বীভৎস স্বপ্ন বা পিলে চমকানো হলিউডি ছবির থেকেও ভয়ানক পরিণতি হল কানাডার দুই খুদের।
গভীর রাত। অকাতরে ঘুমিয়ে ছিল দুই ভাই। হঠাৎই ঘরের ছাদ থেকে ভীষণ ভারী কিছু একটা পড়ল ঠিক তাদের ছোট্ট শরীর দু’টোর পর। পর দিন অর্থাৎ সোমবার সকালে ঘরের দরজা খুলতেই মিলল বছর পাঁচেকের নোয়া আর বছর সাতেকের কনারের দেহ। পুলিশের বয়ানে, দুই ভাইয়ের ‘হত্যাকারী’ আসলে একটি দৈত্যাকার আফ্রিকান রক পাইথন। রবিবার গভীর রাতে ছাদ ভেঙে সেটিই পড়েছিল নোয়া আর কনারের শরীরের উপর। প্রায় ১০০ পাউন্ড ওজন নিয়ে পিষে দিয়েছিল তাদের ছোট্ট শরীরদুটো। বিষয়টি কল্পনা করতে গিয়েই শিউরে উঠছেন পূর্ব কানাডার ক্যাম্পবেল্টনের নিউ ব্রুনসউইকের বাসিন্দারা। তাদের চেনা চৌহদ্দিতেই যে ঘটে গিয়েছে এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড।
পুলিশ জানিয়েছে, যে ফ্ল্যাটে দুই ভাই ঘুমোচ্ছিল, তার মালিকের নাম জঁ ক্লদ স্যাভোয়। তিনি নোয়া এবং কনারের মা ম্যান্ডি ট্রেকারন্টিনের বন্ধু। সেই সূত্রে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহান্তেই স্যাভোয়ের বাড়িতে আসত নোয়া এবং কনার। রাতও কাটাত। ফ্ল্যাটের ঠিক নীচেই ছিল স্যাভোয়ের ‘পেট স্টোর’ বা পোষ্যঘর। সেটিকে চিড়িয়াখানা হিসেবেও ব্যবহার করতেন তিনি। কখনও স্কুল ছাত্রদের, কখনও আবার পড়শি বাচ্চাদের হরেক রকম জীবজন্তু দেখিয়ে তাক লাগাতেন স্যাভোয়। তাঁর নিজের বয়ানে, অ্যানাকোন্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, কচ্ছপ, বিপজ্জনক সরীসৃপের ঘরবাড়ি ছিল ‘রেপটাইল ওশেন পেট স্টোর’। সেখানেই থাকত ষোলো ফুটের দৈত্যাকার অজগরটিও। |
স্যাভোয়ের ধারণা, রবিবার কোনও ভাবে নিজের খাঁচা থেকে পালিয়েছিল অজগরটি। তার পর বায়ু চলাচলের পথ বেয়ে উপরে ওঠে। পৌঁছে যায় ঘরের ছাদে। আর তার পরই ছাদ ভেঙে পড়ে নোয়া আর কনারের গায়ে। আসলে সোমবার সকালে নোরা-কনারের মৃতদেহ প্রথম চোখে পড়ে স্যাভোয়েরই। একই সঙ্গে চোখে পড়ে পাশেরই একটি গর্তের মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে পড়ে রয়েছে খুনি সাপটি। সঙ্গে সঙ্গে সাপটিকে ধরে ফেলেন তিনি। তুলে দেন রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের হাতে। আপাতত তাকে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে পুলিশ।
কিন্তু রেপটাইল ওশেনের মতো অন্য একটি চিড়িয়াখানার মালিক লিসা জেনস জানালেন, সাধারণ অবস্থায় সাপ মানুষকে হত্যা করে না। কিন্তু কোনও কারণে ভয় পেলে বা বিপদে পড়লে এ রকম আচরণ অস্বাভাবিক নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য খুনি অজগরটি এমনিতেই কিছুটা উগ্র চরিত্রের ছিল বলে দাবি স্যাভোয়ের। তাকে দেখভালের জন্য অবশ্য বিশেষ কাউকে নিযুক্তও করেননি তিনি। তবে অজগরটির জন্য বিশেষ তালার বন্দোবস্ত করা ছিল। সেই তালা ভেঙে কী করে পালাল সে, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি।
তবে অজগর-পলায়নের রহস্য নিয়ে এখন মাথা ঘামাতে রাজি না কেউই। সেখানকার অনেক অভিভাবকই তো ছুটির দিনে রেপটাইল ওশেনে নিয়ে যেতেন তাঁদের সন্তানদের। একই পরিণতি হতে পারত তাদেরও, ভাবতেই শিউরে উঠছেন অভিভাবকরা। বিহ্বল ডিয়ান ফুর্নিয়ের বললেন, “বাচ্চাগুলো পশুপাখি ভীষণ ভালবাসত।.....সব সময় দেখতাম এক সঙ্গে খেলছে, হাসছে। আনন্দ আর জীবনীশক্তিতে ভরপুর ছিল দু’জন।” স্যাভোয়ের প্রতিবেশী হওয়ার সূত্রে দীর্ঘদিন ধরেই দুই ভাইকে চিনতেন ডিয়ান। তাদের এ রকম ভয়াবহ মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি। ঠিক নিউ ব্রুনসউইকের বাকি প্রায় সাড়ে সাত হাজার বাসিন্দাদের মতোই।
পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। উঠছে নানা রকম প্রশ্নও। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসা বাকি। অর্থাৎ পুরো ছবিটা পরিষ্কার হতে এখনও লাগবে বেশ কিছুটা সময়।
যদিও নিউ ব্রুনসউইকের বাসিন্দাদের কাছে ছবিটা এখনই পরিষ্কার। পর্দার ‘অ্যানাকোন্ডা’র বীভৎস হামলা তাঁরা আগেও দেখেছেন। শিউরে উঠেছেন ‘স্নেকস অন আ প্লেন’ ছবিতে অগুনতি সাপের কাণ্ডকারখানা দেখে।
এ বার বাস্তব জীবনে ‘জড়িয়েছে’ অজগর। নাগ-পাশের আতঙ্ক থেকে তাই মুক্তির উপায় খুঁজছেন তাঁরা। |