ছোট্ট ‘পাসওয়ার্ড’। তা জোগাড় হলে কাজ হাসিল। নিমেষে ইন্টারনেটে ডাউনলোড হয়ে হাতে আসবে বলিউড বা টলিউডের নতুন সিনেমা। তা থেকে রাতারাতি শ’য়ে শ’য়ে ডিভিডি বা সিডি তৈরি হয়ে বাজারে ছেয়ে যাচ্ছে নকল সিনেমা, গানের অ্যালবাম বা ভিডিও অ্যালবাম। মূলত পাকিস্তান থেকেই এদেশের বাজারে বেআইনি সিডি বা ডিভিভি-র ব্যবসা হচ্ছিল। ওই তালিকায় নতুন সংযোজন বাংলাদেশ এবং নেপাল। অভিযোগ, ওই দুই দেশ থেকে এখন গোটা উত্তরবঙ্গের বাজার হয়ে দক্ষিণবঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ছে।
কেন্দ্রের তত্ত্বাবাধানে থাকা অ্যান্টি পাইরেসি দফতরের অফিসারের গত চার মাসে লাগাতার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় হানা দিয়ে এমনই তথ্য পেয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগে লোক মারফত, ক্যুরিয়র-সহ বিভিন্ন ভাবে একটি ‘মাস্টার কপি’ এই অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছনো হত। তার পরে তা দিয়ে হাজার হাজার কপি তৈরি করে বাজারে ছাড়া হত। এক সময় ব্যবসার পিছনে ‘ডি কোম্পানি’ এবং দাউদ ইব্রাহিমের নামও জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ছিল, প্রতি শুক্রবার দেশের নতুন সিনেমা রিলিজ হতেই ডি কোম্পানির হাত ধরেই বেআইনি সিডি তৈরি হত গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এখন দেখা যাচ্ছে, মাস্টার কপির বিষয়টি উঠে গিয়েছে। সেখানে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে ইন্টারনেট ডাইনলোডের মাধ্যমে চলছে এই জালিয়াতির ব্যবসা। অ্যান্টি পাইরেসি দফতরের উত্তরবঙ্গের আধিকারিক সম্রাট মালাকার বলেন, “উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে ৮টি অভিযান চালানো হয়েছে। কমবেশি ৫ লক্ষ টাকার সিডি এবং ডিভিডি-সহ নানা কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ আটক করা হয়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, মাস্টার কপি নেই। নেপাল, বাংলাদেশ থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে সিনেমা ডাউনলোড করা হচ্ছে।” তিনি জানান, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-র মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে ডাউনলোডের পাসওয়ার্ড মিলছে। তার পরেই নকল সিডি বা ডিভিডি তৈরি হচ্ছে।
তবে জালিয়াতির এই প্রক্রিয়া বন্ধ করাটা কঠিন বিষয় বলে পুলিশ এবং অ্যান্টি পাইরেসি আধিকারিকেরা মেনে নিয়েছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, টেলিফোন বা ইমেলে ওই অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নেপাল এবং বাংলাদেশে থাকা ব্যবসার চাঁইদের কথাবার্তা হচ্ছে। সেখানে দরদাম জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেমন সলমন খানের ‘এক থা টাইগার’ বা রণবীর কপূরের ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি-র মত ছবি ডাউনলোড-এর জন্য দেড়-দুই লক্ষ টাকা পাসওয়ার্ডের দর নেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে ইন্টারেনেট ব্যাঙ্কিংয়ে টাকা জমা করলে পাঠানো হচ্ছে পাসওয়ার্ড, সময় এবং দিন। সঙ্গে ওয়েবসাইট প্রোটোকল।
তবে এই জালিয়াতির ব্যবসা কিছু বন্ধ করতে নতুন একটি ‘লাইসেন্স’ প্রথা চালু করছে দেশের ৭০টি সংস্থা। অ্যান্টি পাইরেসি দফতর সূত্রের খবর, সিনেমার গান এবং ভিডিও অ্যালবাম ডাউনলোডের জন্য শুধুমাত্র তাঁরা লাইসেন্স চালু করতে চলেছে। সেখানে দফতরে আবেদন করে নির্দিষ্ট টাকা জমা করলেই মিলবে ইউনিক কোড বা পাসওয়ার্ড। বছরে এ ক্যাটাগরি শহরে ১২ হাজার, বি ক্যাটাগরির জন্য ১০ হাজার, সি ক্যাটাগরির জন্য ৮ হাজার এবং ডি ক্যাটাগরির জন্য ৫ হাজার টাকা লাইসেন্স ফি রাখা হয়েছে। |