‘সঙ্গে চেন্নাই এক্সপ্রেস নেই, চাঙ্গা হব কী করে’
সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
বুধবার শুরু করছেন বিশ্ব অভিযান। চিনের গুয়াংঝৌ হল সেই জায়গা যেখানে তাঁর কেরিয়ারের
সদা ঊর্ধ্বমুখী
রেখচিত্রের প্রথম নিম্নগামী হওয়া। গত এশিয়াডে গোড়ায় বিদায়। বড় চোট। কোচের
সঙ্গে মনোমালিন্য। কিন্তু এই
ত্র্যহস্পর্শের ধাক্কা সামলে তিনি সাইনা নেহওয়াল এখন দেশের প্রথম
অলিম্পিক পদকজয়ী ব্যাডমিন্টন তারকা।
আইবিএলের পয়লা নম্বর আইকন। হয়তো তাই
বিশ্বসেরাদের
চ্যালেঞ্জ নেওয়ার আগেও রিল্যাক্সড। সেই
মেজাজেই
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে
আইবিএল সব নিয়ে মঙ্গলবার ই-মেল সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে। |
প্রশ্ন: আপনাকে বোধহয় ‘লাকি স্টার’ বলা যায়! গত বছর অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ মেডেলের ম্যাচে নাটকীয় ওয়াকওভার পান। এ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নতুন নিয়মে পরাজিত সেমিফাইনালিস্টও ব্রোঞ্জ পাবে। মাত্র তিনটে ম্যাচ জিতলে বিশ্ব ব্যাডমিন্টনেও প্রথম ভারতীয় হিসেবে সিঙ্গলসে পদক নিশ্চিত। সেমিফাইনালে ওঠার পথে কোনও চিনা মেয়েকেও খেলতে হচ্ছে না!
সাইনা: ভাগ্যের সাহায্য কোন পেশায় লাগে না? খেলাধুলোয় আরও বেশি করে ভাগ্যের ব্যাপারটা থাকে। অলিম্পিকে অপোনেন্টের চোট পাওয়ায় নিশ্চয়ই আমার ভূমিকা নেই। তবে আগে বলেছি, এখানেও বলছি, সে দিন খেলাটা পুরো হলে আমিই জিততাম। ওয়াকওভার পাওয়ার সময় থেকেই ছন্দে ফিরছিলাম। পুরো ফর্মে থাকলে আমি বিশ্বের যে কোনও প্লেয়ারকে হারাতে পারি।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়মেও আমার হাত নেই। তা ছাড়া, সুবিধেটা সব প্লেয়ারই পাবে। বাড়তি মোটিভেশনের ব্যাপার নেই। আমার মোটিভেশন একটাই চ্যাম্পিয়ন হওয়া। হারতে আমি ভালবাসি না। হেরে গেলে আমার সে দিনটা প্রায় মাথা খারাপের অবস্থা দাঁড়ায়।
প্র: বিদেশে বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়া মানেই আপনার কিটে ‘মোটিভেশন ফ্যাক্টর’ হিসেবে হিন্দি সিনেমার সিডি থাকবেই। গুয়াংঝৌতে কোন কোন সিডি নিয়ে গেলেন?
সাইনা: নিয়েছি কয়েকটা। আমার ফেভারিট শাহরুখ খানের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-এর সিডি এখনও না বেরনোয় আসল সিডি-টাই যে আনতে পারিনি! এ বার খেলার পর সিনেমা দেখে কতটা চাঙ্গা হতে পারব, সন্দেহ আছে। |
গুয়াংঝৌতে সাইনা খুঁজে পেলেন ভারতীয় রেস্তোরাঁ। ছবি: টুইটার। |
প্র: শেষ দু’টো (২০০৯ ও ’১১) বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ আটের বেশি এগোননি। গুয়াংঝৌ-স্মৃতি আরও খারাপ। এই অবস্থায় এ বার কতটা আশাবাদী?
সাইনা: এই মুহূর্তে আমি একশো ভাগ ফিট। কোর্টেও একশো ভাগ দেব। বাকিটা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। রেজাল্ট জানতে আমিও আপনাদের মতোই আগ্রহী।
প্র: এ বছর দু’-একবার জাপানি বা তাই মেয়ের কাছে হারলেও বিশ্বসেরা চিনারাই সার্কিটে আপনার আসল প্রতিদ্বন্দ্বী। চিনের মাটিতেই বিশ্ব টুর্নামেন্ট। সে জন্য কোনও বাড়তি মোটিভেশন?
সাইনা: তেমন কিছু নয়। গত কয়েক বছর বিশ্ব র্যাঙ্কিং দুই বা তিন থাকায় সব বড় টুর্নামেন্টে ড্র একই রকম পাই। কোয়ার্টার বা সেমিফাইনাল থেকে চিনা চ্যালেঞ্জের সামনে পড়তে হয়। সুতরাং ট্রফি জিততে হলে অন্তত দু’জন হায়েস্ট র্যাঙ্কড্ চিনা মেয়েকে হারাতে হবেই। তার জন্য টুর্নামেন্টটা চিনে খেলা আর ভারতে খেলা আমার কাছে সমান।
প্র: গত ন’মাস ট্রফি জেতেননি। একটা সময় টানা পাঁচ সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়েছেন। যে নজির আগে নেই। এই অবস্থায় চিনাদের চিনের মাটিতে হারানোর ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
সাইনা: এ বছর ট্রফি না জিতলেও চারটে বড় টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে উঠেছি। যার মানে, ট্রফির খুব কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু চোট, ক্লান্তি...এ সব চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছতে দেয়নি।
প্র: গত পাঁচ বছর একটানা খেলা আর ট্রেনিংয়ে কি মাঝেমধ্যে ক্লান্তি, একঘেয়েমি লাগছে? সে জন্যই গত মাসে পাঁচ সপ্তাহ বিশ্রাম নিয়ে তার ফাঁকে নানান বিজ্ঞাপনী এবং অন্যান্য প্রচারমূলক অনুষ্ঠান সারলেন?
সাইনা: বিজ্ঞাপনের কাজকর্মের সঙ্গে খেলা, ট্রেনিং শিডিউলের সম্পর্ক নেই। দু’টো জিনিসের জন্য আলাদা সময় থাকে। যাতে কোনও সংঘাত না লাগে। তবে হ্যাঁ, সব খেলার মতো ব্যাডমিন্টনেও চোট পাওয়ার প্রবণতা থাকে। প্রতি দিন ছ’সাত ঘণ্টা করে কষ্টসাধ্য, একঘেয়ে ট্রেনিং করতে হয়। কিন্তু তার জন্য পেশাদার খেলোয়াড়ের ক্লান্তি বা একঘেয়েমিতে ভোগার প্রশ্ন নেই। আমি ওই বিশ্রামের পাঁচ সপ্তাহে টুর্নামেন্ট খেলিনি। কিন্তু বিজ্ঞাপনী কাজের ফাঁকে রোজই ট্রেনিং করেছি। |
চিনের প্রাচীর
• বাছাই প্রতিপক্ষ প্রথম পেতে পারেন তৃতীয় রাউন্ডে।
• শেষ আটের বিপক্ষ জাপানের মিতানির কাছে এ বছর হেরেছেন।
• সেমিফাইনালে লড়াই শীর্ষ বাছাই জুয়েরুই-এর বিরুদ্ধে।
• ফাইনালে হয়তো প্রাক্তন বিশ্বসেরা চিনের ইহান। |
|
প্র: ব্যাডমিন্টনে শীর্ষ মান ছুঁয়ে ফেলার পর কোচ হিসেবে গোপীচন্দ আপনার কতটা সাহায্যে লাগছেন?
সাইনা: গোপী স্যার আমার সব সময়ের কোচ। ওঁর থেকে এক্কেবারে আধুনিক টিপস পাই। যেটা বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ারেরও দরকার। নইলে শারাপোভা কেন কোনর্সকে আনল?
প্র: আইবিএল ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের কতটা উপকার করবে?
সাইনা: দেশের খেলাধুলোয় একটা অন্যতম বড় ইভেন্ট হয়ে উঠবে তো বটেই। আর সেটা হলেও লাভ। তাতে ব্যাডমিন্টন নিয়ে আগ্রহ বাড়বে। অন্তত কয়েক জন ভাল প্লেয়ার তৈরি হবে। আইপিএল থেকে যেমন কয়েক জন ভাল ক্রিকেটার উঠেছে।
প্র: আইবিএলের প্রথম নিলাম নিয়েই জ্বালা গাট্টার মতো শীর্ষ প্লেয়ার বেনিয়মের অভিযোগ করেছেন!
সাইনা: নিলামে প্লেয়ারদের দর ঠিক করার ব্যাপারটা পুরোপুরি আইবিএল সংগঠকদের। আমি এ নিয়ে কী বলব?
প্র: আপনার আইডল তৌফিক হিদায়েতের সঙ্গে আইবিএলে এক টিমে খেলবেন। নিশ্চয়ই ভাল লাগছে?
সাইনা: দারুণ উত্তেজিত আমি। তৌফিক স্যার আমার বরাবরের আইডল। ওঁকে টিভিতে খেলতে দেখেই ছোটবেলায় আমার ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার হওয়ার ইচ্ছে জাগে প্রথম! |
|