পুঞ্চের ঘটনায় ‘দুঃখিত’ নওয়াজ
অবশেষে কড়া সুর অ্যান্টনির, খুশি বিজেপি
রোয়া রাজনীতির উত্তাপের জেরে রাতারাতি অবস্থান বদলে আজ পাকিস্তানের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিল ভারত।
আজ লোকসভায় দেওয়া বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি বলেন, “বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, পাক সেনার একটি বিশেষ বাহিনী পাক অধিকৃত কাশ্মীরের দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে আমাদের বীর সেনাদের খুন করেছে।” এখানেই না থেমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমরা সবাই জানি, পাক সেনার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, সমন্বয় এবং মদত ছাড়া নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপার থেকে হামলা সম্ভব নয়।” একই সঙ্গে মুম্বই হামলার প্রসঙ্গটিকে এক বন্ধনীর মধ্যে নিয়ে এসে অ্যান্টনি জানিয়েছেন, যারা এই ঘটনা দু’টির জন্য দায়ী, তাদের যেন বিনা শাস্তিতে ছেড়ে না দেয় পাকিস্তান। তাঁর কথায়, “ভারতের তরফে সংযমটাই স্বাভাবিক, এমনটা যেন ধরে না নেয় ইসলামাবাদ।”
আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশন। সেখানে পার্শ্ববৈঠকে পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে মনমোহন সিংহের বৈঠক এখনও নির্ধারিত রয়েছে। তার আগে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাক হামলা এবং তার জেরে ভারতের এই কঠোর বার্তায় কূটনৈতিক পরিস্থিতি যথেষ্ট টানটান হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে। ভারতের এই কড়া বিবৃতির পরে নড়েচড়ে বসেছে ইসলামাবাদও। উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করার চেষ্টাও করা হয়েছে। নওয়াজ শরিফ তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। পরে সেনা-হত্যার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, রাজনৈতিক এবং সামরিক পর্যায়ে দু’দেশের মধ্যে আস্থা বাড়াতে পাকিস্তান সব রকম আলোচনায় রাজি। নিয়ন্ত্রণরেখার দু’দিকের সেনা-চ্যানেলকে আরও জোরদার করার উপরেও জোর দিয়েছেন নওয়াজ। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, পরিস্থিতি যাতে আরও উত্তপ্ত হয়ে না ওঠে, সে জন্য দু’দেশেরই দায়িত্ব রয়েছে।
অ্যান্টনির আজকের বিবৃতিটিকে সমর্থন করেছে বিজেপি। দলের লোকসভার নেত্রী সুষমা স্বরাজের কথায়, “প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত কাল যা ভুল করেছেন, তা আজ শুধরে নিয়েছেন। এমন ভুল যাতে আর না হয়, তা যেন সরকার সুনিশ্চিত করে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর আজকের বিবৃতি আমরা সমর্থন করছি।” বিবৃতিটি মনমোহন সরকারকে দিয়ে ‘করিয়ে নেওয়ার’ কৃতিত্বও নিতে ছাড়ছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের বক্তব্য, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে চাপ তৈরি করার ফলেই এই ‘জাতীয়তাবাদী’ রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হয়েছে মনমোহন সরকার।
বিজেপির এই কৌশলের বিষয়টি মাথায় রয়েছে কংগ্রেসেরও। তারা বিলক্ষণ জানে যে, বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ার করতে ছাড়বে না প্রধান বিরোধী দল। তাই মোকাবিলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে কংগ্রেস তথা সরকার। সে কারণেই আজ বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেন, “বিরোধী দল যে ভাবে বিদেশনীতি নিয়ে সংসদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করল, তা আসলে পাকিস্তানের হাতকেই শক্ত করেছে।” অবশ্য কংগ্রেসকে এমন প্রশ্নও শুনতে হচ্ছে যে, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে নিজের অবস্থান থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে অ্যান্টনি সুর বদলালেন কেন? জবাবে খুরশিদের বক্তব্য, “সুর বদলের প্রশ্নই নেই। প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে, তা এই সব ক্ষেত্রে চটজলদি জানা যায় না। গত কাল তাঁর কাছে যা তথ্য ছিল, তার ভিত্তিতেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিবৃতি দেন। তার পর সেনাপ্রধান ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তাঁর কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আজ এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।”
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, পাকিস্তানের সঙ্গে সামগ্রিক সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে একটি ‘মাল্টি এজেন্সি সমীক্ষা’ করার কথা ভাবা হচ্ছে। পাকিস্তানের নীতি নির্ধারণে নওয়াজ শরিফের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ কতটা রয়েছে, সে ব্যাপারে সে দেশে ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত টি সি এ রাঘবনের কাছ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রণরেখায় হত্যার ঘটনায় সাউথ ব্লকের রক্তচাপ নিঃসন্দেহে বেড়ে গিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের একটি অংশের সন্দেহ, মুখে যতই প্রতিশ্রুতি দিন, পাক সেনার কট্টরপন্থী অংশকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না নওয়াজ শরিফ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.