থানার বয়স কত? পুলিশ বলছে ৫৪ বছর। জনতা বলছে তারও বেশি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার শুধু মন্তব্য করেই ক্ষান্ত হননি, সোজা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। মানবাজার থানার প্রতিষ্ঠাকাল নিয়ে এই বিতর্কে গোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
পুরুলিয়া জেলার প্রায় সমস্ত থানার সদর দরজায় কয়েকমাস হল গ্লোসাইন বোর্ড টাঙানো হয়েছে। তাতে অনেক জায়গায় থানার প্রতিষ্ঠাকালেরও উল্লেখ রয়েছে। মানবাজার থানার প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৫৯ সাল বলে উল্লেখ করা রয়েছে। আর তা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
লোক সেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতোর দাবি, “১৯৪২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে মানবাজার থানা চত্বরে গোবিন্দ মাহাতো ও চুনারাম মাহাতো নামে দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের স্মরণে প্রতি বছর ওই দিনটিতে মানবাজার থানা চত্বরে আমরা স্মরণসভা করে আসছি। কাজেই থানা প্রতিষ্ঠার ওই তারিখ আমরা মেনে নিতে পারছি না।” মানবাজার রাধামাধব হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক চণ্ডীদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন ছুড়েছেন, “থানা কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য কোথা থেকে পেলেন? মানভূম জেলার ইতিহাস পড়ে আমরা জেনেছি মানবাজার থানার বয়েস অনেক বছর। ওই তথ্য অবিলম্বে সংশোধন না করা হলে, থানার সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী এ বার ভুল তথ্যই জানবে।” |
মানভূম কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান তথা মানবাজারের বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “এইচ কুপল্যান্ডের লেখা ‘বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার মানভূম’ ১৯১১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৮৩৩ সালে জঙ্গলমহল জেলা ভেঙে মানভূম জেলা গঠন করা হয়। মানভূম জেলার সদর কার্যালয় ছিল মানবাজারে। ওই জেলায় ১৬টি থানা ও ১২টি পুলিশ ফাঁড়ি ছিল। সেই সময়ে মানবাজারে থানা, পোস্টঅফিস ও ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড ইন্সপেকশন বাংলো গঠন করা হয়েছিল। পরে ১৮৩৮ সালে মানভূম জেলার সদর কার্যালয় পুরুলিয়ায় স্থানান্তরিত হয়।” মানবাজারের বাসিন্দা স্থানীয় কাশীডি হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক অমিয় পাত্রের মতে, “মানবাজার থানার প্রতিষ্ঠাকাল হিসেবে যে সময় লেখা হয়েছে, তা যে ঠিক নয় ইতিহাস ঘাঁটলেই জানা যায়। এই থানার বয়স ১৫০ বছরের বেশি। সরকারি অফিসে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা উচিত। নতুবা ইতিহাস বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” অমিয়বাবু ও চণ্ডীদাসবাবু দু’জনেই জানিয়েছেন, ওই প্রতিষ্ঠাকালের সময় সংশোধন করার জন্য তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “একটি এজেন্সিকে দিয়ে বোর্ডগুলি তৈরি করানো হয়। থানা প্রতিষ্ঠার সময়কাল কীসের ভিত্তিতে ঠিক করা হয়েছিল খোঁজ নেব। বিভ্রান্তি থাকলে তথ্যাভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে সংশোধন করা হবে।” |