সংস্কারের অভাবে মজে যাচ্ছে নাচন জলাধার। জলাধারটি সংস্কার করে তার জল সেচের কাজে ব্যবহার করার জন্য দাবি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়াও ওই জলাধার সম্প্রসারণের জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, সেই জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবি করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূপ্রাকৃতিক কারণে দুর্গাপুর শহর ও তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার বৃষ্টির জল গিয়ে জমা হয় আপাত নিচু নাচন এলাকায়। সত্তরের দশকে সেচ দফতর সেই জমা জল সেচের কাজে ব্যবহার করার জন্য সেখানে একটি জলাধার তৈরির পরিকল্পনা নেয়। সেই উদ্দেশে ১৯৭৪-৭৫ সালে জলাধারের আশপাশের বেশ কিছু জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই জমি বাবদ আর্থিক ক্ষতিপূরণ তাঁরা আজও পাননি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। বছর দু’য়েক আগে জমি মালিকদের জন্য দু’বার শুনানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, দু’বারের শুনানিতেই জমির মালিকানা, জমির কাগজপত্র ইত্যাদি নিয়ে বেশ কিছু অসংলগ্নতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ফলে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। তিনি বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ এলেই ফের তৎপরতা শুরু হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী সদস্য কাজল মুখোপাধ্যায় জানান, জলাধার গড়ার কাজে অন্য অনেকের সঙ্গে তিনিও জমি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা সরব হব। এ ছাড়া এলাকার মানুষের স্বার্থে জলাধারের সংস্কার ও সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন চেয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আর্জি জানাবো।” |
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নাচন জলাধারের আশপাশে পাঁচটি মৌজায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিঘা জমি আছে। সেচের অভাবে এই সব জমিতে সারা বছর চাষ হয় না। তাঁদের দাবি, ওই জলাধারের জল ব্যবহার শুরু হলে ধান চাষ ছাড়াও, রবি শস্যেরও চাষও হবে। স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ ঘোষ, শিশির মণ্ডল, সজল মুখোপাধ্যায়দের অভিযোগ, “জমি দিয়ে ক্ষতিপূরণ মেলেনি। জলাধারের জল সেচের কাজেও লাগে না। জমি দিয়ে আমরা কিছুই পাইনি।” বছর দেড়েক আগে বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তাঁরা। দফতরের সচিবালয় থেকে বিষয়টি সেচ দফতরে জানানো হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু তারপর আর কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কয়েক বছর আগে জেলা পরিষদের সহযোগিতায় দুর্গাপুর-ফরিদপুর পঞ্চায়েত সমিতি নাচন জলাধারকে আকর্ষণীয় করে তুলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়। লাগানো হয় গাছ। জলাধারে বোটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। একটি ছোট গেস্ট হাউসও গড়ে তোলা হয়। পার্কের নাম দেওয়া হয় নাচন থিম পার্ক। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিষেবা না মেলায় এখানে আসা মানুষজনের সংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। এরপর ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত সমিতি একটি বেসরকারি সংস্থাকে ১০ বছরের জন্য পার্কটি লিজ দেয়। ওই সংস্থা পার্কের ভোল বদলের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে ওই পার্কের কর্মীরা তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
বর্তমানে নাচন থিম পার্কে কোনও রক্ষণাবেক্ষণ নেই। বোটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত নৌকা পাড়ে তুলে রাখা হয়েছে। খুদেরা ওই নৌকায় চড়ে খেলা করছে। জলাধারে গজিয়ে উঠেছে জলজ আগাছা। ক্ষয়ে যাচ্ছে পাড়ের মাটি। নাচন গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই জমি দিয়েছিলেন বৃহত্তর স্বার্থে। স্থানীয় বাসিন্দা দেবদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কেশব ঘোষরা জানিয়েছেন, এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে ভেবে গ্রামের অনেকেই জমি দিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, আসলে তা হয়নি। তাঁরা বলেন, “এই জলাধারকে ঘিরে উন্নত মানের পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। এখন আমাদের দাবি, জলাধারের সংস্কার করে সেচের ব্যবস্থা করা হোক। তাহলে এলাকার চাষিরা উপকৃত হবেন।” |