এক দিকে বাঙালি। অন্য দিকে বলিউডে বাঙালি। জিতলেন দু’দলই।
সোমবার বিকেলে ঘোষিত ৬০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের এটাই নেপথ্য ‘কহানি’।
সুজিত সরকার, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সুজয় ঘোষ, বেদব্রত পাইন, ঋতুপর্ণ ঘোষ। চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কারে বাঙালিদের আধিপত্য বজায় রাখলেন এঁরাই।
শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘শব্দ’ ছবিটি। চলচ্চিত্র জগতের এক জন ‘ফলি আর্টিস্ট’-এর জীবন নিয়ে এ ছবির গল্প। শ্যুটিং -এর পরে এই ‘ফলি আর্টিস্ট’রাই ছবিতে দৈনন্দিন জীবনের শব্দ যোগ করেন।
‘শব্দ’ সাউন্ড ডিজাইনের জন্যও পুরস্কৃত হয়েছে। পুরস্কার পেলেন সাউন্ড ডিজাইনার অনির্বাণ সেনগুপ্ত এবং দীপঙ্কর চাকি। টলিউডে যাঁরা জোজো-পটলা নামেই বেশি পরিচিত।
তবে সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে বলিউডে বাঙালিদের জয়যাত্রার কাহিনি।
যা দেখে অবাক সুজয় ঘোষ। তাঁর পরিচালিত ‘কহানি’ সেরা সম্পাদনা এবং সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছে। “আমি তো এই পুরস্কার পেয়ে চমকে গিয়েছি। এর জন্য সব চেয়ে বেশি ধন্যবাদ দিতে চাই কলকাতাকে। এই শহরটা না থাকলে ‘কহানি’ হতো না। বাঙালি আর বলিউডের বাঙালিদের এই আধিপত্যের স্বীকৃতি তা হলে শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারও দিল” হাসতে হাসতে বলছিলেন সুজয়। |
খুশি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। বললেন, “বলিউডে বাঙালিরা দুর্দান্ত কাজ করছেন। ‘ভিকি ডোনর’, ‘চিটাগঙ’, ‘কহানি’ তারই প্রমাণ। কৌশিক, ঋতুদা, জোজো-পটলা পুরস্কার পেয়েছে বলে আনন্দ হচ্ছে।”
তবে এখানেই থেমে থাকতে চাননি প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, “এ বার কিন্তু বাংলা থেকে অনেক ছবি গিয়েছিল। আরও কয়েকটা বাংলা ছবির পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল। আর তা ছাড়া প্রাদেশিক ছবি এত বেড়ে গিয়েছে যে, আর একটা লোকাল সাব কমিটি করা উচিত, যাঁরা আগে স্ক্রিনিং করবেন। না হলে বড় মঞ্চে অত ছবির সঠিক মূল্যায়ন হওয়াটা দুষ্কর।” তবে ‘শব্দ’ পুরস্কার পাওয়াতে তিনি যে খুব খুশি, সে কথা জানাতে ভোলেননি প্রসেনজিৎ।
প্রথম বার জাতীয় পুরস্কার পেয়ে আপ্লুত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। বললেন, “বাঙালি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বাংলা ছবির জন্য পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তটা নিশ্চয়ই খুব গর্বের হবে।” তাঁর সংযোজন, “টিমের প্রত্যেকে ছবিটার জন্য অসম্ভব খেটেছে। সাউন্ড ডিজাইনে পুরস্কার পাওয়াতেও খুব খুশি হয়েছি।”
৬০তম জাতীয় পুরস্কার অন্য একটি কারণেও অনেকের কাছে উল্লেখযোগ্য। তাঁরা জাতীয় পুরস্কার ঘোষণার মধ্যে দিয়ে বদলে যাওয়া বলিউডের ছবিটাও দেখতে পাচ্ছেন। “বলিউডে এখন কী সব অসাধারণ ছবি হচ্ছে! আজকে ‘পান সিংহ তোমর’ সব চেয়ে যোগ্য ছবি হিসেবে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেল। ইরফান খান শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে যোগ্যতম। ‘কহানি’র থেকে ভাল সম্পাদনা হতেই পারে না। ‘ওহ মাই গড’এর মতো অত ভাল ‘অ্যাডাপটেড স্ক্রিন প্লে’ কোনও ছবির নেই। এমনকী, অনু কপূর এবং ডলি অহলুওয়ালিয়া সেরা সহ-অভিনেতা হিসেবে সেরা পছন্দ। এই জাতীয় পুরস্কার দেখিয়ে দিল, বলিউড কতটা নিজেকে বদলে ফেলেছে,” বলছিলেন অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী। তিন বছর আগে ‘অন্তহীন’-এর জন্য স্বর্ণকমল জিতেছিলেন তিনি।
এ বারে জাতীয় পুরস্কারে অবশ্য অনেকে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও আশাবাদী ছিলেন। টলিউডের অনেকেই ভেবেছিলেন ঋত্বিক ঘটকের জীবন অবলম্বনে তৈরি ‘মেঘে ঢাকা তারা’র জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পাবেন। কিন্তু সোমবার বিকেলে ফল ঘোষণার পরে দেখা গেল, তা হয়নি। ‘কহানি’র বব বিশ্বাসের অকপট উক্তি, “জিততে না পারার জন্য আমার সত্যিই খারাপ লাগছে না। আমি জানতামও না ছবিটা পাঠানো হচ্ছে কি না। আমি খুব খুশি, আমার বন্ধু কৌশিক ‘শব্দ’র জন্য পুরস্কার পেয়েছে বলে। ওই ছবিটির একটা ফ্রেমে আমিও আছি!” |