রাস্তা তুমি কার?
এই প্রশ্ন এখন রানিগঞ্জের জেকে নগর মোড় থেকে বেলিয়াবাথান পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার আশপাশের বাসিন্দাদের মুখে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অ্যালুমিনিয়াম কারখানা ছিল জেকে নগরে। সেই কারখানা চালাত ভারত অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড কোম্পানি (বালকো)। ওই দু’কিমি রাস্তার মালিকানা ছিল তাদের হাতে। তাই রাস্তার দেখভাল করত ওই সংস্থাটিই। যদিও রাস্তা ব্যবহার করতেন সাধারণ মানুষও। ২০০০ সালে ওই কারখানার বিলগ্নীকরণ হয়ে যায়। বালকোর থেকে অ্যালুমিনিয়াম কারখানাটি কিনে নেয় বেদান্ত গোষ্ঠী। কিন্তু তার পরে আর বেশি দিন চলেনি কারখানাটি। ২০০২ সালের মার্চে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বর্তমানে কারখানা চত্বরে সম্পত্তি দেখভালের জন্য চালু রয়েছে ওই গোষ্ঠীর একটি অফিস।
কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে রাস্তাটির সংস্কারও বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭ সালে স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলনের পরে ইসিএল এবং বেদান্ত গোষ্ঠী যুগ্ম ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে ওই রাস্তা সংস্কার করেছিল। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পরেই আবার ভেঙে যায় রাস্তাটি। তার পর থেকে ইসিএল কিংবা বেদান্ত গোষ্ঠী, কেউই রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খাতায়-কলমে ওই রাস্তা কারখানা কর্তৃপক্ষের হলেও তাঁরা নিয়মিত তা ব্যবহার করেন। সেটি নিমচা, আমকোলা, তিরাট, জেকে নগর কোলিয়ারিগুলি যাওয়ার প্রধান রাস্তা। জেমারি ও তিরাট দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারাও এই রাস্তা ব্যবহার করেন। বর্তমানে রাস্তাটি ভরে গিয়েছে খানাখন্দে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে বড় গর্ত। |
পাশে কোলিয়ারি থাকায় ইসিএল রাস্তা সংস্কার করুক, এই দাবি তুলেছেন বাসিন্দাদের একাংশ। আবার কারও মতে, খাতায়কলমে রাস্তাটি আগে ছিল বালকোর। মালিকানা বদলের পরে এখন হয়েছে বেদান্ত গোষ্ঠীর। কারখানা বদল হলেও বদলায়নি রাস্তার মালিকানা। তাই রাস্তা সংস্কার করুক বেদান্ত গোষ্ঠীই। কিন্তু ইসিএল কিংবা বেদান্ত গোষ্ঠীরাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি কেউই।
ইসিএলের জেকে নগর কোলিয়ারির এজেন্ট এস কুমার জানান, “রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য এরিয়ার সিভিল বিভাগে আমি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। এরিয়া থেকে প্রস্তাব অনুমোদন করে খরচ বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই অ্যালুমিনিয়াম সংস্থার থেকে ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র নিতে হবে।” সেখানেই আপত্তি তাঁর। তিনি বলেন, “আমি এরিয়া কর্তৃপক্ষকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি, এই রাস্তা আমরাই ব্যবহার করি। কাজেই ‘নো অবজেকশন’ নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” তাঁর সাফ বক্তব্য, “রাস্তাটি নিজেদের দাবি করে ওই সংস্থা আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। আদালতের মামলা আদালতেই নিষ্পত্তি হোক। রাস্তা সারাতে আমরা কোনও ‘নো অবজেকশন’ নেব না।”
স্থানীয় বাসিন্দা তথা যুব কংগ্রেসের নেতা সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “অ্যালুমিনিয়াম কারখানা বেসরকারিকরণের পর থেকেই সমস্যা শুরু। নতুন সংস্থার পুরনো আবাসন এলাকা জঙ্গলে ভরে গিয়েছে। ওই সংস্থা কোনও উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করছে না।” তৃণমূলের জেমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় তৃণমূল সদস্য দেবরাজ মিশ্র জানান, রাস্তাটির আসল মালিক এখন কে, সেটা নিশ্চিত ভাবে জানার পরে দ্রুত রাস্তা সারানোর জন্য তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।
বেদান্ত গোষ্ঠীর জেনারেল ম্যানেজার এ কে পাল আবার বলেন, “রাস্তাটি আমাদের। এখন রাস্তা সারানোর মতো আমাদের আর্থিক অবস্থা নেই। তবে, যে-ই রাস্তা সংস্কার করুক না কেন, আমাদের থেকে ‘নো অবজেকশন’ নিক।” তাঁদের ‘নো অবজেকশন’ দিতে কোনও আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “যে মামলার কথা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে রাস্তার কোনও সর্ম্পক নেই।” |