খানদান ১০ জংশন

স্বপ্নের প্রাসাদ বানাই জেগে
একটা খুব সত্যি কথা বলব? আমি সেই বিরল মানুষদের একজন যে স্বপ্ন রাত্তিরে প্রায় দেখেই না। আমার সাড়ে সাতচল্লিশের জীবনে হয়তো টোটাল দু’টো বা তিনটে স্বপ্ন দেখেছি। এত কম দেখেছি বলেই প্রত্যেকটা স্বপ্ন মনে আছে। একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আর একবার দিল্লিতে আমার ম্যালেরিয়া হয়। জাস্ট দুটো দিন। আমার তখন খুব অবাক লাগত, কীরে বাবা, আমার বন্ধুরা এত স্বপ্ন দেখে। কী দেখল সেটা ফলাও করে বলে। আমি কি না কিছু দেখতে পাই না! এখন বুঝি আমার স্বপ্ন দেখার প্যাটার্নটা আলাদা। আমি স্বপ্ন দেখি বেশির ভাগ সময় গাড়িতে বসে। যখন একা থাকি। গাড়ি আর বাড়ির বাথরুম হল দু’টো জায়গা যখন আমি সম্পূর্ণ নিজের সঙ্গে থাকি। তখনই সব স্বপ্ন তৈরি করতে শুরু করি আমার মাথায়, আমার হাতে, আমার চোখে। যেমন ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ শুরুই হয়নি, এমন সময় আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখতাম, সিনেমাটা কমপ্লিট। এই রিলিজ হল বলে। এই তো প্রিমিয়ারে যাচ্ছি। কোন টাক্সিডোটা পরে যাচ্ছি সেটাও দেখতে পাচ্ছি। এই তো লোক দেখতে এসেছে ভিড় করে। এই তো স্যুটের কালারটা চুজ করে ফেললাম বেস্ট অ্যাক্টর নিতে যেটা পরে যাব। এ ভাবেই আমি দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকি। আর আমার প্রাসাদ তৈরি করতে থাকি। সব সময় যে স্বপ্নগুলো সত্যি হয়, মোটেও নয়। আদৌ হয়তো আমি বেস্ট অ্যাক্টর নমিনেশনই পেলাম না। কিন্তু ভাবনাগুলো থামে না। আর একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখেছি। যার ব্যাখ্যা আমার নিজের কাছেও নেই। প্রতিবার কলকাতায় আসার আগে আমি আরও বেশি করে স্বপ্ন দেখতে থাকি। চোখের সামনে দেখি ইডেন গার্ডেন্স আরও খুবসুরত হয়ে গেছে। এখন সত্তর হাজার লোক বসতে পারে। আমি স্বপ্ন দেখি যেদিন পাঁচ লাখ লোক বসে কেকেআর-এর জন্য চিৎকার করছে। আমি স্বপ্ন দেখি কেকেআর আবার আইপিএল জিতছে। এর আগের আগের বার মমতাদির সঙ্গে যখন দেখা হল, তখনও মুম্বইতে বসে আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটা আগাম দেখেছিলাম। ওঁকে বলেওছিলাম, আইপিএল জিতকে হলিডে করুঙ্গা, নাচুঙ্গা সড়কোপে আকে। সত্যি হল তো! আল্লা সে দিক থেকে আমার প্রতি ভীষণ দয়ালু। আমার বেশির ভাগ স্বপ্নই মিলে গেছে। তবে আমার স্বপ্ন ভাবার প্যাটার্নটাও এ রকম। একটা দূরের লক্ষ্যকে সফল করা নির্ভর। আমি জীবনে কখনও এমন স্বপ্ন দেখিনি যে, রোলস রয়েসের মালিক হলাম বা আমার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স হুহু করে বেড়ে গেল। ওগুলো ফালতু স্বপ্ন। মূল চৌহদ্দির বাইরে ছোটখাটো শাখা-প্রশাখা। আমার স্বপ্ন অনেক গভীর।



লিঙ্গ নির্ধারক পরীক্ষা করাব আমি? ছিঃ মিডিয়া
কোনও উপায় নেই আমার। যে জীবন নিজের জন্য বেছে নিয়েছি, তাতে ঘাড়ের ওপর মিডিয়া ঝুঁকে থাকবেই। আমার তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার ওদের একটু বোঝানোর চেষ্টা করা দরকার যে, ভাই মুভিস্টার হয়েও দিনের শেষে কিন্তু আমি একজন বাবা। আমি একজন স্বামী। আমার কোনও সমস্যা নেই নিজের জীবনের কাহিনি শেয়ার করতে। সে তো আমি ফ্যানদের সামনে নানান ইভেন্টেও করে থাকি। যখন বিষয়টা খুব ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর, তখনও তুমি আমায় জিজ্ঞেস করছ মেনে নিলাম। কিন্তু সেই জিজ্ঞাসার ভিত্তিতে একটা মতামত তৈরি করে নিলে, একটা বিশ্লেষণ করে নিলে, দমাদ্দম ঘা মারতে শুরু করলে স্পর্শকাতর জায়গাটার ওপর। সেটা নট ডান। সেটা খুব কষ্টের হয়ে যায়। এমনিতে আমি মিডিয়াকে পছন্দ করি। দেখেছি এ সব ঘোঁটগুলো মিডিয়ার বড় অংশ মোটেও পাকায় না। পাকায় ছোট একটা পার্সেন্টেজ। তার পর সেটা ছড়িয়ে পড়ে। আমি একটা কথা কোথাও বলিনি। এখানেও বলা উচিত হবে কি না জানি না। তুমি, মিডিয়ার ওই ছোট অংশ আমার সম্পর্কে কী লিখলে একবার ভেবে দেখেছ? তুমি এমন একটা মানুষকে নিয়ে চর্চা করছ, যে মানুষটা বাইশ বছর ধরে নিজের পেশায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। যার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে, নিজস্ব বিশ্বাস আছে। সমাজে নিজস্ব স্ট্যান্ডিং আছে। তুমি কিনা তার সম্পর্কে অবলীলায় বলে দিচ্ছ, লিঙ্গ নির্ধারক পরীক্ষা করিয়েছে! ছ্যা, ঘেন্না তোমাকে। ইউ আর বিয়িং সো স্টুপিড। দীর্ঘ এত বছর পর তুমি আমার শিক্ষা নিয়ে, আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছ। কী করে পারো এটা করতে? দীর্ঘ এত বছর আমি সমাজে যে ভাবে নিজেকে ক্যারি করেছি, যে ক্যাটাগরিতে আমি পড়ি, তাতে কি মনে হয় এ রকম একটা ঘৃণ্য মানসিকতা আমার হতে পারে যে, বাচ্চা মেয়ে হবে না ছেলে? কাম অন, অল মাই লাইফ আমি মেয়েদের অত্যন্ত সম্মান করে এসেছি। স্ত্রীকে হাগ করেছি, যখন তাঁর স্বামী হয়তো পাশে দাঁড়িয়ে। মেয়েকে হাগ করেছি, যখন হয়তো তার বাবা পাশে দাঁড়িয়ে। সব কিছুই অত্যন্ত শালীন ভাবে। সেটা সবাই জানে বলেই হয়তো, আজও হাজবেন্ডরা জেলাস না-হয়ে নিঃসংকোচে আমায় এসে বলতে পারে, মিস্টার খান, আমার স্ত্রী কিন্তু আপনার অন্ধ ফ্যান। সব সময়ই মহিলাদের সঙ্গে আমি ডিসেন্ট। আর ওদের আমি ভীষণ ভালবাসি। আমার চারপাশে সহকর্মীরাও তো মহিলা। আর আমি কি না করাতে বলেছি সেক্স ডিটারমিনেশন টেস্ট! লজ্জা হওয়া উচিত তোমার, মিডিয়া!

বাচ্চারা আমায় সব চেয়ে ভাল বোঝে
আজিজ মির্জা আর জুহি চাওলা একদিন বসে আড্ডা মারছিল। হঠাৎ আমায় ডেকে বলল, শোনো আমরা তোমার সাফল্যের চাবিকাঠি বের করে ফেলেছি। সেটা হল চিলড্রেন। বাচ্চাদের মধ্যে তুমি জনপ্রিয় বলেই আজকের জায়গায় গেছ। আমি শুনে কিছুই বলিনি। কিন্তু এটা ঘটনা, আমি পৃথিবীর যেখানেই যাই না কেন, সুরিনাম, কী পেরু, কী অস্ট্রিয়া, কী সুইৎজারল্যান্ড, কী মালেশিয়া, কী ইন্দোনেশিয়া... প্রথম যারা আমার দিকে ছুটে আসে তারা হল বাচ্চা। ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে। আমার মধ্যে আসলে বাচ্চাদের মতো একটা কেয়ারলেসনেস আছে। একটা দুষ্টুমি আছে। যখন তখন যে কোনও কিছু করে ফেলার একটা ঝোঁক আছে। একটা কেয়ার ফ্রি ধরন ধারণ আছে। আমার মনে হয় বাচ্চারা নিজেদের সঙ্গে আমার অনেক মিল খুঁজে পায়। আর তাই ওরা আমায় খুব ভাল বুঝতে পারে। আমি হচ্ছি সেই শিশু যে কোনও দিন ভাল নম্বর পাবে, কোনও দিন খারাপ নম্বর পাবে। কোনও দিন তার মাস্টার রেগে যাবে, কোনও দিন খুশি হবে। কিন্তু সে কখনওই ধূর্ত নয়, মতলবি নয়। তাই তার বিরুদ্ধে আবার প্রচণ্ড রাগাও যাবে না।

তোমরা আমার জীবন কী বুঝবে।
আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি যে কোনও শিশুকে আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিন। যে কোনও কাউকে। আধ ঘণ্টায় সে আমার প্রাণের বন্ধু হয়ে যাবে। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হল বাচ্চারা। অনেক ভেবে আমার মনে হয়েছে দু’টো কারণে ওরা আমায় ভালবাসে। প্রথম হল, আমার চরিত্রগুলো বলার ক্ষমতা রাখে ‘আমি জানি না’। আই ডোন্ট নো। এই আই ডোন্ট নো বলার স্বাধীনতাটা বাচ্চাদের খুব পছন্দ। ওরাও সাফ সাফ বলতে ভালবাসে, আই ডোন্ট নো। অথচ সব সময় সাহস পায় না। সেকেন্ড হল, বাচ্চারা খুব মজা পায় দেখে যে, আমি স্ক্রিনে পরিষ্কার বলি, অনেক হয়েছে এ বার আমাকে ভুলভাল করতে দাও তো। লেট মি গো রং প্লিজ। বড়রা তো ছোটদের ব্যতিব্যস্ত করে দেয় এটা বলে বলে যে, এটা কোরো না, ওটা কোরো না। আমি তাতে বিশ্বাস করি না। আরে এত যে জ্ঞান দিচ্ছ, তুমিও তো কখনও বাচ্চা ছিলে। আপ ভি তো কভি বাচ্চে থে। আপনে ভি তো গলতি কী। বাচ্চাদের বয়েস কম বলেই ওরা ভুল, ওরা সিলি মনে করা হবে কেন? পরদায় আমার ওই কেয়ারফ্রি ভাবটা বাচ্চাবাচ্চা অনুরাগীদের খুব পছন্দ। যে সব সময় ‘ঠিক’ থাকা নিয়ে ব্যস্ত নয়। ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’য়েই তো আমার চরিত্রটা একটু খ্যাপাটে গোছের। একটা সিনে আছে, মেয়েটা আমার মাথায় ধাক্কা দিচ্ছে আর আমি উল্টে পড়ে যাচ্ছি। জানি না বলিউডের ক’জন হিরো এই দৃশ্য করতে রাজি হবে, যেখানে একটা মেয়ে এসে তার মাথায় মারছে, আর সে স্ট্রেট উল্টে পড়ে যাচ্ছে। আমাকে কেউ কেউ বলেছে, ইমেজ নিয়ে ভাববে না? আমার উত্তরও এখানে বাচ্চাদের মতো। আরে, ক্যায়া ইমেজ হ্যায় ইয়ার? কৌনসা ইমেজ? একই সঙ্গে আমি কিন্তু অসভ্য নই, ধুরন্ধর নই, কুচক্রী নই। বাচ্চারা এটাও নজর করে যে, আমি সবাইকে সম্মান করি। কিন্তু তার মধ্যেই অনেক দিক দিয়ে আমি ওদের মতো। তাই এত উজাড় করে ভালবাসে।

নিরন্তর স্ক্রুটিনি ভেঙে দিয়েছে বন্ধুত্ব
আমায় জীবন কাটাতে হয় এমন তীব্র স্ক্রুটিনির মধ্যে যে, আমি বেশ কিছু বন্ধুত্ব হারিয়েছি। প্রত্যেকটা সম্পর্ক, সে কী পুরুষ কী নারী, এমন কাটাছেঁড়া চলে যে, সম্পর্কগুলো অনেক সময় ধাক্কা খেয়ে যায়। সেটা বিষণ্ণতার কারণ বইকী। এমনিতেই আমার অ্যাক্টর বন্ধু বা বান্ধবীরা আমার মতোই সারা বছর দৌঁড়ে বেড়াচ্ছে। তার ওপর সব সময় সেগুলোর ওপর গবেষণার আলো। আমি খুব স্ট্রংলি বিশ্বাস করি, যদি সত্যিই সম্পর্কে জেনুইন ভালবাসা থেকে থাকে, তাহলে একদিন না একদিন আবার সেগুলোকে ফিরে পাওয়া যাবে। কাউকে যদি সত্যি ভালবেসে থাকেন, আর সে আপনাকে সত্যিই ভালবেসে থাকে, তাহলে সম্পর্কের ওপর স্ট্রেস জমা হতে পারে। সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতে পারে না। যার যার কর্মব্যস্ততা কমলে দেখা যাবে, দু’জন দু’জনের জন্য আগেকার মতো আড্ডা আর ভালবাসা নিয়ে হাজির।

সম্পর্কে জেনুইন ভালবাসা থাকলে একদিন সেগুলো ফেরত আসে।

রাস্তার কমন ম্যান আমায় মলম লাগিয়ে দেয়
নেগেটিভিটি আমাকে ঘটনার পর পর তখুনি আক্রমণ করে না। ওটার ভাইরাস তখনই গজাতে শুরু করে যখন আমি একা থাকি। আমার বাথরুমে বসি। আমার বাথরুমে একটা সুন্দর সোফা আছে। সেটায় বসে বসে নানা কথা ভাবি। সময় সময় নেগেটিভ কথাবার্তাতে বিদ্ধ হয়ে পড়ি। একটা সময় মানাতে সমস্যা হত। এখন ওটার সঙ্গে ডিল করার নতুন উপায় বেছে নিয়েছি। নেগেটিভিটিকে আমি পাল্টা কাউন্টার অ্যাটাক করি না। আগের বার পাল্টা মার দিতে গিয়ে দেখেছিলাম, অনেক সমস্যা। পরিবারের ওপর তার ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়ে যায়। আমি আর এটা হতে দিতে পারি না। আমার পেশাদার জীবনের শ্যাডো যদি পারিবারিক জীবনে এমন টুকরো টুকরো অমাবস্যা নিয়ে আসে, তাহলে বিরাট প্রবলেম। আমি তাই অন্য রাস্তা বেছে নিয়েছি। কী করি জানেন? আমি সেই সময় আপনার সঙ্গে বসব না। আমার প্রোডিউসার ডিরেক্টরদেরও সময় দেব না। আমি চলে যাব সেই সব মানুষের কাছাকাছি, যাঁদের জীবনে আমার ফিল্মের প্রভাব পড়েছে। কোনও এক অপরিচিত আন্টি হয়তো আমায় দেখে একগাল হাসবেন। ওই হাসিটাই আমাকে অক্সিজেন দেবে যে, আমাকে দেখলেও মানুষের হাসি বেরোয়। সাধারণত, এই সব মানুষ বেশির ভাগই বলেন, আমার কাজ ওঁদের খুব পছন্দ। আমায় ভালবাসে না এ রকম লোক কমই পাই। আজই অবশ্য আপনার শহরের এক সাংবাদিক প্রেস কনফারেন্সে স্ট্রেট বলল, আমার ফিল্ম নাকি মোটেও ভালবাসে না। সে হতেই পারে, আমার ফিল্ম না ভালবাসতে পারে, আমার অ্যাক্টিং না ভালবাসতে পারে, কিন্তু মিশলে আমাকে নিশ্চয়ই ভালবাসবে। বুঝবে স্টার-ফার কিছু না, আই অ্যাম আ নর্মাল গাই। আর এই যে সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষ কাছে এসে আমার সঙ্গে রিলেট করে, এটাই সব চেয়ে বড় প্রতিষেধক। রাস্তার কমন ম্যান যখন আমায় দেখে হাসে, তখন মনে হয় কোথায় নেগেটিভিটি! এই তো বেস্ট মলমটা পড়ে গেল।

তুমি স্টারডম কোম্পানির এক কর্মচারী
স্টারডম যে কোনও তারকার জীবনে অপরিহার্য জংশন। যার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সেরা উপায়, মানসিক সমঝোতা করা যে জংশনটা আসেইনি। আরও ভাল হয় এটা ভাবতে পারলে যে, এমন কোনও জংশন নেই। আর ভাবার চেষ্টারই দরকার নেই যে এই অবধি আমি পৌঁছলাম কী করে? এই রসায়নটা ঠিক কী? দিল্লি থেকে প্রথম যখন মুম্বইয়ে আসি, আমার কোনও ধারণাই ছিল না কী হতে যাচ্ছে? আমি ব্যাপারটাকে আজও ঠিক ওই জায়গাতে রাখতে চাই। যে মুহূর্তে আপনি স্টারডম নিয়ে মাপামাপি শুরু করবেন। ওটাকে বিভিন্ন কম্পার্টমেন্টে বন্দি করে ফেলবেন। অঙ্ক নিয়ে বসে যাবেন যে, আপনি কত পপুলার? স্ট্যাটিস্টিক্সের খাতা খুলবেন। স্ট্র্যাটেজি ছকা শুরু করবেন। সেই মুহূর্তে স্টারডম আপনার থেকে দূরে সরে যাবে। আমার এত বছর পর মনে হয় যে, স্টারডম বজায় রাখার সেরা উপায় হল, বারবার নিজেকে মনে করানো, স্টারডম কোনও ব্যবসা নয়। এটা জীবনের অদ্ভুত এক উপহার। এটা যে পায়, তার নিজেকে আশীর্বাদধন্য মনে করা উচিত। তার আর কিছু চাওয়া উচিত নয়। তার এটা নিয়ে স্ট্র্যাটেজাইজ করা উচিত নয়। স্টারডম ওভাবে কাটাছেঁড়া করা যায় না। ব্যাখ্যাও না। স্টারডম জাস্ট হ্যাপেনস্। নিজের ম্যানেজার আপনাকে অনেক কথা শোনাবে। পিআর-এর লোক বলবে। ম্যানেজমেন্ট গুরুরা এসে জ্ঞান দিয়ে যাবে। আমার নিজের এ সব লোকজন রয়েছে। কিন্তু এরা কেউই ওই স্ফিয়ারে কাজ করে না। ওরা মিলিত ভাবে সেটা তৈরি করতে পারবে না। আরে আমিই যদি ছাত্রছাত্রী নিয়ে বসি, আর আগামী দশ বছর ধরে ট্রেনিং দিই, স্টারডম তৈরি করা যাবে না। স্টারডমের উত্তরাধিকার হয় না। আমি আমার ছেলেকে দিয়ে যেতে পারব না। সদ্য স্টার হয়েছে এমন কাউকে পরামর্শ দিতে হলে, আমি বলব, সব সময় মনে রাখবে তুমি স্টারডমের কোম্পানিতে এক সাধারণ কর্মচারী। চুপচাপ মন দিয়ে কাজ করে যাও। ব্যাপারগুলো আপনাআপনিই ঘটবে। মিডিয়া যা-ইচ্ছে বলতে পারে। টিভি পাবলিসিটি দিতে পারে। বিশ্ব জয়ধ্বনি দিতে পারে। কিন্তু তুমি এ সবে ডুবে যেও না। তুমি নিজের কাজ করে যাও। কাজ না-করে কেবল যদি স্টারডম আঁকড়ে থাকা নিয়ে মাথা ঘামাও, আর স্ট্র্যাটেজি করতে থাকো এটাকে কী কী ভাবে ধরে রাখবে, তা হলে দ্রুতই ওটা অদৃশ্য হয়ে যাবে। স্টারডম হল প্রকৃতির স্বাভাবিক উপহার। ওটায় ডিজাইনার শেড লাগাতে গেলে প্রকৃতি ওটা নিয়ে দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যাবে!


কমন ম্যানের মলম-ই সেরা। ছবি: সুমন বল্লভ।

ধোনি আর আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আমরাই
আইপিএল একেবারে অন্য পৃথিবী। যেখানে এসে আমি কাছাকাছি পড়লাম বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটারের। গেইল থেকে গাঙ্গুলি। দুর্ধর্ষ! যে ভাবে এরা ফাংশন করে, সেটা কাছ থেকে দেখাই একটা অভিজ্ঞতা। ফিল্ম আর ক্রিকেট দু’টো পুরো আলাদা জগৎ। দাদা আর আমি একটা অ্যাড ফিল্ম শ্যুট করার ফাঁকে তাই আমি ওর সঙ্গে মজা করছিলাম। দাদা মুঝকো অ্যাক্টিং আতা হ্যায়। তুমকো ক্রিকেট আতা হ্যায়। ম্যায় তুমহে অ্যাক্টিং নেহি শিখা সাকতা। তুম মুঝে ক্রিকেট নেহি শিখা পাওগে। কিন্তু যতই ইয়ার্কি করি না কেন, কোথাও গিয়ে আমরা সবাই এক! শিখরে ওই ধরনের অবস্থান তখনই সম্ভব, যদি আপনার মধ্যে সাধনা, ট্যালেন্ট, সাহস আর প্যাশন সব একত্রিত হয়। এই যে গৌতম গম্ভীর। আমরা সবাই জানি টেকনিক্যালি ও ভাল ব্যাটসম্যান। ওর রান পাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি ওর টেকনিক নিয়ে বিচলিত নই। আমি মুগ্ধ ওর প্যাশনে! যে বার আমরা আইপিএল জিতলাম তার আগের বছরের কথা। একান্তে কথা হচ্ছিল, হঠাৎ আনমনা ভাবে গম্ভীর বলল, কলকত্তাওয়ালোনে ইতনা প্যার দিয়া হ্যায়, ইনকে লিয়ে কুছ করনা হ্যায়। উফ্, কী প্যাশন! আমার অসাধারণ লেগেছিল। এই প্যাশনটাই সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছবার পাসপোর্ট। বলছিলাম না আমাদের অনেক মিল আছে। এই যে ধোনি। আমার ওরা সবাই বন্ধু ধোনি, বিরাট, যুবরাজ। কিন্তু ধোনিকে দেখে মনে হয়, কোনও কোনও জায়গায় আমরা যেন একই রকম। আমাদের কিচ্ছু এসে যায় না পৃথিবী আমাদের নিয়ে কী ভাবল তাতে। আমরা কেবল ভেবে যাই, নিজেরা পারফেক্ট হতে পারছি কি না? আমাদের কাছে সাফল্যটা একটা খেলা নয়, কারণ ওটা জীবনের খেলা। আর সেই জীবনের খেলাটা আমরা খেলি নিজেদের সঙ্গে। আশেপাশে কোনও মিডিয়া দেখতে পাই না। কোনও দর্শক দেখতে পাই না। কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে পাই না। কেবল দেখি নিজেকে। নিজেকে কি হারাতে পারছি? নিজেকে কি ছাড়িয়ে যেতে পারছি? আমাদের কাছে দিনের শেষে আমরাই চ্যাম্পিয়ন, আমরাই প্রতিযোগী। আমরাই বিজয়ী। আমরাই ব্যর্থ।

আমি সত্যিই প্রেমিকার জন্য মরে যেতে পারি
এমনকী টিনএজাররাও জিজ্ঞেস করে ফেলে, তুমি কি বাস্তব জীবনেও যশরাজ ফিল্মসের রাহুল? আমার উত্তর হল, আমার ফিল্মের চরিত্রগুলো যে ইনোসেন্স আর প্রেম দেখায়, আমি তার পুরোটা না-হলেও অনেকটা তো বটেই। যে ইনোসেন্স নিয়ে আমি নায়িকাকে বলি, আই লাভ ইউ। যখন তাকে বিশ্বাস করাতে চাই, তখন বলি আই ক্যান ডাই ফর ইউ। আমি তোমার জন্য মরে যেতেও প্রস্তুত। সেটা সত্যিই আমি। লোকে ভাবতে পারে সিনেমা। আমি জানি জীবন। লোকে তো আমায় বলেওছে, আরে ইয়ার রিয়েল তো বন যাও। আমি বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ম্যায় হু তো রিয়েল। আমার মনে হয়, জীবনে যদি ইনোসেন্সই না-থাকে, যদি কারও জীবনে ইনোসেন্সের ওপর বিশ্বাসই হারিয়ে যায়, তা হলে বেঁচে থাকার কোনও মানে হয় না।


আমরা কেবল দেখি নিজেকে।

প্রত্যেক দিন জীবনের শেষ শটটা দিতে যাই
আমার রোজকার রুটিনটা তা হলে বলি। সকালে উঠে দু’কাপ ব্ল্যাক কফি খাই। কাগজটায় হাল্কা করে চোখ বোলাই। হালকা চোখ বুলিয়ে নেওয়া এই জন্যই যে ভয় থাকে আবার কে না কী লিখল? এর পর দাঁত মাজি, স্নানে যাই। বাথরুমে বেশ কিছুটা সময় কাটাই। ফিরে এসে চুলটুল আঁচড়ে ঘড়ি পরে নিই। জিন্স আর টি-শার্টটা পরে ফেলি। পুরো তৈরি হয়ে এ বার লিফ্টের দিকে এগোই। আমার বাড়িটা এসি হলেও লিফ্টের জায়গাটা একটু গরম। ওই গরম লিফ্টে ঢুকতে ঢুকতে প্রথমেই যে চিন্তাটা মাথায় আনি তা হল, শাহরুখ, অভিনয় করতে যাচ্ছ। এটাই তোমার জীবনের প্রথম শট। এটা যদি ঠিকঠাক করতে পারো। সবাই যদি তোমার শট দেওয়াতে খুশি হয়, তুমি স্টার বনে যাবে। এটাই তোমার চাকরির প্রথম ইন্টারভিউয়ের মতো। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত! যাও, গিয়ে পারফর্ম করে এসো! একটা লেখায় পড়েছিলাম, ডন ব্র্যাডম্যানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, লাগাতার দীর্ঘ সময়ের ইনিংসে আপনার ধারাবাহিকতার রহস্য কী? ব্র্যাডম্যান উত্তর দিয়েছিলেন, প্রত্যেকটা বলই আমার কাছে প্রথম বল। আমি মনে করি এটাই দর্শন হওয়া উচিত। প্রত্যেকটা শটই প্রথম শট। রোজ লিফ্টে করে যখন নীচে নামি, দেখি আমার সেক্রেটারি করুণা আর পিআর-এর পুজা নীচে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সঙ্গে কথা বলে গাড়িতে উঠি। গাড়িতেও ব্ল্যাক কফি রাখা থাকে। সেটা খেতে খেতে যখন শ্যুটিংয়ের জন্য যাই, গোটা রাস্তা ভাবতে ভাবতে যাই, শাহরুখ এটা প্রথম শট শুধু নয়, এটাই জীবনের শেষ শট হতে পারে। সো দিস ইজ দ্য শট অব ইয়োর লাইফ। শটটার ইজ্জত করো। এটা তোমার জীবন ঘুরিয়ে দিতে পারে। আমার মনে হয়, আমরা যে প্রফেশনেই থাকি না কেন, প্রতিদিন সকালে উঠে নিজের মনে এই ওয়ার্কআউট করে নিই, যে আজই চাকরিতে প্রথম দিন। তা হলে হয়তো আমাদের ধারাবাহিকতা থাকবে। লোকে বলে আমার এনার্জির কথা। আমার পরিশ্রমের কথা। কিন্তু আমার তো মনেই হয় না পরিশ্রম বলে। আই লাভ দিস। বছরের পর বছর এটাই হয়ে এসেছে, যে লোককে আমি এনার্জি দিই। আর আমি তাদের ভালবাসা থেকে এনার্জি নিই।

সোনি লিস্টনের নীরবতা আমারও কাহিনি
বলিউডে দশ বছর কাটানোর পর প্রথম যখন আমার বই বেরোয়, তার হেডলাইন ছিল ‘টোয়েন্টি ইয়ার্স অব আ ডিকেড’। তার দশ বছর পর, আজ মনে হচ্ছে, কুড়ি নয়, এখানে পঞ্চাশ বছরের জীবন কাটিয়ে ফেললাম। ইমোশনালি এত কিছু এই ক’বছরে আমার ওপর দিয়ে ঘটে গেছে যে, এক এক সময় অবাকই লাগে, আমি কেন সিৎজোফ্রেনিক নই। নাকি জানি না সিৎজেফ্রেনিক হতেও পারি। যখন দেখি নিউজ টেলিভিশনে বসে একটা কুৎসিত না-ম্যাচ করা টাই পরা সাংবাদিক জ্ঞান দিচ্ছে যে, ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওর মোটেই ওটা তারকাসুলভ সুসভ্য আচরণ হয়নি, তখন মনে হয়, ভাই বলে নে। চলো ইয়ার তুমকো যো বোলনা হ্যায় বোলদো। আমার স্টারডম সঙ্গে করে কখনও কোনও বিল্ডিংয়ে ঢুকিনি, কোনও স্টেডিয়ামেও যাইনি। আমার নিজের হোমগ্রাউন্ড ইডেন গার্ডেন্সেও তো সিকিউরিটি আমায় আটকেছে। কই আমি তো তা নিয়ে কোনও নাটক ক্রিয়েট করিনি। আমি জীবনে ধৈর্যে বিশ্বাসী। অনেক কিছু গিলে নিতে পারি। নিয়েও থাকি। কখনও আমার কাছের লোকেরা বলে, আমার গিলে নেওয়ার ক্ষমতাটা বড্ড বেশি। কারও কারও মনে হয়, আমি বোধহয় যথেষ্ট টাফ নই। নইলে গর্জে উঠি না কেন? কিন্তু সেটা মোটেও সত্যি নয়। আমি যথেষ্ট টাফ। হয়তো নীরব থাকি। মনে রাখবেন নীরবতাও কিন্তু খুব স্ট্রং। এক এক সময় টিভিতে জ্ঞান দেওয়া জার্নালিস্টকে আমার বলতে ইচ্ছে করে, ভাই তুই যদি আমার জীবনটাই না-কাটিয়ে থাকিস, তা হলে কী করে বুঝবি? তুই যদি আমার মতো পেশার জন্য রোজ আবেগের খুলে আম প্রদর্শনে অভ্যস্ত না-হোস। তোকে যদি আমার মতো পুতুল হয়ে বাধ্যবাধকতার মধ্যে রোজ নাচতে না-হয়। তোর যদি এই দুশ্চিন্তাটাই না থাকে যে, আজকে সব মিলিয়ে ঠিক কত লোকের মুখে হাসি ফোটাতে পারলাম। তা হলে তুই আমাকে ধরতেই পারবি না। বুঝতেই পারবি না। সোনি লিস্টন নামে এক বিখ্যাত হেভিওয়েট বক্সার ছিলেন।

সোনি লিস্টনের মধ্যে নিজেকে দেখতে পাই।
মহম্মদ আলির সঙ্গে তাঁর এক খেতাবি লড়াই। লড়াইয়ের আগে আলিকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গেছে। সবাই বলছে, আলি দেখনে মে আচ্ছা হ্যায়। কিতনা আচ্ছা বোল লেতে হ্যায়। আর লিস্টন সেখানে চুপচাপ। অনেক অনুরোধের পর শুধু একটাই কথা বললেন, কোনও কোনও মানুষের জীবনে এত কিছু ঘটে যে, শব্দ বা প্যারাগ্রাফ দিয়ে তা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সেই সব লোকেরা যথাসম্ভব নীরব থাকে। আমি নিজেও সোনি লিস্টনের ক্যাটাগরিতে পড়ি। আমি হয়তো মুভিস্টার। আমাকে কথা বলতেই হয়। লম্বা লম্বা ইন্টারভিউ দিতে হয়। কিন্তু স্টার সত্তাকে সরিয়ে রেখে, টেপ রেকর্ডারটা বন্ধ করে যদি মানুষ শাহরুখকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার অনুভুতিটা কী বলো তো? আমি গুছিয়ে কিছু বলতেই পারব না। এত কম সময়ে এত কিছু আমার জীবনে ঘটে গিয়েছে। ঠান্ডা থেকে গরম। শুকনো থেকে ভেজা। আলো থেকে অন্ধকার। সুখী থেকে অসুখী, যে আমার জীবনটাই একেবারে অন্যরকম। মাঝে মাঝে লোকের দেওয়া অপবাদ নিয়ে, ভুলভাল লেখালিখি নিয়ে আমি প্রথমে প্রচণ্ড উত্তেজিত, পরে দুঃখিত হয়ে পড়ি। তারপর মনে হয়, আমি এত আপসেট হয়ে পড়ছি কেন? ওদের তো আমাকে না-বোঝারই কথা। ওরা তো আমার এই জীবনটাই কাটায়নি!


অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আই ফোন) অথবা গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড) থেকে ABP AR Appটি
ডাউনলোড করে এই ছবিটি স্ক্যান করুন। আর দেখে নিন কলকাতা এক্সপ্রেসে রাইমা-কোয়েলের মুখোমুখি কিং খান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.