দুই ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদ শেষ পর্যন্ত এক-এক করে ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে!
কংগ্রেস আগেই জানিয়েছিল উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে বিরোধী আসনে বসবে। বামফ্রন্ট এ বার জানাল, মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি নির্বাচনে তারা প্রার্থী দেবে না। তারা বসবে বিরোধী আসনে। অর্থাৎ উত্তর দিনাজপুরে বামফ্রন্ট এবং মালদহে কংগ্রেসের জেলা পরিষদ গঠন অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল।
এই প্রেক্ষিতে তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক শিবির এখনও সংশয়ে। উত্তর দিনাজপুরের মতো মালদহেও তাদের বিরোধী আসনে বসার কথা। তৃণমূলের মালদহ জেলা সভানেত্রী তথা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র সেই কথাই বলেছেন। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “দেখি কংগ্রেস কী করে জেলা পরিষদ দখল করে!” জেলারই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী জানান, দলের রাজ্য নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
পঞ্চায়েত ভোটে যেখানে ত্রিশঙ্কু ফল হয়েছে, সেখানে বামেদের ভূমিকা নিয়ে মঙ্গলবার রাজ্য বামফ্রন্ট বৈঠকে বসে। ঠিক হয়, মালদহ জেলা পরিষদে বামেরা প্রার্থী দেবে না। এই জেলায় ফ্রন্ট ও কংগ্রেস ১৬টি করে আসন পেয়েছে। তৃণমূল ৬টি। সভাধিপতি পদে প্রার্থী না দিয়ে বামেরা কি কার্যত কংগ্রেসকেই সমর্থন করছে না? ফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর ব্যাখ্যা, উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদে কংগ্রেসের বিরোধী আসনে বসার কথা আগেই জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি। বামেদের আশঙ্কা, মালদহে তারা প্রার্থী দিলে কংগ্রেস-তৃণমূল এক সঙ্গে ভোট দিয়ে তাদের হারিয়ে দিত। বিমানবাবুর কথায়, “তাই আমরা লড়াইয়ে নেই। রাজনীতিটা তো বুঝতে হবে!”
বস্তুত, বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে কংগ্রেস-তৃণমূল এক হোক, কোনও ভাবেই আলিমুদ্দিন তা চায় না। বিমানবাবুর কথায় স্পষ্ট, উত্তর দিনাজপুরে বামেরা এবং মালদহে কংগ্রেস ‘দেওয়া-নেওয়া’র এই সূত্রে দু’পক্ষের নেতারাই খুশি। জেলা পরিষদে স্থায়ী সমিতি গঠনের ক্ষেত্রে উত্তর দিনাজপুরে বাম এবং মালদহে কংগ্রেসই এগিয়ে। যে হেতু পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা ছাড়াও জেলার বিধায়ক-সাংসদদের (মন্ত্রী বাদে) ভোটে স্থায়ী সমিতি গঠিত হয়, তাই জেলা পরিষদ গঠনের পরে তা চালানোর ক্ষেত্রে দুই জেলায় বাম বা কংগ্রেস, কারও অসুবিধা হবে না।
স্থায়ী সমিতি গঠনের জন্য মালদহে কংগ্রেসের পক্ষে রয়েছে ২৯টি ভোট। জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরীর বক্তব্য, “জেলা পরিষদে স্থায়ী সমিতি কংগ্রেস দখল করবে বুঝতে পেরেই সিপিএম ও তৃণমূল, দু’দলই পিছু হঠেছে!”
ফ্রন্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ত্রিশঙ্কু ক্ষেত্রে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস বা নির্দল হিসাবে জেতা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কোনও বোর্ড গঠন করা হবে না। তবে বাম নেতারা মনে করছেন, বহু জেলাতেই তৃণমূলকে আটকাতে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে কংগ্রেস ও বাম হাত ধরাধরি করবে।
নৈরাজ্য এবং পঞ্চায়েত ভোটে সন্ত্রাস ও প্রহসনের প্রতিবাদে আজ, বুধবার বিকেলে ধর্মতলা থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিল করবে বামেরা। |