শুধু চিঠি নয়, ব্যাঙ্ক হয়ে
ঋণও দেবে পোস্ট অফিস
কই অঙ্গে দুই রূপ! চিঠি চালাচালির কাজ চলবে আগের মতো। পাশাপাশি ডাকঘর এ বার ঋণও দেবে গ্রাহককে।
এবং শুধু কৃষি-ঋণ বা বাড়ি তৈরির গৃহ-ঋণ নয়। চাইলে গাড়ি কেনার জন্যও ধার মিলবে। আমানতকারী যাতে যখন-তখন নিজের টাকা তুলতে পারেন, সে জন্য থাকবে পোস্ট অফিস এটিএম। এমনকী, দেশের এক প্রান্তের পোস্ট অফিসে গিয়ে অন্য প্রান্তের ডাকঘর-অ্যাকাউন্টে টাকা জমা বা তোলার বন্দোবস্তও থাকবে।
অর্থাৎ, চিঠি-চাপাটি বিলি আর মাসিক আয় প্রকল্পের (এমআইএস) চেনা গণ্ডি ছাড়িয়ে পুরোদস্তুর ব্যাঙ্কেরও চেহারা নিতে চলেছে ডাকঘর। পশ্চিমবঙ্গের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল যশবন্ত পণ্ডা জানিয়েছেন, সারা দেশে সমস্ত ব্যাঙ্ক মিলিয়ে মোট শাখা লাখখানেক। অন্য দিকে প্রতি চারটি গ্রামপিছু একটি ডাকঘর। সেই হিসেবে মোট প্রায় দেড় লক্ষ ডাকঘরে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে ২৬ কোটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাতে এই মুহূর্তে জমা অর্থের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি!
অথচ ওই বিপুল আমানত বাজারে খাটানো হয় না। এ বার সেই পথই ধরতে চলেছেন ডাকঘর-কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আশা, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলো যে ভাবে জমা অর্থ বাজারে খাটিয়ে মুনাফা তোলে, ঋণ দিয়ে সুদ ঘরে আনে, সে ভাবে ডাকঘরও নিজের টাকা বাজারে খাটিয়ে লোকসানের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। ডাক-সূত্রের খবর: ২০১১-১২ অর্থবর্ষে ডাকঘরের ক্ষতির বহর নয় নয় করে প্রায় ৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা!
হবে না-ই বা কেন?
একটা পোস্টকার্ড তৈরি করতে যেখানে খরচ সাত টাকার বেশি, এখনও তা বিকোয় সাকুল্যে ৫০ পয়সায়! ইনল্যান্ড লেটার তৈরির খরচও প্রায় এক। তার দাম আড়াই টাকা। মানি-অর্ডার থেকে স্পিড পোস্ট সর্বত্র এই ছবি। খরচের চেয়ে আয় কম। ডাক-পণ্য ও পরিষেবার মাসুল বৃদ্ধিরও আশু ইঙ্গিত নেই। এ হেন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মপরিধি বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই বলে মনে করছেন ডাক ও তার বিভাগের কর্তারা।
তারই সূত্র ধরে ডাকঘরে পুরোদস্তুর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা। তাই বলে চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়ার চিরাচরিত প্রক্রিয়ায় দাঁড়ি পড়বে না। “এটা সত্যি, পোস্টকার্ড বা ইনল্যান্ডে চিঠি লেখা অনেক কমে গিয়েছে। টেলিগ্রাফ উঠে গিয়েছে। তাতে আমাদের কাজ কমছে না। সারা ভারতে ২৫ কোটি জীবনবিমা প্রকল্পের গ্রাহকেরা ফি বছর গড়ে চার বার বিমার চিঠি পান। আমরাই বিলি করি। উপরন্তু বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাগজপত্র, বিদ্যুৎ-টেলিফোনের বিল ইত্যাদি পোস্টে আসে। সে সব যথারীতি চলবে।” জানাচ্ছেন যশবন্ত।
পাশাপাশি চলবে ব্যাঙ্কিং কারবার। এই লক্ষ্যে প্রথম দফায় বেছে নেওয়া আট রাজ্যের তালিকায় অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ নেই। রয়েছে অসম, অন্ধ্র, দিল্লি, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশ। আগামী সেপ্টেম্বরে সেখানে কাজ শুরু হবে। এ জন্য আট রাজ্যের বিভিন্ন ডাকঘর আধুনিকীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টিসিএস-কে। এটিএম বসাবে ইনফোসিস। এ ব্যাপারে সংস্থা দু’টির সঙ্গে কেন্দ্রের মোট ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে বলে যোগাযোগ মন্ত্রক-সূত্রের খবর। চুক্তি মোতাবেক ডাকঘরে কোর-ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় আগামী পাঁচ বছর নজরদারিও চালাবে দুই সংস্থা। যশবন্ত বলেন, “এটিএম চালুর পরে আমরা ঋণ দিতে আরম্ভ করব। ক্রেডিট কার্ড দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। ডাক-তার বিভাগ কল সেন্টার মারফত গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।”
পশ্চিমবঙ্গে নতুন উদ্যোগের সূচনা হবে কবে?
চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেলের যশবন্ত পণ্ডার আশা, ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের ডাকঘরগুলিতে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু হবে। এই মুহূর্তে তার তোড়জোড় চলছে। “এত দিন ডাকঘরের নথিতে যা কিছু হাতে লিখে রাখা হতো, এখন সব কম্পিউটারে ঢোকানো হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামগুলির পোস্ট অফিসে বসানো হচ্ছে কম্পিউটার। সমস্ত অ্যাকাউন্টধারীর সই স্ক্যান করে কম্পিউটারে বন্দি করা হচ্ছে। ঠিক যেমন ব্যাঙ্কে থাকে।” বলছেন তিনি।
ভবিষ্যতে তাঁদের গ্রাহকেরা ঘরে বসে নেট ব্যাঙ্কিং মারফত অ্যাকাউন্টে লেনদেন করার সুযোগও পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল।

যুগের ডাক
• কাজ করবে ব্যাঙ্কের মতো
• মিলবে কৃষি-ঋণ ও গৃহঋণ
• এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলা যাবে*
• দেওয়া হবে ক্রেডিট কার্ড
• জমা আমানত বাজারে খাটানো হবে
* বাছাই ডাকঘরে
পশ্চিমবঙ্গে
• প্রধান ডাকঘর: ৪৫টি
• বিভাগীয় ডাকঘর : ১৬৬২টি
• শাখা ডাকঘর: ৭০৪৬টি



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.