‘সৌরভ টাফ ক্যাপ্টেন, ধোনি জাদুকর’ |
শ্রাবণের আকাশের নীচে ‘স্টিভদা’
কৌশিক দাশ • কলকাতা |
গেট দিয়ে একটু ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে লেখাটা।
‘স্টিভদা, কিপ হোল্ডিং আওয়ার হ্যান্ডস লাইক দিস’।
স্টিভদা, আমাদের হাতটা এ ভাবেই ধরে রেখো।
চুলে পাকটা একটু বেশিই ধরেছে। মুখের চামড়াতেও একটু যেন কুঁচকানো ভাব। বয়সটাও যে বেড়েছে। কিন্তু তাতে কী? স্টিভন রজার্স ওয় এখনও উদয়নের সেই ‘স্টিভদা’ই রয়ে গিয়েছেন। না হলে কী ভাবে অক্লেশে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাগুলোকে কোলে তুলে নিতে পারেন? কী ভাবে উত্তেজিত এক কিশোরের মতো নিজের ক্যামেরায় ফটাফট ছবি তুলতে লেগে যান? কী ভাবে হট্টগোল বাধানো মিডিয়া প্রতিনিধিদের শাসনের সুরে বলতে পারেন, “আপনারা গণ্ডগোল পাকাবেন না। বাচ্চাদের সামনে খারাপ উদাহরণ রাখবেন না।”
|
শিশুর সঙ্গে শিশুর মতো। ব্যারাকপুরে স্টিভ ওয়। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
গত ১৬ বছরে বহুবার ঘুরে গিয়েছেন এখানে। আসলে ব্যারাকপুরের এই হোমের চৌহদ্দির ভিতরে ঢুকে এলেই যেন সেই কঠিন মানুষটার খোলসটা সরে যায়। যে মানুষটা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালবাসেন। ভালবাসেন এই হোমের বাচ্চাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে। “আমার কাছে ভবিষ্যতটা গাড়ির জানলা দিয়ে বাইরে তাকানোর মতো। অনেক কিছু দেখতে পাই। আর অতীতটা রিয়ার ভিউ মিররের মতো। সামান্য একটু কিছু দেখা যায়। আমি আর অতীতের দিকে বেশি ফিরে তাকাতে চাই না। বরং সামনে একটা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে চাই,” মঙ্গলবার দুপুরে উদয়নে বসে বলছিলেন স্টিভ।
কিন্তু সব কিছু চাইলেই তো পাওয়া যায় না। তাই স্টিভকেও বাধ্য হয়ে অতীতে ফিরে যেতে হল। অধিনায়ক সৌরভ আর ধোনির প্রসঙ্গ উঠে এল। এক জনের বিরুদ্ধে খেলেছেন। অন্য জনকে দেখছেন। দু’জনের মধ্যে তুলনা করবেন কী ভাবে? স্টিভের জবাব, “সৌরভ খুব টাফ ক্যাপ্টেন। ভারতীয় টিমের মধ্যে টাফনেসটা ও-ই আমদানি করেছে। আর ধোনি স্রেফ ম্যাজিশিয়ান। এক জন জাদুকর।”
ক্রিকেট নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে ম্যাচ গড়াপেটা কলঙ্কের কথাও। এর আগে যে সমাধানের কথা তিনি বলেছেন, এ দিনও সেটাই বললেন। লাই ডিটেক্টর। “আমার মনে হয় লাই ডিটেক্টরের সামনে অনেক সত্যি কথাই বেরিয়ে আসবে। এক জন ক্রিকেটারেরও উচিত নিজে থেকে এসে লাই ডিটেক্টরের সামনে বসা। নিজের কাছে সৎ থাকলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমি তো সব সময় লাই ডিটেক্টরের সামনে বসতে তৈরি।” |
ব্যাঙ্ককে মেসি। বার্সেলোনার হয়ে প্রাক মরসুম প্রস্তুতি সফরে। ছবি: এএফপি |
ম্যাচ গড়াপেটার মতোই প্রায় আর এক বিতর্কিত বিষয় উঠে এল। ডিআরএস। স্টিভ কিন্তু মনে করছেন, প্রযুক্তি টিকে থাকার জন্যই এসেছে। “আমি নস্ট্রাদামুস নই। তাই বলতে পারব না, ডিআরএসের ভাগ্যে কী আছে। কিন্তু আমার মনে হয়, শুধু প্রযুক্তিকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ডিআরএসকে সফল হতে গেলে ভাল আম্পায়ারিংয়েরও প্রয়োজন আছে।”
কথা বলা শেষ হতেই হাঁটা শুরু হোমের মেয়েদের উইংয়ের দিকে। যে বাড়িটা স্টিভ ওয় ফাউন্ডেশনই তৈরি করে দিয়েছে। যে বাড়ির আর একটা অংশ ‘নিবেদিতা ভবন’-এর শিলান্যাস এ দিন হল স্টিভেরই হাত ধরে।
শ্রাবণের আকাশ সারা দিনই মেঘে ঢাকা ছিল। কিন্তু স্টিভের ছটায় যেন সেই আকাশও কিছুটা সময় উজ্জ্বল হয়ে উঠল। ছোট ছোট বাচ্চাদের হাত ধরে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী অধিনায়ক যখন নিবেদিতা ভবনে ভিতরে মিলিয়ে যাচ্ছিলেন, একটা কথা বুঝতে অসুবিধা হল না।
‘স্টিভদা’ কিন্তু এই বাচ্চাগুলোর হাত ছাড়ছেন না! |
|