খেত থেকে ফেরার পথে বিকেলে পদ্মার পাড়েই নমাজ সারছিলেন জুলফিকর শেখ, মফিজুল মণ্ডলরা। দিনকয়েক বাদেই ঈদ। অথচ মন ভাল নেই ওঁদের। কেন? ‘‘কেন আবার! গতবারের মতো এবারেও বর্ষা যে বড্ড বেইমানি করল। জমির পাট দাঁড়িয়ে আছে জমিতেই। সেই পাট যে পচাব তার জল কোথায়?’’ জুলফিকর, মফিজুলদের গলায় আক্ষেপের সুর।
অন্য দিকে ভোট পর্ব সাঙ্গ হতেই ভিড় বেড়েছে বাজারে। কিন্তু বাজার সেভাবে জমছে কই? ক্রেতারা বাজারে এসেও হাতখুলে কেনাকাটা করছেন না। সীমান্তঘেঁষা ডোমকল কিংবা করিমপুরের ব্যবসায়ীরাও রীতিমত হতাশ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, সীমান্তের বাজারগুলোর চাঙ্গা থাকা না থাকাটা নির্ভর করে পাটের উপর। এবার পাট ভালই হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির ঘাটতির জন্য সেই পচাতে পারছেন না চাষিরা। কৃষকের হাতে কাঁচা টাকাও নেই। বাজারেও মন্দাভাব দেখা যাচ্ছে। করিমপুরের বস্ত্র ব্যবসায়ী বিমান মণ্ডল যেমন বলছেন, ‘‘ভোটের পর গত এক সপ্তাহ থেকে দোকানে ভিড়ও হচ্ছে। কিন্তু চাষির ঘরে টান। কেনাকাটাতে আপোস করছেন ক্রেতারা। কারণ পাট পচাতে না পারা।’’
করিমপুর ও ডোমকল এলাকার অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল পাট। পাট ভাল হলেই আনন্দমুখর হয়ে ওঠে উৎসব। তা জানেন এলাকার ব্যবসায়ীরাও। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই জমিতে পাট ভাল হলেও শেষ মুহূর্তে বৃষ্টির অভাবেই ডুবতে হচ্ছে চাষিদের। জলঙ্গির মনসুর শেখের কথাই ধরা যাক। গতবার ঈদে এই একই কারণে তিনি কিনে দিতে পারেননি মেয়ের পছন্দের ‘ঝিলিক’ চুড়িদার। আর এবার? মনসুর বলছেন, ‘‘এবারেও সেই এক অবস্থা। কিন্তু পণ করেছি বাড়ির আর কারও কিছু হোক না হোক ধার করে হলেও মেয়েকে তার পছন্দের চুড়িদারই কিনে দেব।’’
বাজারের মন্দাভাব প্রসঙ্গে ডোমকলের চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি পার্বতীশঙ্কর নন্দীর কথায়, ‘‘নির্বাচনের কারণে এমনিতেই বাজার মার খেয়েছে। অন্যান্য বার রমজান মাস শুরু হতেই বাজারে ভিড় বাড়তে শুরু করত। কিন্তু এবার নির্বাচনের কারণে বাজার শুরুই হয়েছে ২৯ জুলাইয়ের পর থেকে। বাজারে লোকজন আসছেন ঠিকই, কিন্তু যে পরিমাণ ব্যবসা হওয়ার কথা ছিল তেমনটা হচ্ছে না।’’ পার্বতীশঙ্করবাবু বলেন, ‘‘এই ক্ষেত্রে বাজারের গতি প্রকৃতি নির্ধারণ করে পাট। কিন্তু অনাবৃষ্টিতে জমির পাট এখনও পড়ে রয়েছে জমিতেই। সাধারণ চাষিদের হাতে টাকা নেই। তার প্রভাব পড়ছে ঈদের বাজারে।’’
করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বিধান দত্ত বলেন, ‘‘করিমপুর বাজার বন্ধ থাকে বৃহস্পতিবার। কিন্তু উৎসবের মরসুমে সাতদিনই বাজার খোলা থাকে। এবারেও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু ঈদের বাজার এবার তেজি নয়। পাট না ওঠায় বাজার সেভাবে জমছে না। তবে চাকুরিজীবী ও ভিনরাজ্যে কাজ করা শ্রমিকদের টাকায় কিছুটা হলেও গতি পাচ্ছে বাজার। এইটুকুই যা ভরসার।’’ |