স্টেশনের নীচে কবরখানা, জানত না ব্রিটেনবাসী
লিভারপুল স্ট্রিট স্টেশন। লন্ডন শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। হাজার হাজার লন্ডনবাসীর নিত্য যাতায়াত এই পথে। কেউই জানতেন না, পায়ের তলায় ঘুমিয়ে রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরনো ইতিহাস।
প্যাডিংটন ও ক্যানারি হোয়ার্ফের মধ্যে সংযোগকারী সুড়ঙ্গটি খোঁড়ার সময়েই ভূতত্ত্ববিদদের চোখে পড়েছে প্রায় দু’মিটার গভীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে শত শত হাড়ের টুকরো, মাথার খুলি। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচশো বছর আগে লিভারপুল স্ট্রিট সংলগ্ন ওই এলাকাতেই ছিল কুখ্যাত বেথলেম মানসিক হাসপাতাল। অত্যাচার ও নৃশংসতার উদাহরণ হিসেবেই যার নাম বার বার উঠে এসেছে ইতিহাসের পাতায়। এ হেন বেথলেম হাসপাতালের অদূরেই ছিল বিশাল এক কবরখানা। নাম ‘বেডল্যাম।’ বেথলেমে চিকিৎসাধীন মানসিক রোগীদের মৃত্যুর পর হাসপাতাল লাগোয়া ওই কবরখানাতেই সমাহিত করা হত তাঁদের।
খননের পরে কবরখানা থেকে উদ্ধার হওয়া খুলি।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের পরিবার মৃতদেহের দায় অস্বীকার করত। ফলে যারপরনাই অবহেলাতেই সমাহিত হত মৃতদেহগুলি। ঠিকঠাক সৎকারও হত না অনেক সময়। ঐতিহাসিকরা বলছেন, ষোড়শ শতকে নির্মিত এই কবরখানাটিই বিশ্বের প্রথম সমাধিস্থল, যা কোনও গির্জার ছত্রছায়া ছাড়াই গড়ে উঠেছিল। প্রায় ১৩ মাইল বিস্তৃত ওই কবরখানায় ২০ হাজারেরও বেশি মৃতদেহ সমাহিত করা হয়েছিল এক সময়। জানা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন রবার্ট লকিয়ার নামের এক ব্যক্তি। প্রচলিত ধর্মীয় রীতিনীতির বিরোধিতা করায় নাস্তিক রবার্টকে ‘পাগল’-এর তকমা দিয়েছিলেন গোঁড়া, রক্ষণশীল ধর্মগুরুরা।
খোঁড়াখুঁড়ির কাজের মাঝেই অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল ছাড়াও ভূতত্ত্ববিদদের হাতে এসেছে ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক জিনিস। পাওয়া গিয়েছে গয়নাগাটি, রোমান মুদ্রা, কচ্ছপের খোল, ঘোড়ার পায়ের নাল, হাতির দাঁতের তৈরি জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি।
পাওয়া গিয়েছে প্রাচীন মুদ্রাও। ছবি: রয়টার্স
অনুমান, মিশরীয় মমির আদলেই বেথলেম হাসপাতালের রোগীদের মৃত্যুর পর তাঁদের আত্মার শান্তি কামনায় ওই সমস্ত জিনিস সমাহিত করা হত মৃতদেহের সঙ্গেই। এ ছাড়াও দু’ হাজার বছরের পুরনো এক রোমান রাস্তার অস্তিত্বও ছিল বলে জানা গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এক কালে লিভারপুল স্ট্রিট সংলগ্ন এই এলাকাই রোমান শহরের ব্যবসা বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল। এই পথেই শহরতলি থেকে নিত্য পণ্য আমদানি করা হত রোমান শহরে।
ভূতত্ত্ববিদেরা জানাচ্ছেন, লিভারপুল স্ট্রিট এলাকা থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় চার হাজার কঙ্কাল অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সেগুলি নিয়েই চলছে পরীক্ষানিরীক্ষা। জানার চেষ্টা চলছে, মৃত্যুর আগে তাঁদের জীবনটা ঠিক কেমন ছিল। চিকিৎসার নামে নৃশংস অত্যাচারের যে কাহিনি আজও প্রচলিত, তার সত্যতাই বা কতটা। বিশেষজ্ঞদের এই সমীক্ষাই হয়তো শেষমেশ বাতলে দেবে এ সব কিছু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.