ভাঙন বাড়ছে, বিপন্ন প্রস্তাবিত ফিল্মসিটির এলাকা
ভা-সমাবেশে তাঁর স্বপ্নের প্রকল্পউত্তরপাড়া ফিল্মসিটির কথা নিয়মিতই উল্লেখ করে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ওই এলাকাতেই অবৈধ ভাবে গঙ্গা থেকে বালি-মাটি তোলা, পরিবেশ বিধির তোয়াক্কা না করে নদীর পাড় বরাবর একের পরে এক আবাসন প্রকল্প গড়ার মতো নানা কারণে বেড়েছে ভাঙন। এখন যা পরিস্থিতি তাতে, ওই প্রস্তাবিত ফিল্মসিটি তল্লাটটাই গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে যেতে বসেছে।
খবর পৌঁছেছে রাজ্য প্রশাসনের কানেও। রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “গঙ্গা থেকে অবৈধ ভাবে বালি-মাটি তোলা, গঙ্গার পাড়ে বেআইনি নির্মাণ রুখতে আমি ইতিমধ্যেই জেলাশাসকদের লিখিত নির্দেশ দিয়েছি। গঙ্গার ভাঙন রুখতে যে কোনও নিয়মবিরুদ্ধ কাজ, কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে।”
প্রস্তাবিত ফিল্মসিটি হওয়ার কথা উত্তরপাড়ায় জিটি রোড এবং গঙ্গার মাঝখানে শিবতলার শ্মশান লাগোয়া প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে। কিন্তু শিবতলার শ্মশান এবং লাগোয়া ঘাটের অনেকটাই ভেঙে গঙ্গায় ঢুকে গিয়েছে। ঘাটে মহিলাদের পোশাক বদলানোর ঘর তলিয়ে গিয়েছে গঙ্গায়।
ফিল্ম সিটি লাগোয়া শ্মশান চত্বর এ ভাবেই তলিয়ে যাচ্ছে গঙ্গার ভাঙনে। প্রকাশ পালের তোলা ছবি।
এলাকাটিতে গোটা ১২ ইটভাটা রয়েছে। ভাটা মালিকেরা না মানলেও এলাকাবাসীর বক্তব্য, ভাটার জন্য নিয়মিত গঙ্গার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাতে ভাঙন বাড়ছে। তা ছাড়া, ওই এলাকাতেই প্রোমোটার-রাজের বাড়বাড়ন্তে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের।
বর্তমানে ওই চত্বরে অন্তত ২৫টি আবাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। কিছু আবাসন তৈরিও হয়ে গিয়েছে। আবাসনের কাজে ব্যবহারের জন্য গঙ্গার পাড়ে বসানো হয়েছে ভারী ক্রেন। একাধিক আবাসন আবার একেবারে গঙ্গা লাগোয়া। তবে একাধিক নির্মাণ সংস্থার কর্তাদের দাবি, তাঁরা বিধি মেনেই নির্মাণ করছেন।
গত মাসে হুগলিরই চন্দননগরে গঙ্গা লাগোয়া দু’টি আবাসনের গা ঘেঁষে প্রায় ৫০০ ফুট লম্বা এবং ১৫ ফুট গভীর ধস নেমেছিল। উত্তরপাড়ার ক্ষেত্রেও এমন হওয়া অসম্ভব নয় বলে আশঙ্কা রয়েছে পরিবেশবিদদের।
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “দক্ষিণেশ্বর থেকে উত্তরপাড়া হয়ে চন্দননগর পর্যন্ত গঙ্গায় অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। অবৈজ্ঞানিক উপায়ে বালি তোলায় অনিবার্য ভাবে গঙ্গায় ভাঙন শুরু হয়েছে ওই অঞ্চলে। নিয়ম হল, জোয়ারের জল সর্বোচ্চ যে পর্যন্ত যায়, তার ১৫০ মিটারের বাইরে কোনও প্রকল্প করা যেতে পারে। অন্যথায় পোর্ট ট্রাস্ট ব্যবস্থা নেবে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে অবশ্য এই ‘অব্যবস্থা’র জন্য পুরসভা-প্রশাসনের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাঁদের বক্তব্য, “প্রোমোটারদের সঙ্গে শাসক দলের অনেক নেতার ঘনিষ্ঠতা কারও অজানা নয়। ব্যবস্থা নেবে কে?” উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল তথা এলাকার তৃণমূল নেতা দিলীপ যাদব অবশ্য শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “প্রস্তাবিত ফিল্মসিটি লাগোয়া এলাকায় কোনও অবৈধ নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ এখনও পাইনি। পেলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। এ ক্ষেত্রে কে, কার ঘনিষ্ঠ দেখার প্রশ্নই ওঠে না।”
হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দ বলেন, “উত্তরপাড়ায় গঙ্গার পাশে বেআইনি নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই পোর্ট ট্রাস্টকে জানিয়েছি। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে বলেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।”
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, “উত্তরপাড়ায় গঙ্গা-পাড়ের সমস্ত বেআইনি নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে প্রশাসন চন্দননগরের স্ট্র্যান্ডের আদলে গঙ্গার ঘাট বাঁধিয়ে দিক। তাতে গঙ্গার পাড়ও বাঁচবে, ভাঙনও বন্ধ হবে। বাঁচবে প্রকৃতি।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.