সামনে দৌড়চ্ছে একটা ছেলে, রিভলভার হাতে তার পিছনে ছুটছে পুলিশ। ভর দুপুরে গ্রামের রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন পথচলতি মানুষজন। সম্বিৎ ফিরল পুলিশের চিৎকারে, ওকে ধরুন ধরুন।’ এর পরে পুলিশ-জনতার সম্মিলিত ধাওয়া তার পিছনে। যদিও একটু পরেই ক্লান্ত পুলিশ-জনতাকে দৌড়ে হারিয়ে গা ঢাকা দিল ওই যুবক। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত মামুদ আলি সর্দারের কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বাদুড়িয়ার আটুরিয়া বাজারে।
পুলিশের হাত থেকে ধৃতের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এসডিপিও (বসিরহাট) অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কী করে এমন ঘটল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ কর্মীর গাফিলিতি প্রমাণ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার স্বরূপনগর থানা এলাকায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে ধরা পড়ে মামুদ। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভিন্ন ঘটনায় ধৃত আরও কয়েকজনের সঙ্গে গাড়িতে করে মামুদকেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বসিরহাট আদালতে। তিন পুলিশকর্মীর পাহারায় গাড়িতে ছিলেন ৪ জন পুরুষ, ৪ জন মহিলা এবং একটি শিশু। মাঝরাস্তায় এক মহিলা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর চোখে মুখে জল দেওয়ার জন্য বাদুড়িয়া আটুরিয়া বাজারে পানীয় জলের কলের সামনে গাড়ি থামান চালক। গাড়ি থামতেই দরজা খুলে দ্রুত কলের দিকে ছোটেন কয়েকজন পুলিশ। গাড়ির দরজা খোলা, আবার পুলিশও নেই। সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে দেরি করেনি মামুদ। গাড়ি থেকে লাফিয়ে রাস্তায় নেমেই দৌড়তে শুরু করে সে। এ দিকে ধৃতকে পালাতে দেখে সম্বিত ফেরে পুলিশের। পড়িমড়ি করে মামুদের পিছনে ধাওয়া করে পুলিশ। ভর দুপুরে আসামী-পুলিশের এই দৌড় দেখে অবাক হয়ে যায় জনতা। পুলিশের ‘ওকে ধরুন, ধরুন’ চিৎকারে সম্বিত ফিরলে পুলিশের সঙ্গে তাড়া করে জনতাও। ধরতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে বলেও চিৎকার করতে তাকে পুলিশ। তা শুনে দলে আরও ভারী হয় জনতা। কিন্তু বিধি বাম। পুলিশ ও জনতাকে পিছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত রাস্তার ধারে পাট খেতে নেমে তার মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায় মামুদ। শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দিয়েই বাকিদের নিয়ে আদালতের পথে রওনা দেয় পুলিশ।
এ দিন রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও মামুদকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এক পুলিশকর্মীর কথায়, “ও যে এ ভাবে এতটা পথ দৌড়বে তা ভাবাই যায়নি। জনতা ছুটল, আমরাও ছুটলাম, কিন্তু পাট খেতে লাফিয়ে পড়ে শেষ বাজি মারল বজ্জাতটাই।” |