প্রদত্ত ভোটের চার শতাংশেরও বেশি বাতিল হয়েছে এ বার জেলা পরিষদ স্তরে। সংখ্যার হিসেবে বাতিল হওয়া ভোটের পরিমাণ প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার। সব চেয়ে বেশি ভোট বাতিল হয়েছে জামালপুর, মন্তেশ্বর ও ভাতারে।
গণনার দশ দিনের মাথায় জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, এ বার বর্ধমান জেলা পরিষদের ৭৫টি আসনে মোট ভোট পড়েছিল ৩০,৮৪,৯৪৫টি। তার ৪.২৩ শতাংশ ভোটই বাতিল হয়েছে। তৃণমূল সব চেয়ে বেশি প্রায় পনেরো লক্ষ ষাট হাজার ভোট (৫০.৫৮%) পেয়েছে। সিপিএম এবং কংগ্রেস যথাক্রমে ন’লক্ষ তেত্রিশ হাজার (৩০.২৪%) ও এক লক্ষ আটাত্তর হাজারের (৫.৭৮%) কাছাকাছি ভোট পেয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, তৃণমূল সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে ভাতারে, প্রায় ৯৫ হাজার। এ ছাড়া মঙ্গলকোটে ৮৩ হাজার ও বর্ধমান ১ ব্লকে প্রায় ৮১ হাজার ভোট পেয়েছে তারা। সিপিএম সর্বাধিক ভোট পেয়েছে মেমারি ১ ব্লকে, প্রায় ৫৫ হাজার। এ ছাড়া রায়না ১ ব্লকে তারা ৪৭৩৮০টি ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ৪৬৯৬৩টি ভোট পেয়েছে। কংগ্রেস সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে কাটোয়া ১ ব্লকে, প্রায় ৩৩ হাজার। কাটোয়া ২ ব্লকে প্রায় সাড়ে কুড়ি হাজার ও সালনপুর পনেরো হাজারের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে তারা।
সিপিএম জেলা পরিষদে যে ১২টি আসন পেয়েছে তার মধ্যে চারটিতে জয় এসেছে কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকে। আবার সালানপুরে জেলা পরিষদের দু’টি আসন দখল করেছে সিপিএম। অর্থাৎ, যে সব এলাকায় কংগ্রেস তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে, সিপিএমের জিততে সুবিধা হয়েছে। কেতুগ্রাম ২ ব্লকের দু’টি জেলা পরিষদ আসনে জিতেছে সিপিএম। ওই ব্লকেও কংগ্রেস পেয়েছে সাড়ে দশ হাজারের বেশি ভোট। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, যে সব এলাকায় কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হয়েছে, সেখানেই সুবিধা হয়েছে বামেদের।
তবে জেলা পরিষদের যে ক’টি আসনে তারা জিতেছে তার বেশির ভাগই কংগ্রেসের ভোট কাটার দৌলতে, এই তত্ত্ব মানতে নারাজ জেলা সিপিএমের নেতারা। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের পাল্টা দাবি, “আমরা এই তত্ত্ব মানি না। এ বার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোটে প্রচুর কারচুপি হয়েছে।” তৃণমূল যদিও এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।
পঞ্চায়েতে বর্ধমান জেলায় শোচনীয় ফলের আগে-পরে বারবার সন্ত্রাস, কারচুপির অভিযোগ তুলে আসছে বামেরা। এ ছাড়া পরাজয়ের আর কোনও কারণ খতিয়ে দেখা হবে কি না, সে প্রশ্নে রাজ্জাক মণ্ডল বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখুন, অনেকেই বলছেন তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। এই ফল নিয়ে আর কিছু বলার নেই।” |