ফুলবাজারে ডাঁই হয়ে জমে থাকা পচা ফুল-পাতা সরাতে প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। এই খরচ বন্ধ করতে এবং জৈব-বর্জ্য থেকে আয়ের লক্ষ্যে কলকাতায় এই প্রথম নতুন এক প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে রাজ্যের উদ্ভিদচর্চা দফতর। ওই সব জৈব-বর্জ্য থেকে সার তৈরি করে এ বার মাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা আয় হবে। পরিকল্পনা রূপায়ণের প্রস্তুতি চলছে মল্লিকঘাট ফুলবাজারে।
হাওড়া সেতুর নীচে গঙ্গার ধারে এশিয়ার বৃহত্তম এই ফুলবাজারের এক পাশে প্রতি দিন ডাঁই হয়ে পচে যায় বিপুল পরিমাণ ফুল-পাতা। বর্ষায় সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। প্রতি দিন তিন লরি বর্জ্য ওখান থেকে নিয়ে গিয়ে ধাপায় ফেলা হয়। ফুলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি স্বপন বর্মণ বলেন, “এর জন্য ঠিকাদারকে মাসে অন্তত এক লক্ষ টাকা দিতে হয়। প্রকল্প রূপায়িত হলে এক দিকে এই টাকা বাঁচবে। অন্য দিকে, বর্জ্য থেকে তৈরি সার বেচেও ভাল আয় হবে।”
মল্লিকঘাট ফুলবাজারে রোজ প্রায় সাত টন জঞ্জাল জমে। তা থেকে সার তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। কথা চলছিল রাজ্যের উদ্ভিদচর্চা দফতর এবং কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক-বিজ্ঞানীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, “আমরা সবিস্তার সমীক্ষা করে এসেছি। ওখান থেকে দৈনিক অন্তত দু’টন সার (ভার্মি কম্পোস্ট) পাওয়া যাবে। প্রতি কিলো চার টাকা হিসেবে ওই সার বিক্রি করলে মাসে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে।” নাম সামনে এলে তাঁর কাজ করতে সমস্যা হবে বলে মন্তব্য করেন ওই শিক্ষক। |
জেলায় জেলায় জৈব-বর্জ্য থেকে সার তৈরির একাধিক প্রকল্প থাকলেও কলকাতায় এমন প্রকল্প এই প্রথম, জানালেন উদ্ভিদচর্চা দফতরের ডেপুটি ম্যানেজার সুব্রত বসু। কবে থেকে কাজ শুরু হবে? তিনি বলেন, “প্রকল্পটি করতে আমাদের ওখানে একটু জায়গা দরকার। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জায়গা চেয়েছি। ওঁরা প্রাথমিক ভাবে সম্মত হয়েছেন।”
বছর ছয় আগে তৈরি মল্লিকঘাট ফুলবাজারের উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের জন্য কেন্দ্র প্রথম কিস্তির পাঁচ কোটি টাকা পাঠিয়েছিল। কিন্তু ২৫ কোটি টাকার ওই প্রকল্প রূপায়িত করা যায়নি। দিল্লির টাকা ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ওই রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএম নেতা সুধাংশু শীল এ ব্যাপারে দায়ী করেছেন তৃণমূলের বিরোধিতাকে। তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টে ‘সিপিএম-এর দাদাগিরি’-র অভিযোগ এনেছিল।
ফুলবাজারের ব্যবসায়ী সমিতি এখন তৃণমূল-নিয়ন্ত্রিত। সমিতির কর্তাদের দাবি, কেবল বর্জ্য থেকে সার প্রকল্প নয়, গত কয়েক মাসে আরও কিছু ‘কাজের কাজ’ হয়েছে। পানীয় জলের অভাবে গঙ্গার জল ফুটিয়ে পান করতেন ফুলচাষিরা। এখন চারটি নলকূপ বসেছে। সন্ধ্যার পরে গোটা অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে থাকত। এখন ৩১টি বাতিস্তম্ভ বসেছে। আগে কাদায় পা ডুবে যেত। এখন প্রায় ৩৪০০ বর্গমিটার অংশে মেঝে ঢালাই হয়েছে।
তবে মল্লিকবাজার-সংলগ্ন মূল রাস্তাটির অবস্থা আগের মতোই রয়েছে, বর্ষায় কাদামাখা। উদ্ভিদচর্চা দফতর সূত্রের খবর, রাস্তাটি কলকাতা বন্দরের অধীনে। তাই এর জন্য কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। |