তাঁর বয়স কত? ৪৯, ৬০, নাকি ৫২ বছর?
জন্ম-তারিখের ত্র্যহস্পর্শে বিষম বিপাকে পড়েছেন সনাতন নাইয়া নামে ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা এফসিআই-এর এক কর্মী। স্কুল থেকে ভোটার পরিচয়পত্র পর্যন্ত সর্বত্র সনাতনবাবুর জন্মের তারিখ লেখা আছে ১৯৬৪ সালের ২ মার্চ। সেই হিসেবে তাঁর বয়স এখন ৪৯ বছর।
অথচ এফসিআই-কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সনাতনবাবুর জন্ম হয়েছে ১৯৫৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। সেই অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স হয়ে যাওয়ায় আগামী সেপ্টেম্বরে তাঁকে অবসর নিতে হবে।
অর্থাৎ এক কোপে সনাতনবাবুর জীবনের প্রায় ১১টা বছর বেমালুম হাওয়া! এফসিআই-কর্তৃপক্ষের কথা মানতে হলে তাঁর কর্মজীবনের ১১টা বছর জলে যায়। হাতছাড়া হয়ে যায় চাকরিজীবনের শেষ পর্বের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও।
জন্মের শংসাপত্র নিয়ে অফিস-কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন, ছোটাছুটি শুরু হয় সনাতনবাবুর। কিন্তু সুরাহা হয়নি। তাঁর অভিযোগ, অফিস তাঁর কোনও কথাই গ্রাহ্য করছে না। তারা জানিয়েছে, অফিসের নথিপত্রে যে-বয়স দেওয়া আছে, সেই অনুসারেই তাঁকে সেপ্টেম্বরে অবসর নিতে হবে।
নিরুপায় হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সনাতনবাবু। মামলার আবেদনে বলেন, অফিসের নির্দেশ মানতে গেলে তাঁকে ১১ বছর আগে অবসর নিতে হয়। তা হলে তো তাঁর সমূহ সর্বনাশ! শেষ ভরসা আদালত। ধর্মাবতার, বিহিত করুন।
সনাতনবাবুর বয়স নির্ধারণের জন্য এসএসকেএম হাসপাতালকে ‘অসিফিকেশন টেস্ট’ (বয়স পরীক্ষা)-এর নির্দেশ দেয় আদালত। মূলত দাঁত ও হাড়ের গঠন দেখে বয়স নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় এটাকেই বলে ‘অসিফিকেশন টেস্ট’। বিশেষজ্ঞেরা জানান, বয়স নির্ধারণের ব্যাপারে প্রতিটি দেশের আলাদা চার্ট রয়েছে। বিভিন্ন বয়সে মানবদেহের লম্বা হাড়গুলির গঠন কেমন হয় এবং সেই হাড়ের সংযুক্ত অংশগুলি কী অবস্থায় থাকে, তার বর্ণনা রয়েছে সেই চার্টে। হাড়ের এক্স-রে করে চার্টের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হয়। একই ভাবে বিভিন্ন বয়সে দাঁতের কী অবস্থা হয়, ওই চার্টে তারও সচিত্র উল্লেখ রয়েছে। বয়স অনুযায়ী দাঁতের গঠনও খানিকটা বদলায়। তবে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, কমবয়সিদের ক্ষেত্রে নির্ভুল বয়স নির্ণয় করা সহজ। বয়স যত বাড়ে, কাজটা তত কঠিন হয়ে যায়।
৪৯ হোক বা ৬০, সনাতনবাবুর বয়স হয়েছেই। এই পরিস্থিতিতে যথাবিধি পরীক্ষা করে পিজি জানিয়ে দেয়, ওই ব্যক্তির বয়স এখন ৫২ বছর। ছিল দু’রকম জন্মতারিখ নিয়ে বিতর্ক। পিজি-র পরীক্ষার ফলে যুক্ত হল তৃতীয় মত। বাড়ল বিপত্তি।
বয়স পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানান, এফসিআই যে-দিন সনাতনবাবুকে অবসর নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে, সেই তারিখের আগেই এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। এর মধ্যে এফসিআই-কর্তৃপক্ষ চাইলে আদালতে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে হাসপাতালের রিপোর্ট ও এক্স-রে প্লেট পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
উচ্চ আদালত কী রায় দেয়, তারই অপেক্ষায় রয়েছেন সনাতনবাবু। |