দাঁইহাটে যুবক খুন
ফোনে হুমকি, রাতে ঘরে থাকছেন না নিহতের বাবা
ছ’দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি দাঁইহাটে দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত গণেশ মুর্মুর বাবা যাদব মুর্মুর।
গত কয়েক দিন ধরে রেলগেটের কাছে পশ্চিম নসিপুর গ্রামের রাঙামাটি পুকুর পাড়ের ঝুপড়ি ছেড়ে আপাতত গ্রামের কংগ্রেস অফিসে রাত কাটাচ্ছেন যাদববাবু। কাটোয়ার কংগ্রেস বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওঁরা নিরাপত্তার অভাব করছেন, এটা জানার পরেই আমরা ওঁদের কংগ্রেস অফিসে থাকতে বলেছি।”
সিপিএমই বা পিছিয়ে থাকে কেন? আজ, শনিবার সকালে দলের সাংসদ ও বিধায়কদের এক প্রতিনিধি দলের নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা রয়েছে। দুপুরে বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদেরও একটি দল পশ্চিম নসিপুরে যাবেন বলে খবর।
ঘটনাচক্রে, ওই খুনে অন্যতম অভিযুক্ত শেখ মোস্তাফা এলাকায় সিপিএম সমর্থক বলেই পরিচিত। গত মঙ্গলবার পুলিশ তাকে এবং তার দুই সঙ্গীকে ধরে। বৃহস্পতিবার বিকেলেই গণেশের বোন কাটোয়া এসিজেএম (২) উদয় রানার কাছে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন। কিন্তু কিছু সন্দেহভাজন এখনও অধরা। খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র শুক্রবার রাত পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
পশ্চিম নসিপুর গ্রামে গণেশ মুর্মুদের ঝুপড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতি দিনই সন্ধ্যার পরে অবশ্য রেলগেট থেকে নসিপুর-গোপখাঁজি হয়ে দাঁইহাট চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত টহল দিচ্ছে পুলিশ। কিন্তু যাদববাবুরা তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না। শুক্রবার দুপুরে যাদববাবু বলেন, “কয়েক দিন ধরেই ফোন করে ভয় দেখানো হচ্ছে। সে কারণে রাতে গ্রামের কংগ্রেস অফিসে আশ্রয় নিচ্ছি। দিনে অবশ্য বাড়িতেই থাকছি।” জেলার এক পুলিশকর্তার মতে, “চোখের সামনে ওঁরা ছেলেকে খুন হতে দেখেছেন। আতঙ্ক তো থাকবেই। তবে ওঁরা পুকুরপাড় ছেড়ে রাস্তার কাছে আশ্রয় নেওয়ায় আমাদের সুবিধাই হয়েছে।”
গত রবিবার ভোরে ঝুপড়িতে ঢুকে পড়া দুষ্কৃতীদের হাত থেকে দিদি-বোনের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে খুন হন গণেশ। পুলিশের কাছে অভিযোগে যাদববাবু জানিয়েছিলেন, চার জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী ঝুপড়িতে ঢুকেছিল। দু’দিন পরেই, মঙ্গলবার গণেশের মামাতো জামাইবাবু শেখ মোস্তাফা ও তার দুই সঙ্গীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
যাদববাবুর অভিযোগ, আগেও এক বার চার জনের দল এসে গণেশকে শাসিয়ে গিয়েছিল। বলে গিয়েছিল, ‘মোস্তাফার বিরোধিতা করলে ফল ভাল হবে না।’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “জেরায় মোস্তাফা ‘ডন’ বলে নিজের পরিচয় দিয়েছে। তার দাবি, বছর পনেরো আগেও সে এলাকার ডন ছিল।”
যাদববাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, রবিবার ভোর পৌনে ৩টে নাগাদ মসজিদের মাইকের শব্দে তাঁর ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। তার পরেই তিনি দুই মেয়ের চিৎকার শুনতে পান ও গুলির শব্দ পান। এর পরে দুষ্কৃতীরা খেতজমি দিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের সন্দেহ, ওই রাতে চার নয়, আট-দশ জনের একটি দল গোপখাঁজি-নসিপুর খেলার মাঠ দিয়ে রাঙামাটি পুকুর পাড়ে গিয়েছিল। চার জন ঝুপড়িতে ঢোকে। বাকিরা রেললাইনের ধারে ও লাগোয়া ফুটবল মাঠে পাহারায় ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দা কেষ্ট হাজরা ও কবিতা মাঝি বলেন, “ফোনে ক্রমাগত হুমকি আসায় ওঁদের ফোন ধরতে বারণ করেছি। এটা কারা করছে, আমরা বুঝতে পারছি। আমরা থানায় অভিযোগ করব।” কংগ্রেস নেতা রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এলাকার মানুষকে ওঁদের দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।” সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সম্পাদক অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় আবার বলেন, “প্রশাসনকে নজর রাখতে অনুরোধ করেছি।” কাটোয়া থানা সূত্রে বলা হয়েছে, ফোনের ‘কললিস্ট’ দেখে তদন্ত করা হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.