আগের রাত থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতেই পায়ের পাতা ডোবা জল জমে গিয়েছিল শহরে। দুপুর থেকে আকাশভাঙা বৃষ্টিতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গেল হাঁটু জল।
দিনভর এমন বৃষ্টিতে নাজেহাল তো হতে হলই, সঙ্গে উপরি বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা। বর্ধমানের রসিকপুর মোড়ে রাস্তার উপর দিয়ে প্রায় দু ফুট উচুঁ হয়ে জল বইতে দেখা গেল, জল ঢুকে যায় সুভাষপল্লিতে বেশ কয়েকটি বাড়ির ভেতরেও। কিন্তু শহরের এমন হাল কেন? জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র ২১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বর্ধমানে। এই বৃষ্টিতে শহর ভাসার কথাও নয়। কিন্তু নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হওয়ায় বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় জল জমে যায়।
মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে পদত্যাগ করেছে পুরপ্রধান আইনূল হকের বোর্ড। নির্বাচন না হওয়ায় নতুন বোর্ডও গঠন হয়নি। কিন্তু তিন সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই বর্ধমানের এমন বানভাসি দশা কেন, তার জবাব দেওয়ার মতোও লোক মেলেনি। বর্ধমানের মহকুমাশাসক (উত্তর) প্রদীপ আচার্য রয়েছেন পুরসভার দায়িত্বে। বর্তমানে তিনি ছুটিতে। তাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। |
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “জন কেন জমল তা বলবেন পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার। তাঁরই তো সর্বত্র সাফাইকর্মীদের পাঠিয়ে বর্ষার সময় সমস্ত ড্রেন পরিষ্কার করানোর কথা। কেন হয়নি, খোঁজ নিতে হবে।” আর এগজিকিউটিভ অফিসার মহম্মদ মহসিনের মোবাইলে বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শহরের সুভাষপল্লি, রসিকপুর, বাজে প্রতাপপুর, লক্ষ্মীপুর মাঠ, কাঞ্চননগর, ভাতছালা ও ছোটনীলপুর ইত্যাদি এলাকায় সমস্ত রাস্তায় এ দিন জলে ঢেকে গিয়েছিল। জলমগ্ন রাস্তা পার হতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বয়স্ক এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। নিকাশির এমন দশায় ক্ষুব্ধ তাঁরাও। রসিকপুরের এক প্রবীণ বাসিন্দা শেখ রফিক বলেন, “বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় এলাকা। পুরসভার তৈরি ড্রেন রয়েছে বটে, কিন্তু তা এতটাই বুজে গিয়েছে যে আর জল বইতে পারছে না। ফলে গোটা রাস্তা ভেসে যাচ্ছে।” সুভাষপল্লিতে বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। তাঁদের চিন্তা, রাতে যদি জল আরও বাড়ে তাহলে ঘর ছেড়ে স্থানীয় স্কুল বা কলেজে ঠাঁই নিতে হবে। এলাকার বীনা ঘোষ বলেন, “বরাবরই অল্প বৃষ্টিতে সুভাষপল্লি ডুবে যেত। কিছুদিন আগে পুরসভার উদ্যোগে একটা বড় ড্রেন তৈরি হয়। কিন্তু ড্রেনের শেষটা পাকা করা হয়নি। এমনকী জি টি রোডের দিকে ড্রেনের যে অংশটা রয়েছে সেটা তুলনামূলক উঁচু। ফলে ড্রেনের জল এলাকাতেই রয়ে যাচ্ছে।”
কিন্তু জল সরানো হবে কী ভাবে, বুধবার সে উত্তর দেওয়ার মতোও কাউকে পাওয়া যায়নি পুরসভায়। প্রশাসনও দায়িত্ব নিতে নারাজ। ফলে শহরবাসীও এখন অগাধ জলে। |