ইটভাটার শ্রমিকদের বিকল্প জীবিকা এবং পুনর্বাসনের দাবিতে সিটু-র নেতৃত্বে বিক্ষোভের মধ্যেই সোমবার থেকে উত্তরপাড়ায় রাজ্য সরকারের প্রস্তাবিত ফিল্মসিটির জমি ঘেরার কাজ শুরু হল।
ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার উত্তরপাড়ায় গঙ্গার ধারে কলকাতা পুরসভার ৪০০ একর জমিতে ওই ফিল্মসিটি এবং একটি জলপ্রকল্প ও দমকলকেন্দ্র তৈরির কথা ঘোষণা করে। প্রকল্প এলাকায় ১৫টি ইটভাটা রয়েছে। প্রস্তাবিত ফিল্মসিটির জন্য ৮৯ একর জমি টিন দিয়ে ঘেরা হবে। ফিল্মসিটি হলে ভাটাগুলি বন্ধ হয়ে যাবে এবং তাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, এই আশঙ্কায় সেখানকার শ্রমিকেরা প্রথম থেকেই তাঁদের জন্য বিকল্প জীবিকা এবং পুনর্বাসনের দাবি তোলেন। নেতৃত্ব দেয় সিটু।
প্রশাসনিক স্তরে একাধিক বৈঠকও হলেও ভাটার মালিক ও শ্রমিকদের আপত্তিতেই এত দিন ওই প্রকল্পের কাজ থমকে ছিল। গত ১৫ মার্চ কলকাতা পুরসভায় একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে জমি ঘেরা হবে।
এ দিন জি টি রোডের ধার থেকে খুঁটি বসানোর কাজের সূচনা দেখতে যান পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ। কাজ শুরু হতেই সিটুর নেতৃত্বে ভাটার মালিক এবং শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে এ জন্য কাজ পণ্ড হয়নি। পরে পুর-কমিশনার বলেন, “আলাপ-আলোচনা চলছে। নিশ্চয়ই কিছু একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” একই সুরে কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন বলেন, “কাউকে উচ্ছেদ করে ওখানে কিছু করা হবে না। পুনর্বাসনের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে।” |
চলছে জমি ঘেরার কাজ।
—নিজস্ব চিত্র |
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ভাটাগুলি থেকে বছরে দু’কোটি ইট তৈরি হয়। জনা পঞ্চাশ স্থায়ী কর্মী এবং কয়েকশো শ্রমিক এখানে কাজ করেন। অনেকেই বছরভর ওই জমিতেই ঘর করে থাকেন। এ ছাড়াও, বহু লোক পরোক্ষ ভাবে ভাটার কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিকল্প ব্যবস্থা না করে ফিল্মসিটি হলে তাঁদের পথে বসতে হবে। ইটভাটার সিটু অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক তথা ওই সংগঠনের জেলা কার্যকরী কমিটির সদস্য শ্যামল মিত্র বলেন, “ভাটাগুলি নিয়ে সরকার কী চিন্তাভাবনা করছে, তা স্পষ্ট করুক। বিকল্প ব্যবস্থা না করে ওখানে প্রকল্প হলে ইটের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শ্রমিকদের পুনর্বাসন এবং জীবিকার বন্দোবস্ত করা হোক।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাবলু দাশগুপ্ত নামে এক ভাটা-মালিক জানান, ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তাঁরা কলকাতা পুরসভাকে নির্দিষ্ট কর জমা দিয়েছেন। পরে পুরসভা টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেয়। অন্য সরকারি কর তাঁরা এখনও দেন। বাবলুবাবু বলেন, “কলকাতা পুরসভায় কর জমা দেওয়া নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ওই অবস্থাতেও জোর করে প্রকল্পের কাজ করা হচ্ছে। এমন চললে বাধা দেওয়া ছাড়া আমাদের অন্য পথ থাকবে না।” শোভনবাবু আগে দাবি করেছিলেন, ওই জমিতে ভাটা-মালিকদের কোনও এক্তিয়ার নেই।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ফিল্ম সিটির জমি ঘেরার কাজ দেখভাল করবেন মহকুমাশাসক (শ্রীরামপুর) জয়সি দাশগুপ্ত। উত্তরপাড়া পুরসভা প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে। ৩১ এপ্রিলের মধ্যে জমি ঘেরার কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে। |