ধুতি-চাপকান থেকে শার্ট-ট্রাউজার, পাগড়ি থেকে টুপি। তরোয়াল থেকে ইনস্যাস, ঘোড়া থেকে এনফিল্ড বুলেট। কিংবা লেঠেল-পাইক-বরকন্দাজ থেকে কনস্টেবল-ইন্সপেক্টর। চৌকিদারবাহিনী থেকে কলকাতা পুলিশ।
তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে কলকাতার আইনরক্ষকদের চেহারা-চরিত্র কী ভাবে বদলেছে, হাতিয়ার বা বাহন বা কর্মপরিধিতে কী পরিবর্তন হয়েছে, সেই ইতিহাস নৃত্যনাট্যের আঙ্গিকে তুলে ধরবেন পুলিশকর্মীরাই। আট মিনিটের এক অনুষ্ঠানে। ফ্রেন্ডশিপ কাপের পুরস্কার বিতরণীতে।
কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষ ফি বছর শহরে ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকেন। নাম ‘ফ্রেন্ডশিপ কাপ।’ এ বছর তার চূড়ান্ত খেলা ১৪ সেপ্টেম্বর। প্রতি বারের মতো সে দিনও আলিপুরে বডিগার্ড লাইন্সের মাঠে ফাইনাল ম্যাচের পরে পুরস্কার বিতরণ দিয়ে শেষ হবে ‘বন্ধুত্বের’ প্রতিযোগিতা। তবে এ বার শেষটা হবে একটু অন্য রকম। ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চেই কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে তিন শতকব্যাপী বিবর্তনের ছবি তুলে ধরা হবে দর্শকদের সামনে। “ফ্রেন্ডশিপ কাপ কলকাতা পুলিশের পুরনো অনুষ্ঠান। এ বছর নতুন কিছু করার কথা ভাবা হয়েছে। পরিকল্পনাটি তারই অঙ্গ।” বলছেন অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবাশিস রায়।
অভিনবত্বের তাগিদ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নাগরিকদের অবহিত করা এর বড় উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন লালবাজারের এক কর্তা। তাঁর কথায়, “তিনশো বছরের বিবর্তন শুধুই পুলিশের নয়। সার্বিক ভাবে বলতে গেলে, সমাজের রক্ষকের।” তাই সকলের ভূমিকা জুড়ে তৈরি অনুষ্ঠানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইভোলিউশন অফ আওয়ার প্রোটেক্টর।’ |
পাঁচ রূপে রূপান্তর প্রহরীর। অঙ্কন: সুমন চৌধুরী। |
রক্ষকের বিবর্তন। যাতে পত্তনের পর থেকে কলকাতা পুলিশের দেড়শো বছরের ইতিহাসের সঙ্গে উপরি পাওনা তার আগের ইতিবৃত্তান্ত। কী রকম?
ইংরেজরা দখল কায়েম করার আগে দেশে সে ভাবে ‘পুলিশ’ বলতে কিছু ছিল না। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে রাজা-জমিদারদের লেঠেলরাই ছিল শান্তিরক্ষক। ১৭০৪-এ প্রথম বরকন্দাজ বাহিনী (ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড ইউনিট) গড়ে ওঠে। অস্ত্র, ঢাল-তরোয়াল। বছর ছয়েক বাদে রাত-পাহারায় চৌকিদার নিয়োগ করা হয়। এক হাতে লাঠি, অন্য হাতে লন্ঠন নিয়ে ‘জাগতে রহো’ হাঁকের সূচনা তখনই।
১৭৫৭-য় পলাশির যুদ্ধের পরে সুবা বাংলায় জাঁকিয়ে বসে ইংরেজ শাসন। তার আঠাশ বছরের মাথায়, ১৭৮৫-তে কলকাতাকে ৩১টি থানায় ভাঙা হয়। যাকে বলা যেতে পারে পুলিশ কমিশনারেটের ভিত গড়া। এর পরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, ১৮৫৬ সালে লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশের আদলে গঠিত হয় কলকাতা পুলিশ কমিশনারেট। প্রথম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন এস ওয়াচোপ। তবে সে পুলিশের চেহারা আমাদের চেনা নয়। ইংরেজ অফিসারদের পরনে তখন খাকি পোশাক, দেশীয় পেয়াদারা সজ্জিত সাদা ধুতি-লাল চাপকান-লাল পাগড়িতে। হাতিয়ার বলতে মূলত লাঠি-ছোরা-তরবারি। বিশেষ ক্ষেত্রে বারুদপোরা গাদা বন্দুক বা মাস্কেট।
জন্মগ্রহণের এক বছরের মধ্যেই অগ্নিপরীক্ষা!
১৮৫৭-য় সিপাহি বিদ্রোহের আগুন ছড়ায় দিকে দিকে। আঁচ আসে কলকাতাতেও। তবে পরীক্ষায় সসম্মান উত্তীর্ণ হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের প্রাণকেন্দ্রের নবগঠিত রক্ষক বাহিনী। সাফল্যের ইনাম হিসেবে কমিশনার ওয়াচোপ ‘নাইট’ খেতাব পান। আর এক স্বনামধন্য ব্রিটিশ কমিশনার হলেন স্যর স্টুয়ার্ট হগ (যাঁর নামে হগ মার্কেট, অধুনা নিউ মার্কেট)। ১৮৬৮-তে তিনিই কলকাতা পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট, সংক্ষেপে ডিডি) সৃষ্টি করেন, বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় যার রাশ হাতে নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন আর এক শ্বেতাঙ্গ অফিসার চার্লস টেগার্ট। পরে কমিশনার হওয়া টেগার্ট দমনপীড়নের জন্য কুখ্যাতি অর্জন করলেও শান্তি-শৃৃঙ্খলা বজায় রাখার সুবাদে সুনামও কুড়িয়েছিলেন। কলকাতা পুলিশে সাদা উর্দির প্রচলন শুরু বিংশ শতকের গোড়াতেই। শতকের মাঝামাঝিতে বাহিনীর মূল আগ্নেয়াস্ত্র হিসেবে লি এনফিল্ড (থ্রিনটথ্রি) রাইফেলের আগমন। স্বাধীনতার পরে কলকাতা পুলিশের প্রথম ভারতীয় কমিশনার হয়ে আসেন সুরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।
লেঠেল, বরকন্দাজ, চৌকিদার, সাবেক ব্রিটিশ আমলের পেয়াদা-পুলিশ থেকে এখনকার সাদা শার্ট-ট্রাউজারে সজ্জিত, নাইন এমএম-ইনস্যাসধারী রক্ষী ক্রমপর্যায়ে আইনরক্ষকদের এই পাঁচ রূপে রূপান্তরের কাহিনীই ফুটিয়ে তোলা হবে আট মিনিটের অনুষ্ঠানটিতে। জোরদার প্রস্তুতি চলছে। নৃত্যনাট্যে থাকবেন প্রশিক্ষণরত আড়াইশো পুলিশকর্মী। রেসকোসের্র্র উল্টো দিকে, পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের সামনে সপ্তাহে তিন দিন মহড়া দিচ্ছেন তাঁরা। ওঁদের তালিম দিচ্ছেন যিনি, সেই নৃত্যশিল্পী অলকানন্দা রায়ের কথায়, “একে নৃত্যনাট্য বলা যায়। যদিও নাচের বিশেষ ভূমিকা নেই। যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মার্শাল আর্টের ভঙ্গিমায় বিষয়টি তুলে ধরবেন ওঁরা।”
অর্থাৎ পুলিশের পক্ষে যা করা সহজ, তা দিয়েই উপস্থাপনা। অভিনব বই কি!
|
|
জল পেরিয়ে খিদিরপুরে তাঁর ছোটবেলার ক্লাবে ইফতারে
যোগ দিলেন জিৎ। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
|
বুধবার আমদাবাদের একটি অনুষ্ঠানে বাঁদিক থেকে অক্ষয় কুমার,
পরেশ রাওয়াল, সোনাক্ষী সিন্হা এবং ইমরান খান। ছবি: পিটিআই। |
|
|