বনধ নিয়ে অনড় রাজ্য, বদল পুলিশ-প্রশাসনে
নির্দিষ্টকালের বনধ চতুর্থ দিনে পড়েছে। পাহাড়বাসীর হেঁসেলে রসদ বাড়ন্ত। দিনভর মোর্চা অফিসে গিয়ে অনুযোগ জানাচ্ছেন নেতা-কর্মীরা। মোর্চার শীর্ষ নেতাদের একাংশ মহাকরণেও যোগাযোগ করছেন। কিন্তু, বন্ধ না তুললে কোনও কথা নয় এই অবস্থানেই অনড় রাজ্য। সেটা মঙ্গলবার বিকেলে দার্জিলিঙে পৌঁছে আরও এক বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিনই জিটিএ-র প্রধান সচিবকে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বদলি করা হয়েছে জেলাশাসককে। বদলি হয়েছেন পাহাড়-ডুয়ার্সের ১০ জন ওসি-আইসিও। ঘরে-বাইরে এমন প্রবল চাপের মুখে পড়ে এ বার সমঝোতার রাস্তা খুঁজতে দিল্লি যাওয়ার কথা ভাবছেন খোদ বিমল গুরুঙ্গ। সেখানে তিনি রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও দেখা করতে চাইছেন বলে মোর্চা সূত্রে দাবি।
বনধে সুনসান দার্জিলিঙের চকবাজার এলাকা। মঙ্গলবার রবিন রাইয়ের তোলা ছবি।
এ দিন পাহাড়ে এসে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সেরে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেছেন, “আমি পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। অফিসারদের সঙ্গে কথা বললাম। বুধবারও ঘুরে দেখব। তার পরে ফিরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেব।” সরকারি সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে বাসুদেব বুঝে নিতে চেয়েছেন, মোর্চার বনধ তথা আন্দোলন মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও পরিকাঠামোগত বিষয়ে কোথায় কী খামতি রয়েছে। দিনরাত সরকারি অফিস, বাংলোয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন রাখতে কত রক্ষী লাগবে, কত ঘাটতি রয়েছে সব মিলিয়ে কী প্রয়োজন, তা নিয়ে লিখিত রিপোর্ট নিয়েছেন তিনি। পাহাড়ের সাধারণ মানুষ ও বিশিষ্টজনেরা কী চাইছেন, সে প্রসঙ্গেও তথ্য সংগ্রহ করেছেন। আজ তিনি শিলিগুড়িতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে জেনে নেবেন, ওঁরা কী চান। তাঁদের ভরসাও জোগাবেন।
মঙ্গল সিংহ রাজপুতকে স্মরণে মোর্চা কর্মীরা। শিলিগুড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
এই সময়েই মুখরক্ষার সূত্র খুঁজতে গুরুঙ্গ দিল্লি যেতে পারেন বলে মোর্চা সূত্রে খবর। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এ দিন দিল্লিতে বলেছেন, “আমরা একাধিক নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। সকলেই সহানুভূতির সঙ্গে আমাদের কথা শুনেছেন।” তিনিই জানান, “এ বার রাহুল গাঁধীর কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। তিনি সময় দিলে বিমল গুরুঙ্গ দেখা করতে দিল্লি আসবেন।” মোর্চা সূত্রের দাবি, রাহুলের সম্মতি মিললে শুক্রবারই দেখা করতে চান গুরুঙ্গ। তবে আন্দোলন মোকাবিলায় প্রশাসন যে ভাবে কোমর বাঁধছে, তাতে চিন্তিত মোর্চা প্রধান। তাই দলের যে সব নেতা-কর্মী এবং জিএলপি সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে, তাঁদের আগামী দু’দিনের জন্য আত্মগোপন করতে বলেছেন তিনি। মোর্চা সূত্রে বলা হচ্ছে, সোমবার তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অনিত থাপা গ্রেফতার হওয়ার পরে সাবধানী হয়ে পড়েছেন গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার অনিতের ১৪ দিনের জেলহাজত হয়েছে। তা ছাড়া মঙ্গলবার পর্যন্ত জিএলপি-র সদস্য-সহ শতাধিক মোর্চা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই অবস্থায় গুরুঙ্গ চাইছেন না আর কোনও নেতা গ্রেফতার হোন। তাই তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কেউ যেন প্রকাশ্যে না আসেন। কোনও হিংসাত্মক ঘটনায় যেন না ঘটে। তবে গুরুঙ্গ পাহাড় ছাড়লে পরে পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হতে পারে বলে আশঙ্কা পুলিশ-প্রশাসনের।
পাহাড়ের দিনলিপি
মোর্চা কী করল রাজ্যের পদক্ষেপ
• রাহুল গাঁধীর কাছে সময় চাইল মোর্চা। তাঁর সম্মতি
পেলে শুক্রবার দেখা করতে পারেন বিমল গুরুঙ্গ

• মোর্চার সঙ্গে বৈঠকে চিদম্বরম এবং জয়রাম রমেশের
পরামর্শ, আগে অনির্দিষ্টকালের বনধ তুলুন

• দার্জিলিঙের জেলাশাসকের দফতর
ঘিরে বিক্ষোভ। তিন মহকুমায় মিছিল

• জিএলপি সদস্যদের কোর্টে নেওয়ার পথে
দার্জিলিঙে বিক্ষোভ। কার্শিয়াঙে থানা ঘেরাও

• জিটিএ ডেপুটি চিফের
অভিযোগ: উত্তেজনা বাড়াচ্ছে রাজ্য
• শিপচু মামলায় গুরুঙ্গের জামিন খারিজের
আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত

• দার্জিলিঙে পৌঁছলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব।
কড়া পদক্ষেপ জারি রাখার নির্দেশ।

• বদলি দার্জিলিঙের জেলাশাসক।
পাহাড়-ডুয়ার্সে পুলিশেও ব্যাপক রদবদল

• সিআরপিকে সামনে রেখে গাড়ি ছাড়িয়ে
নিল পুলিশ। ঘেরাও উঠল কার্শিয়াঙে

• ধৃত মোর্চা সমর্থকের সংখ্যা
একশো ছাড়িয়ে গেল
মোর্চার কাছে যেটা বাড়তি চাপ, তা হল বন্ধের চতুর্থ দিনে পাহাড়ের সব মহলেই ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। অতীতে সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে মানুষের ওই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে জিএনএলএফের ডাকা অনির্দিষ্টকালের বন্ধ পাঁচ দিনের মাথায় ভেস্তে দেওয়া হয়। মোর্চার কট্টরপন্থীরা যদিও তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারই পক্ষপাতী। তাই এ দিনও থানা ঘেরাও, পথ অবরোধ করেছেন তাঁরা। দিনভর জেলাশাসক-সহ সরকারি কর্তাদের অফিস ঘিরে বসে থাকতেও দেখা গিয়েছে মোর্চার নেতা-কর্মীদের। তবে প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুলিশ-প্রশাসনের কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটতে হয়েছে মোর্চাকে। জেলাশাসক-সহ সরকারি কর্তারা অফিস করেছেন। সিআরপিকে সামনে রেখে অবস্থান, বিক্ষোভ, অবরোধ হটিয়ে দিয়েছে পুলিশ। অন্যদের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের (জিএলপি) ১৬ জন মহিলা সদস্যকেও। পুলিশের দাবি, ধৃত মহিলা জিএলপি সদস্যরা গরুবাথানের জিএলপি ক্যাম্প ছেড়ে নকশালবাড়ি এলাকায় গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ দিন কোনও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দার্জিলিঙের বিদায়ী জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। বলেছেন, “যারা স্কুল বা দোকান খোলা রাখতে চান, তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রসদের সমস্যা হলে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রশাসনই ব্যবস্থা করবে।” সৌমিত্র মোহনকে এ দিনই বদলি করেছে রাজ্য প্রশাসন। তাঁকে বর্ধমানের জেলাশাসক করা হল। দার্জিলিঙে তাঁর জায়গায় এলেন পুনীত যাদব। বর্তমানে তিনি অর্থ দফতরের যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
বদলি করা হয়েছে দার্জিলিং, কার্শিয়াঙের আইসি এবং কার্শিয়াঙের এসডিপিওকেও। দার্জিলিং, কার্শিয়াঙে পাঠানো হয়েছে যথাক্রমে দুই ইনস্পেক্টর মনোজ চক্রবর্তী ও মলয় মজুমদারকে। দার্জিলিঙের প্রাক্তন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তথা বর্তমানে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিমকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাহাড়ে পাঠানো হচ্ছে। ডুয়ার্সে মাদারিহাট, জয়গাঁ, শামুকতলা, বানারহাট, নাগরাকাটা, বারবিশার ওসিকে বদলি করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, পাহাড়ের অশান্ত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জিটিএ-র প্রধান সচিব রামদাস মীনাকে জলপাইগুড়ির ডিভিশনাল কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হল। সরকারি সূত্রে বলা হয়, এত দিন জিটিএ’র প্রধান সচিবের হাতে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা ছিল না। ফলে আইনশৃঙ্খলা বা অন্য বিষয়ে দার্জিলিঙের জেলাশাসক কিংবা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। তিনি শুধু মত জানাতে পারতেন। এ বার ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পরে রামদাস মীনা পাহাড় সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা সমাধানে ডিএম-এসপিকে লিখিত নির্দেশ দিতে পারবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.