বিশেষ গুরুত্ব মেয়েদের
কর্মহীনতার আঁধার ঘোচাতে জঙ্গলমহলে আসছে ‘রোশনি’
সুচিত্রা মাহাতো, জাগরী বাস্কে, তারা, শোভা মাণ্ডি, চম্পা হেমব্রম। তালিকাটা নেহাত ছোট নয়। অভাবের তাড়নাই এক সময় এদের ঠেলে দিয়েছিল জঙ্গল-জীবনে। গ্রামের আটপৌরে মেয়েগুলো রাতারাতি হয়ে উঠেছিল মাওবাদী স্কোয়াড নেত্রী। জঙ্গলমহলের দারিদ্র্য পীড়িত আদিবাসী মেয়েরা আর যাতে সহজে মাওবাদীদের ‘নিশানা’ না হতে পারে, সে জন্য তৎপর হল কেন্দ্র। ছেলেদের সঙ্গে মেয়েদেরও কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর করতে নেওয়া হল কর্মসূচি।
অতিমাত্রায় মাওবাদী প্রভাবিত দেশের ২৪টি জেলায় তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের নতুন এক কর্মসূচি নিয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। ‘রোশনি’ নামে এই প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল পিছিয়ে পড়া আদিবাসী মেয়েদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ। আগামী ৩ বছরের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মোট ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। তার মধ্যে ২৫ হাজার তরুণীকে স্বনির্ভর করে তাদের আঁধার ঘরে আলো জ্বালবে ‘রোশনি’।
ন’টি রাজ্যের যে ২৪টি জেলায় এই কর্মসূচি রূপায়িত হবে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রয়েছে শুধু পশ্চিম মেদিনীপুর। এই জেলায় এখন কেন্দ্রীয় প্রকল্প ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ (আইএপি)-এর কাজ চলছে। মাওবাদী এলাকার সার্বিক উন্নয়নে গৃহীত এই প্রকল্পের অধীনেই রূপায়িত হবে ‘রোশনি’। ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের কত জন থাকবে, তা এখনও স্থির হয়নি। তবে প্রকল্প রূপায়ণের তোড়জোর শুরু হয়ে গিয়েছে। আইএপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা পরিকল্পনা আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, “রোশনি নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। স্থির হয়েছে প্রাথমিক রূপরেখা।”

এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জঙ্গলমহলের যুব সমাজের কর্মসংস্থানে তৎপর হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। পুলিশে ঢালাও চাকরি দেওয়া হয়েছে। গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। আত্মসর্পণকারী মাওবাদী নেতা-নেত্রীদেরও প্রশিক্ষণ শেষে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তবে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বাইরে আদিবাসী মেয়েদের হাতেকলমে কাজ শিখিয়ে কাজ দেওয়ার প্রয়াস এই প্রথম।
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে পশ্চিম মেদিনীপুরে নিযুক্ত (পিএমআরডিএফ) অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, জম্মু-কাশ্মীরে ‘হিমায়ত’ নামে অনুরূপ একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। সেই মডেলেই কাজ এগোবে। ‘রোশনি’তে অতিরিক্ত বলতে থাকবে মহিলাদের জন্য অর্ধেক আসন সংরক্ষণ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের উপর গুরুত্ব। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে চলবে প্রশিক্ষণ। ৩ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষিতদের কাজের ব্যবস্থা হবে। অরিন্দমের কথায়, “নির্দেশিকা অনুযায়ী বাইরের সংস্থা এসে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, তবে তার বন্দোবস্ত করতে হবে জেলাতে। কাজের ব্যবস্থা দেশের যে কোনও প্রান্তে হতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করব যে সব বিষয়ে এখানে কাজের সুযোগ রয়েছে, যেমন পর্যটন, হস্তশিল্প ইত্যাদিতে প্রশিক্ষণ দিতে।” জেলা পরিকল্পনা আধিকারিকের বক্তব্য, “পর্যটনে আমরা ‘ক্লাস্টার’ বানাচ্ছি। হস্তশিল্প সামগ্রী অনলাইন বিক্রির ব্যবস্থাও হচ্ছে।’ এ নিয়ে জঙ্গলমহলে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে প্রশাসনের প্রাথমিক কথাবর্তাও হয়েছে।
যাদের জন্য এই উদ্যোগ, সেই আদিবাসীরা কিন্তু প্রকল্পের ষোলোআনা রূপায়ণ নিয়ে সংশয়ে। ‘আদিবাসী-বনবাসী অধিকার মঞ্চে’র দক্ষিণবঙ্গ শাখার আহ্বায়ক ঝর্না আচার্যের কথায়, “আগেও কিছু সংস্থা ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হোটেলে, হাসপাতালে কাজ দেওয়ার কথা বলেছিল। শেষমেশ কিছুই হয়নি। তাই ভরসা করতে ভয় হয়। বিশেষ করে মেয়েদের কাজের জন্য অন্যত্র নিয়ে গেলে নিরাপত্তার ভাবনা তো থাকেই।” ভাবাচ্ছে আরও একটি বিষয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন ভাতা দেওয়ার সংস্থান এই প্রকল্পে নেই। এর ফলে দরিদ্র তরুণ-তরুণীরা সমস্যায় পড়বেন।
আদিবাসী যুব সংগঠন ‘মাঝি মাডওয়া জুয়ান গাঁওতা’র সর্বভারতীয় সম্পাদক প্রবীর মুর্মু বলেন, “আদিবাসী পরিবারগুলি সব দিন আনে দিন খায়। তাদের যদি কাজ শেখানোর সময় ভাতা না দেওয়া হয়, সমস্যা তো হবেই।”
প্রশাসন জানিয়েছে, প্রকল্পের যথাযথ রূপায়ণে সব রকম ব্যবস্থা হবে। তবে প্রশিক্ষণকালীন ভাতার ক্ষেত্রে আপাতত আশার আলো দেখাচ্ছে না ‘রোশনি’।

কাজ শিখিয়ে কাজ
• নজরে দেশের মাওবাদী প্রভাবিত ২৪টি জেলা
• এ রাজ্য থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর
• উপকৃত ৫০ হাজার আদিবাসী
• ৫০ শতাংশ অবশ্যই মহিলা
• এ রাজ্যে অগ্রাধিকার লোধা-শবর-মুণ্ডা-কুর্মি-সাঁওতালদের
• বয়স ১৮ থেকে ৩৫
• প্রশিক্ষণের মেয়াদ ৩ মাস থেকে এক বছর
• প্রশিক্ষণ দেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্পোরেট সংস্থা
• ৩ বছরের মধ্যে প্রশিক্ষিতদের কাজের ব্যবস্থা
• প্রকল্প ব্যয় ৭৫% কেন্দ্র, ২৫% রাজ্য

(তথ্য সহায়তা: বরুণ দে)


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.