|
|
|
|
পরিষেবা বন্ধ করেছিল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা |
বাস চালানোর দায়িত্ব নিলেন বিডিও
কিংশুক গুপ্ত • সাঁকরাইল |
লাভ হচ্ছে না। তাই একটি রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দিয়েছিল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এসবিএসটিসি)। ভুক্তভোগী নিত্যযাত্রীদের কথা ভেবে বাস চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্থানীয় বিডিও। সেই মতো বিডিওকেই ওই রুটে বাস চালানোর দায়িত্ব দিলেন এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইলের বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আগামী ১৪ অগস্ট থেকে রোহিণী-মেদিনীপুর রুটের বাসটি ফের পথে নামবে। এসবিএসটিসি সূত্রে খবর, এই প্রথম কোনও বিডিওকে সরকারি বাস চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হল। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) নবকুমার বর্মন বলেন, “বাসটি চালিয়ে তেলের খরচ উঠছিল না। তাই গত ২ অগস্ট ওই পরিষেবা বন্ধ করতে হয়।” নবকুমারবাবু আরও বলেন, “সাঁকরাইলের বিডিও যখন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বললেন, তিনি নিজ দায়িত্বে বাসটি চালাতে চান, অবাকই হয়েছিলাম। তবে তাঁর প্রস্তাব মতো মঙ্গলবার সরকারি অর্ডার করে বাসটি ওই বিডিওকে বরাদ্দ করা হয়েছে।” |
 |
মেদিনীপুরের এসবিএসটিসির ডিপোয় সেই বাস। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
বাস চালানোর এই প্রয়াসকে অবশ্য কর্তব্য হিসেবেই দেখছেন বিডিও সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “স্থানীয় প্রশাসক হিসেবে আমারও দায়বদ্ধতা রয়েছে। নিত্যযাত্রীরা যাতে সময়ে কর্মস্থলে যেতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই বাসটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এসবিএসটিসি-র ওই বাসটি দিনে চারবার জেলা সদর মেদিনীপুর এবং সাঁকরাইলের ব্লক সদর রোহিনীর মধ্যে যাতায়াত করত। এলাকাবাসীর দাবি, মেদিনীপুর ও খড়্গপুর থেকে প্রায় ৭০-৮০জন নিত্যযাত্রী ঠাসাঠাসি করে রোহিণী আসতেন। ভোর সাড়ে ছ’টায় মেদিনীপুর ছেড়ে বাসটি সকাল ৯টা নাগাদ রোহিণীতে পৌঁছত। বাসটি ‘অফিস টাইমের বাস’ নামেই বেশি পরিচিত। বিকেল পাঁচটা নাগাদ নিত্যযাত্রীদের নিয়ে শেষবারের মতো বাসটি মেদিনীপুরে ফিরে যেত। এই বাস কী করে ‘অলাভজনক’ হয়, সেই প্রশ্নও উঠেছে। যদিও এসবিএসটিসির দাবি, বাসটি চালিয়ে তেলের খরচ উঠছিল না। তাই বাস চালানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিপাকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। সাঁকরাইল ব্লকের ‘লাইফ লাইন’ এই বাসে করেই ব্লক অফিসের কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, ব্যাঙ্ককর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি বড় অংশ যাতায়াত করেন। নিত্যযাত্রীরা তখন বিডিও’র দ্বারস্থ হন। বিডিও যোগাযোগ করেন এসবিএসটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সঙ্গে। তারপর মঙ্গলবা লিখিত ভাবে বাসটি নিজের দায়িত্বে চালাতে চেয়ে আবেদন করেন সৌরভবাবু।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এখন পিপিপি মডেলে (প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপ) চালানো হবে বাসটি। এসবিএসটিসি কর্তৃপক্ষ বাসের কোনও খরচ বহন করবে না। তবে বাসটিকে এসবিএসটিসি-র ডিপোয় রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিডিওর উদ্যোগে হাসি ফুটেছে নিত্যযাত্রীদের মুখে। সাঁকরাইলের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ঊষা মুখোপাধ্যায় বলেন, “এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল নয়। সরকারি বাসটিতে মেদিনীপুর থেকে সরাসরি দু’-আড়াই ঘন্টা। রোহিণী পৌঁছে যেতাম। এখন বাস পাল্টে মেদিনীপুর থেকে রোহিণী যেতে সাড়ে তিন ঘন্টা লাগছে।” একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রোহিণী শাখার ম্যানেজার গৌতম বসুও বলছেন, “আমাদের মতো নিত্যযাত্রীদের কাছে সরকারি বাসটি অপরিহার্য। বিডিও বাস চালানোর উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা নিশ্চিন্ত বোধ করছি।” বিডিও বলছেন, “অলাভজনক বাসটিকে লাভজনক করে দেখানোই আমার কাছে চ্যালেঞ্জ।” তিনি সফল হন কিনা, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
 |
|
|