, হামজানামা, হরিবংশ, বাবরনামা, আকবরনামা, তার পরে জাহাঙ্গির ও শাহজাহানি পর্বের অ্যালবামের ছবি এর সম্পদ।
শুধু আকবর থেকে শাহজাহানের জমানা নয়, উনিশ শতক পর্যন্ত মুঘল শৈলীর যে ধারাবাহিকতা ও উত্তরাধিকার তার অন্যতম সেরা সংগ্রহ আছে ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জে পি লস্টি ও মালিনী রায়-এর মুঘল ইন্ডিয়া/ আর্ট, কালচার অ্যান্ড এম্পায়ার/ ম্যানুসক্রিপ্টস অ্যান্ড পেন্টিংস ইন দ্য ব্রিটিশ লাইব্রেরি (ব্রিটিশ লাইব্রেরি)। দারাবনামা, বাবরনামা, আকবরনামা, রজমনামা-র মতো পাণ্ডুলিপিচিত্র বা নানা বিখ্যাত অ্যালবামের অংশ ছাড়া নজরে পড়ে তুলনায় কম আলোচিত ‘দারা শিকো অ্যালবাম’। ১৬৪১-এ দারা এই অ্যালবাম স্ত্রী নাদিরা বানু বেগমকে নিজের হাতে লিখে উপহার দেন। ১৬৫৯-এ আওরঙ্গজেব দারাকে হত্যা করার পর তাঁর সব স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। এই অ্যালবামে দারার হাতের লেখাও সোনালি রঙে ঢেকে দেওয়া হয়। কালের প্রভাবে সে রঙ ঝরে গিয়েছে, দারার লেখা আবার ফুটে উঠেছে। এই অ্যালবামে হিন্দু যোগী আর মুসলিম সাধকদের বহু ছবি দারার মানসিকতার চমৎকার প্রতিফলন। বইয়ের প্রচ্ছদের ছবিটি দারার প্রতিকৃতি, এই অ্যালবাম থেকেই নেওয়া। এ ছাড়া বিখ্যাত জনসন অ্যালবাম এবং উনিশ শতকে মুঘল দিল্লির স্মৃতিবাহী ফ্রেজার, স্কিনার ও মেটকাফ অ্যালবাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উইলিয়াম ডালরিম্পল ও যূথিকা শর্মা সম্পাদিত প্রিন্সেস অ্যান্ড পেন্টার্স ইন মুঘল দিল্লি ১৭০৭-১৮৫৭ (পেঙ্গুইন স্টুডিয়ো) বইয়ে গোলাম আলি খান বা মজহর আলি খানের মতো শিল্পী যথাযোগ্য মর্যাদা পেয়েছেন।
হাওয়ার্ড হজকিন সমসাময়িক ব্রিটিশ শিল্পীদের মধ্যে বিশিষ্ট, ভারতীয় চিত্রকলার সঙ্গে দীর্ঘ ঘনিষ্ঠতা তাঁর ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। গত চার দশকে তাঁর ভারতীয় ছবির সংগ্রহ অন্যতম সেরা ব্যক্তিগত সংগ্রহ হয়ে উঠেছে। এর বড় অংশই ‘লং টার্ম লোন’ হিসেবে রক্ষিত আছে অক্সফোর্ডের অ্যাশমোলেন সংগ্রহে, আর তারই এক প্রদর্শনী উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে অ্যান্ড্রু টপসফিল্ড-এর ভিশনস অব মুঘল ইন্ডিয়া/ দ্য কালেকশন অব হাওয়ার্ড হজকিন (অ্যাশমোলেন মিউজিয়াম)। মুঘল চিত্রকলার সঙ্গে আছে দক্ষিণী, পাহাড়ি ও রাজস্থানি শৈলীর নানা বিশিষ্ট নমুনা। হাতি হজকিন-এর অন্যতম প্রিয় বিষয়, মুঘল ও পরবর্তী চিত্রকলায় হাতি যে কত ভাবে এসেছে তার বহু নমুনা এ সংগ্রহে আছে। প্রচ্ছদের ছবিটি দক্ষিণী শৈলীর—বিজাপুরের সুলতান আলি আদিল শাহের বাঘ শিকারের দৃশ্য। |
|
|
|
|
|