নামী সংস্থার দামি বিমানও বিগড়ে গেল মাঝ আকাশে। তা-ও আবার এক দিন পর, পর পর দু’দিন।
সৌদি আরবের রাজা খলিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বুধবার রাত ১২টা ৪০-এ ছাড়ার কথা ছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের লন্ডনগামী বোয়িং ৭৪৭ বিমানটির। সময়মতো পৌঁছে গিয়েছিলেন সব যাত্রীই। বিমানে উঠতে যাবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে খবর এল বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে যাত্রীদের বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করতে হবে পাঁচ ঘণ্টা।
রাতটা কোনও রকমে কাটিয়ে ভোর ভোর বিমানে চড়ে বসেছিলেন শ’তিনেক যাত্রী। আরও কত হয়রানি যে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে, ঘুণাক্ষরেও তখন টের পাননি তাঁরা। প্রথম আধ ঘণ্টা কেটে গিয়েছিল নির্বিঘ্নেই। হঠাৎই স্পিকারে চালকের গলা। বিমানের ডানা নিয়ে গোল বেধেছে এ বার। ফলে মুখ ঘুরিয়ে আবার ফিরতে হচ্ছে বিমানবন্দরে।
সমস্যা যে শুধু এটুকুই, তা ভাবলে কিন্তু মস্ত ভুল হবে। জরুরি অবতরণের না হয় সিদ্ধান্ত হয়েই গিয়েছে, কিন্তু তার জন্য বিমানকে হালকা হতে হবে। জ্বালানি খরচ করা গেলে ওজন কমত কিছুটা। কিন্তু সে গুড়েও বালি। খারাপ ডানায় ভর করে তো আর বেশি ক্ষণ উড়ে থাকা যায় না। বাঁচার উপায় একটাই। উড়তে উড়তেই ফেলে দিতে হবে জ্বালানি তেল। মরভূমির উপর তেল ফেলতে ফেলতেই শেষমেশ মাটি ছোঁয় বিমানের চাকা।
বিভীষিকার উড়ানে যাত্রীদের অবস্থা তত ক্ষণে তথৈবচ। কেউ কেউ কাঁদতে শুরু করেছেন। কেউ বা আবার ভয়ে চিৎকার জুড়েছেন। খুব নীচ দিয়ে তেল ফেলতে ফেলতে বিমানটি আসছে দেখে, অ্যাম্বুল্যান্স আর দমকলও ছুটে আসে। ডিন জোনস নামে এক যাত্রী জানিয়েছেন, “এই হুলস্থুলের মধ্যে হঠাৎই বিকট আওয়াজ করে, ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গেল বিমানটা।” সাহায্য করা তো দূরে থাক, বিমান সংস্থা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, সে দিনের মতো নিজেদের পথ দেখে নিতে হবে যাত্রীদের নিজেদেরই। বৃহস্পতিবার রাত তিনটের বিমানে করে যাত্রীদের লন্ডন পাঠানোর আশ্বাসও দেওয়া হয়।
অগত্যা রাজধানী রিয়াধে সেই দিনটা কাটিয়ে মাঝরাতের বিমান ধরতে ফের রাজা খলিদ বিমানবন্দরে পৌঁছন যাত্রীরা। কিন্তু পদে পদে যেন আগের দিনের পুনরাবৃত্তি। যাত্রীদের পাঁচ ঘণ্টারও বেশি অপেক্ষা করিয়ে সকাল পৌনে ন’টায় ছাড়ে বিমান। তিরিশ মিনিট পেরোতে না পেরোতেই আবার যে কে সেই। ডানা ঠিকমতো কাজ করছে না জানিয়ে বিমানের মুখ ঘুরিয়ে ফেরার সতর্কবাণী শোনান চালক। আবারও সেই এক কাণ্ড দেখে যাত্রীরা যেন ঘাবড়ে গিয়েছিলেন দ্বিগুণ। বুকে ব্যথা শুরু হওয়ায় নামার সঙ্গে সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় এক যাত্রীকে। বিমান সারানো যায়নি জেনেও কেন দ্বিতীয় দিন তাঁদের ওই বিমানেই তোলা হয়, তাই নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন যাত্রীরা।
বাইরে কাঠফাটা রোদ। উষ্ণতা পঞ্চাশ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। মাঝ আকাশে দু’-দু’বার বিপত্তি এড়িয়ে কোনও রকমে প্রাণ হাতে করে ফিরেছেন। কিন্তু এ বারও অব্যবস্থার চূড়ান্ত। যাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের সমস্যা শুনতে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন সংস্থার মোটে এক জন কর্মী। নামকরা
বিমান সংস্থার যাত্রী পরিষেবার ছবিটা আসলে যে ঠিক কী, সেটাই বেরিয়ে এল এই ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জোনস। পরে অবশ্য যাত্রীদের অসুবিধের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তাড়াতাড়ি লন্ডন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা। |