ভিয়েতনাম
জঙ্গলে কেটেছে ৪০ বছর, ফিরলেন বাবা-ছেলে
টানা চল্লিশ বছর কেটে গিয়েছে গভীর জঙ্গলে। সভ্য সমাজ, তার রীতিনীতি, আদবকায়দা ভুলে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন। ক’জন নাছোড় মানুষের হাত ধরে ফিরতে হচ্ছে সভ্য সমাজে। এ বার অবশ্য দুনিয়ার ‘আজব আশ্চর্যের’ তকমা নিয়ে।
তাঁরা বাবা-ছেলে, ভিয়েতনামের হো ভ্যান থান এবং হো ভ্যান ল্যাং। বাবার বয়স ৮০, ছেলের বয়স ৪১। প্রায় ৪০ বছরের ‘অজ্ঞাতবাস’ শেষ করে সমাজে ফিরছেন তাঁরা। যুদ্ধের অভিঘাত সামলাতে না পেরে যে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সে জঙ্গল থেকেই তাঁদের খুঁজে পেয়েছেন কাঠুরের দল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
অথচ চার দশক আগেও ছবিটা এমন ছিল না। ভিয়েতনামের ছোট্ট গ্রাম ‘ত্রা কেম’-এ তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে দিব্যি ছিলেন হো ভ্যান থান। তার পর এক দিন শুরু হল ভিয়েতনামের যুদ্ধ। আঘাত, প্রত্যাঘাত, মৃত্যু, রক্ত আশপাশের ছবিটা বদলে গেল রাতারাতি। যুদ্ধের অভিঘাত থেকে বাঁচল না থানের পরিবারও। চোখের সামনে বোমা বিস্ফোরণে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নারকীয় ভাবে মরতে দেখলেন থান। সেই শেষ। তথাকথিত সভ্য সমাজের সঙ্গে সেই শেষ চোখাচোখি হয়েছিল থানের। কনিষ্ঠ সন্তান ল্যাংয়ের বয়স তখন মাত্র দুই। সেই শিশুকে নিয়েই ঘর ছাড়লেন থান। বাকিটা কেউ জানে না। নিরুদ্দেশের খাতায় নাম উঠে গেল বাবা-ছেলের।
অঙ্কণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
তার পর পার হয়েছে অনেকটা সময়। থেমেছে যুদ্ধ, এসেছে বদল। চার দশকের ওঠানামায় পরিচিত সকলেই প্রায় ভুলতে বসেছিলেন বাবা-ছেলের কথা। চলছিল স্বাভাবিক জীবন। প্রত্যেক দিনের মতো সে দিনও কাঠের খোঁজে কুয়াং গাই প্রদেশের তে ত্রা জেলার গভীর জঙ্গলে ঢুকেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দূর থেকে তাঁরা দেখলেন, আকার প্রকারে মানুষের মতো দেখতে দু’জন জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ হয়েও কেমন অসংলগ্ন তাঁদের চালচলন। সন্দেহ হওয়ায় তড়িঘড়ি স্থানীয় প্রশাসনে খবর দেন তাঁরা। তার পরের গল্পটা জানা।
কিন্তু চল্লিশ বছর ধরে কী ভাবে জঙ্গলে কাটালেন ওঁরা? কী খেলেন, কী-ই বা পরলেন? প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাথা বাঁচালেন কী ভাবে? অসুস্থতার সময় ওষুধ-পথ্যি বা এল কোথা থেকে? বিস্ময় তাঁদের চার দশকের না -জানা ইতিহাস ঘিরে।
যদিও তাঁদের চালচলন দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জঙ্গলে তাঁদের খাবার ছিল বুনো ফল, কচু জাতীয় উদ্ভিদ এবং ভুট্টা। জামাকাপড় বলতে নিম্নাঙ্গে জড়ানোর জন্য একচিলতে কাপড় যা তৈরি গাছের ছাল থেকে। মাথা বাঁচাতে আশ্রয় বলতে গাছের কাণ্ড দিয়ে তৈরি ছোট্ট কুটির। অনেক প্রশ্নেরই উত্তর অবশ্য জানা নেই। থাকবেই বা কী করে? যাঁরা সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন, সময়ের ব্যবধানে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাও কমে গিয়েছে তাঁদের। থান যদি বা অল্পস্বল্প কিছু বলতে পারেন, ল্যাংয়ের সম্বল বলতে মাত্র কয়েকটা শব্দ।
আপাতত চিকিৎসা চলছে তাঁদের। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক পোশাকি ভাষায় ‘রিহ্যাবিলিটেশন’। যে সমাজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা, সে সমাজেই ফেরার জন্য নতুন করে সব কিছু শিখতে হচ্ছে তাঁদের। দেখে শুনে ‘টারজানের’ অনুষঙ্গ টানছেন অনেকেই। কিন্তু জঙ্গলপুত্রের জঙ্গলে ফেরা আর থান-ল্যাংয়ের সভ্য সমাজে ফেরার মধ্যে ফারাকটা স্পষ্ট।
স্বেচ্ছায় ফিরেছিলেন টারজান। থান-ল্যাং ফিরলেন নাছোড় সমাজের চাপে। চার দশক আগে প্রাণ বাঁচানোর আশ্রয়টুকুও দিতে পারেনি যে সমাজ, সে জঙ্গলের আড়ালটুকু রাখতে দিল না আজও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.