ইঙ্গিত আগেই ছিল, এ বার নীতিগত ভাবে সায়ও মিলল। পুজোর আগেই সম্ভবত বাড়তে চলেছে কলকাতা মেট্রোর ভাড়া।
মেট্রোর হাল-হকিকত খতিয়ে দেখার জন্য গত কাল রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন রেলবোর্ডের কর্তারা। বৈঠকে পরিকাঠামোগত একাধিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যাত্রিভাড়া নিয়েও কথা হয়। উপস্থিত সকলেই মেট্রোর ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সম্মতি দেন। কিছু দিন আগেই অধীরবাবু মেট্রো-ভাড়া বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কলকাতায়। মন্ত্রক জানিয়েছে, খরচের খেয়াল রেখে ভাড়া কতটা বাড়া উচিত, তা দেখছে ‘রেল ট্যারিফ অথরিটি’। গত সপ্তাহে গঠিত ওই অথরিটিই এখন থেকে ভাড়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। এক রেলকর্তার কথায়, “কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখার পরে সুপারিশ ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মধ্যে দেড়-দু’ মাস কেটেই যাবে। আশা করা হচ্ছে, পুজোর আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।” একই সঙ্গে আয় বাড়াতে দিল্লি-বেঙ্গালুরু বা বিদেশের মেট্রোগুলির ধাঁচে কলকাতা মেট্রোর স্টেশন চত্বর বেশি করে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে মেট্রো।
রেল সূত্রে খবর, বর্তমানে একমাত্র কলকাতা মেট্রোই রয়েছে রেলমন্ত্রকের হাতে। গত প্রায় এক দশক রেলমন্ত্রক ছিল তৃণমূলের হাতে। তাদের বিরোধিতায় এত দিন বাড়ানো যায়নি মেট্রোর ভাড়া। যার জেরে ক্রমশ রুগ্ণ হয়ে পড়েছে কলকাতা মেট্রো। তৃণমূলের থেকে মন্ত্রক কংগ্রেসের হাতে যাওয়ার পরেই ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তোলেন রেলের বহু কর্তা। রীতিমতো পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা রেল বোর্ডকে জানান, ভাড়ার পুনর্বিন্যাস করে দিল্লি মেট্রো যেমন লাভের মুখ দেখছে, তেমনই ক্রমশ লোকসানের ভারে মুমূর্ষু হয়ে পড়ছে কলকাতা মেট্রো।
অধীরবাবু বলেন, “ভাড়া বাড়ালে যে বাড়তি অর্থ মেট্রোর ঘরে আসবে, তা পরিকাঠামোগত উন্নতিতে ব্যবহার করা হবে।” অন্য দিকে, মেট্রোয় বহু পদও খালি। এমনকী, পূর্ণ সময়ের জেনারেল ম্যানেজারও নেই। বর্তমানে চারটি লাইন সম্প্রসারণের কাজ চলছে কলকাতা মেট্রোয়। মন্ত্রক তাই এমন এক জনকে এই পদে চাইছে, যাঁর এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা আছে। সূত্রের খবর, বর্তমানে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলে কর্মরত জেনারেল ম্যানেজার (নির্মাণ) রাজেশ সিংহকে ওই পদে আনার কথা ভাবছে রেল বোর্ড।
পাশাপাশি রেলকর্তাদের মতে, বাণিজ্যিক ভাবে মেট্রো স্টেশনকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ কলকাতা মেট্রো। অথচ, লন্ডন মেট্রো থেকে শুরু করে হাল আমলের দিল্লি মেট্রো-সকলেই নিজেদের স্টেশন পরিসর বাণিজ্যিক ভাবে ভাড়া দিয়ে বিপুল আয় করে। কলকাতায় এখন সাড়ে ছ’লক্ষ যাত্রী প্রতিদিন মেট্রো ব্যবহার করেন। ফলে কলকাতা মেট্রোয় ভাল পরিমাণে ব্যবসা হতে পারে বলেই মনে করেছে রেলমন্ত্রক। তাই স্টেশনগুলিকে কী ভাবে আরও বাণিজ্য উপযোগী করে তোলা যায়, তা দেখতে নির্দেশ দেওয়া হবে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষকে।
নতুন যে মেট্রো স্টেশনগুলি তৈরি হচ্ছে শহরে, সেগুলি যাতে বাণিজ্যিক ব্যবহারের উপযোগী করে গড়া হয়, তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
|