দক্ষিণ কোরিয়া
জীবনসঙ্গী খুঁজে দিতে পার্টি দিচ্ছে সরকার
ক টেবিল থেকে অন্য টেবিল। এগিয়ে চলেছেন যুবক। মুখে স্মিত হাসি। “হ্যালো, আমি পার্ক চ্যাং ওন। আগে সেনাবাহিনীতে ছিলাম। এখন দমকলে চাকরি করি...।” যখন রেস্তোরাঁর শেষ টেবিলটায় পৌঁছলেন, তত ক্ষণে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। বিধ্বস্ত যুবক তরুণীটিকে শুধু নাম আর বয়স বলেই থেমে গেলেন।
ঘটনাস্থল দক্ষিণ কোরিয়ার এক রেস্তোরাঁ। সেখানে সরকারি উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে ‘ম্যাচ-মেকিং পার্টি’। আইবুড়ো ছেলে-মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় সরকার। বিয়ে করছে না অনেকেই। দেশে পাল্লা দিয়ে কমছে জন্মের হার। লোক পাওয়া যাচ্ছে না অফিস-কাছারিতে। ১৯৯০-এ দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪.৮। ২০১১-য় সেটা পৌঁছে যায় ২৯.১৪-এ। ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটা ২৭.৯ থেকে ৩১.৮। অগত্যা বিয়ের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে সরকারই।
দক্ষিণ কোরিয়ায় পরিবারের অমতে বিয়ে এক রকম নিষিদ্ধ। বিয়ে ঠিক করেন বাড়ির বড়রা। আর সেই সিদ্ধান্তই মেনে চলতে হয় ছেলেমেয়েদের। রক্ষণশীলতা এমন পর্যায়ে যে পাত্র-পাত্রীর পদবিও যদি এক হয়, তাঁরা বিয়ে করতে পারবেন না। এই গোঁড়ামির বাঁধ ভেঙেছে তরুণ সমাজ। তবে সম্বন্ধ করে বিয়ে করতে না চাইলেও, নিজেদের জীবনসঙ্গী খুঁজে বার করতে তাঁরা ব্যর্থ। কারণ ছেলে-মেয়ের মেলামেশাই সে অর্থে নেই গোঁড়া সমাজে।
এমনই এক জন বিবাহযোগ্য পাত্র পার্ক। দমকলে চাকরি করেন। ৩২-এ পৌঁছেও নিজের পাত্রী খুঁজে পাননি। বললেন, “এত মেয়ের ভিড়ে খুব অস্বস্তি লাগছে!” কারণটাও পরে নিজেই বললেন “ছেলেদের স্কুলে পড়েছি। তার পর সেনাবাহিনীতে। এখন দমকলে। মেয়েদের সঙ্গে মেশাটা এখন একটু কঠিন লাগে।”
পার্কের মতো পাত্রপাত্রীর ছড়াছড়ি দক্ষিণ কোরিয়ায়। যাঁদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে, বিয়ে হচ্ছে না। স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসে প্রেম করা নিষিদ্ধ ছিল। মূলত পরিবারই পুরনো প্রথা মেনে বিয়ের আয়োজন করত। কিন্তু পার্কের মতো ছেলেমেয়েরা মনে করছেন সে সব ‘ওল্ড ফ্যাশনড’। কিন্তু বাড়ির বড়দের বিরুদ্ধেও যেতে পারছেন না। নারী-পুরুষের মেলামেশাও তো তেমন নেই। তাই বস্তাপচা প্রথা ভাঙতে চাইলেও, বউ জুটছে না। অবশেষে তাই হাল ধরেছে সরকার।
শুরুটা অবশ্য বছর তিনেক আগে। ২০১০ সালে ‘ডেটিং পার্টি’ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সামান্য হলেও সে বার সাড়া মিলেছিল। সেই শুরু। তার পর থেকে স্থানীয় সরকার, প্রশাসনকে ঘটকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিয়ে দিতে পারলে বা কোনও অঞ্চলে শিশু জন্মের হার বাড়লেই মিলবে পুরস্কার। দেশে গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন ‘ডেটিং সার্ভিস’ সংস্থা। কর্মীদের জীবনসঙ্গী খুঁজে দিতে বিভিন্ন অফিস ওই সংস্থাগুলিকে কাজে রাখছে। এক কালে এরাই অফিসে প্রেম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কলেজ পড়ুয়াদের জন্য ঠিক করা হচ্ছে ব্লাইন্ড ডেট, মাস ডেটিং। সরকার তার উদ্যোগে দারুণ সফল না বলা গেলেও, একেবারে ব্যর্থও বলা যায় না। রক্ষণশীল সমাজ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে তরুণ প্রজন্ম, বলছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। আইবুড়ো দশা থেকে দেশটাকে পুরোপুরি উদ্ধার করতে পারবে কি না সরকারের নয়া ‘ম্যাচ-মেকিং’ পার্টি, সেটা জানতে সময়ের অপেক্ষা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.