শালবনীতে জিন্দল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প-প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। এ বার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের শিল্প-পার্কে অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সংস্থা ইউনিভার্সাল সাকসেস-কে নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র দিল পশ্চিমবঙ্গ শিল্পোন্নয়ন নিগম। সম্প্রতি নিগমের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে এই সংক্রান্ত প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের নয়াচরে প্রসূনবাবুরা একটি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে এগোলেও এখনও তাতে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে ইউনিভার্সালের তরফে পুরুলিয়ায় ৬৬০ মেগাওয়াটের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। নিগম তা অনুমোদন করার পরে প্রসূনবাবুর আশা, এতে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পেতে সমস্যা হবে না। প্রসূনবাবুরা প্রথমে রঘুনাথপুরে ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ-প্রকল্প গড়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু দামোদরের জল পেতে অসুবিধে হবে বুঝে পরে অর্ধেক উৎপাদনক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার সিদ্ধান্ত। সংস্থার সেই সিদ্ধান্ত সম্প্রতি মহাকরণে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে এসেছেন প্রসূনবাবু। উদ্যোগটিতে অন্তত চার হাজার কোটি টাকা লগ্নি হওয়ার কথা। রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, যে কয়েকটি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে ইচ্ছুক, তাদের মধ্যে ইউনিভার্সাল সাকসেস অন্যতম। শিল্পোন্নয়ন নিগমের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে তাদের পুরুলিয়ার প্রকল্প সংক্রান্ত প্রস্তাবটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। শেষে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে। এখন ওরা বিস্তারিত প্রকল্প-রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা দিলেই রাজ্য সরকারের তরফে যা যা সহযোগিতা দরকার, তা করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। প্রসূনবাবু বলেন, “ডিপিআর আমরা তৈরি করে ফেলেছি। এ মাসের মধ্যে তা নিগমে জমা দেওয়া হবে।”
এ দিকে ইউনিভার্সালের প্রকল্পটির জন্য রঘুনাথপুরে ৭০০ একরের মতো জমি দিতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে রাজি হয়েছে। তবে ওই পরিমাণ জমি বরাদ্দ হয়েছিল ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতার কথা ভেবে। এখন উৎপাদনক্ষমতা অর্ধেকে নেমে আসায় জমির প্রয়োজনও কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন নিগমের কর্তারা। প্রসূনবাবুও জানান, পরিমার্জিত পরিকল্পনায় শ’পাঁচেক একরে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়া সম্ভব। যদিও তিনি সাতশো একরই রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী। “কারণ ভবিষ্যতে যদি জলের সমস্যা মিটে যায়, তখন বাড়তি জমি হাতে থাকলে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা যাবে।” যুক্তি দিয়েছেন ইউনিভার্সাল-কর্ণধার। তাঁর দাবি, সরকারও এই যুক্তি মানছে। প্রসূনবাবুর বক্তব্য, ২০১৪-র মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র এসে গেলে তাঁরা ২০১৫-র মাঝামাঝি নাগাদ প্রকল্প নির্মাণে হাত দিতে পারবেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে ৬৬০ মেগাওয়াটেরই একটি বিদ্যুৎ-প্রকল্প করতে চেয়ে দিন কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল সজ্জন জিন্দলের সংস্থা। রাজ্যের শিল্প ও বিদ্যুৎ দফতর নিজেদের মধ্যে দ্রুত আলোচনা সেরে প্রকল্পটিতে সরকারের সম্মতির কথা প্রকাশ করেছে। জিন্দলদের কাছেও ডিপিআর চাওয়া হয়েছে। শালবনীতে সরকারের অধিগৃহীত জমি এখন জিন্দল গোষ্ঠীর হাতে। তাই তাদের প্রকল্প নির্মাণে জমি কোনও সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন শিল্প দফতরের কর্তারা। |