|
|
|
|
বিলিয়ে দেওয়ার আজকে ঈদ |
লায়েক আলি খান |
রমজানের রোজার শেষে এল খুশির ঈদ লিখেছিলেন নজরুল। মুসলমানদের কাছে ঈদ দুটি। ঈদ-উল-আজহা বা বকর ঈদ বা কোরবানি ঈদ। আর অন্যটি ঈদ-উল-ফিতর।
সময়ের হিসাবে ঈদ-উল-আজহা অনেক পুরনো। হজরত মহম্মদেরও পূর্বে নবি ইব্রাহিমের সময় থেকে তা প্রচলিত। অন্য দিকে, ঈদ-উল-ফিতর হল একমাস রমজানের উপবাস পালনের শেষে নতুন মাস শাওয়ালের চাঁদ দেখার পরের দিন আনন্দ উৎসব পালন করা। হজরত মহম্মদের আগে এই উৎসব ছিল না। অনেকে অনুমান করেন, খোদিজাকে বিবাহের পর হজরতের বৈষয়িক উন্নতি হওয়ার ফলে তিনি একান্ত ভাবে আল্লাহর উপাসনায় মনোনিবেশ করেন। হেরা নামক পর্বতের গুহায় সারারাত চলত উপাসনা। শেষের দিকে দিন ও রাতের মাঝে তিনি একবেলাই আহার করতেন। একমাস চলে এই কৃচ্ছ্রসাধনা। তারপর আল্লাহর দূত জিব্রাইল এসে তাঁকে দান করেন সেই প্রথম বাণী। সিদ্ধিলাভের পিছনে আছে কৃচ্ছ্রসাধনার একমাস। ঈদের চাঁদ তার আগমন বার্তা নিয়ে আসে প্রত্যেক মুসলমানের কাছে। হজরত মহম্মদের জীবনের এই আনন্দক্ষণের শরিক করেছেন তিনি তাঁর প্রিয় অনুরাগীদের।
ঈদ কথাটা মিলন অর্থেও বুঝে থাকেন কেউ কেউ। আনন্দ বা মিলন যাই বুঝি না কেন, এই উৎসবে সারা বিশ্বের মুসলমান সমাজ ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের আলিঙ্গণে পরস্পরকে আবদ্ধ করে। এই ঈদের সঙ্গে হজরত মহম্মদের পরিকল্পিত সাম্য, মৈত্রীর বাণীর যোগ আছে। ঈদ উৎসব পালনের প্রথার মধ্যেই নিহিত আছে এই উদ্দেশ্য।
১) স্নানশুদ্ধ হওয়া, সুগন্ধি ব্যবহার।
২) নতুন বস্ত্র বা পরিচ্ছন্ন বস্ত্র গ্রহণ।
৩) মিষ্টান্ন বা উৎকৃষ্ট খাদ্য গ্রহণ।
৪) ফিতরা বা দান-বিতরণ। ফিতরা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গৃহকর্তা তাঁর সারা বছরের উপার্জন বা বিত্তের একটা নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেবেন। এর ফলে ইসলামিক অর্থনীতিতে ধনের অসম বণ্টন বা পুঞ্জীভূত অর্থের সমস্যা মিটবে বলে ভাবা হয়েছিল।
৫। ঈদগাহে গিয়ে নামাজ পাঠ। এবং পারস্পরিক যোগাযোগ।
বর্তমানে বাংলার এই দুটি ঈদই অনেকাংশে প্রথাপালন ও সীমাহীন উদ্দামতায় পর্যবসিত। ঈদের কিছু দিন আগে থেকে যুব সম্প্রদায় শুরু করে চাঁদা আদায়। যেমন দুর্গাপুজো বা অন্য পুজোর সময় হিন্দু যুবকরা করে থাকেন। সংগৃহীত অর্থে মাইক বাজিয়ে চলে নাচ-গান। এতে কোথাও যেন ঈদের মর্মার্থের সঙ্গে জুড়ে থাকা সংযমী আবেগের রেশ কাটে।
অথচ, যথার্থ মুসলমানের কাছে এক সময় ঈদের সংযমী আনন্দের মহিমা সীমাহীন। সে সব আজ লুপ্তপ্রায়। এর ফলে মুসলমান সমাজের উন্নত চিন্তার অধিকারীরা মর্মাহত। সেই স্বপ্ন আজ মাইকের দাপটে, উদ্দাম নৃত্যে, আলোর বন্যায় ধূলিলুণ্ঠিত।
|
(লেখক বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক) |
|
|
|
|
|