পাত্র-পাত্রী দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক। কিন্তু বিয়েতে মত ছিল না মেয়ের বাড়ির। পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে ওই তরুণী তো ফ্যাসাদে পড়েছেনই। নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন তরুণটিও। মেয়ের বাপের বাড়ির লোকজন তাঁদের বিরুদ্ধে চুরির নালিশ ঠুকে বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর করছেন বলে অভিযোগ। আর আদালতে কনের বাড়ির অভিযোগ, তাদের মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে।
ওই তরুণ দম্পতির অভিযোগ, পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও সাহায্য মিলছে না। পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হচ্ছে। ওই দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক বলেই তাঁদের পারিবারিক বিষয়ে এখনও কোনও রকম হস্তক্ষেপ করা হয়নি।
পুলিশি সূত্রের খবর, এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর গেটের কাছে পুলিন পল্লির বাসিন্দা মনামি ঘোষ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন দমদম নাগেরবাজারের বাসিন্দা আশিস মণ্ডলকে। মনামির বাবা গৌতম ঘোষ ব্যঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসার। মনামির স্বামী আশিস দমদমে বৈদ্যুতিক সামগ্রীর ঠিকাদার। কিন্তু বিয়েতে আপত্তি কেন?
মনামি বলেন, “মূলত আর্থিক বৈষম্যের জন্যই মা-বাবা আমাদের বিয়েটা মেনে নিতে পারেননি।” আশিস ও মনামি জানান, বাড়ির অমতেই তাঁরা ১৫ ডিসেম্বর হাওড়ার আমতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আনুষ্ঠানিক বিয়ে করেন। ১২ জানুয়ারি রেজিস্ট্রি বিয়ে করেন হাবরায়। তার দু’দিন আগেই অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি মনামির বাপের বাড়ির তরফ থেকে ৬০ ভরি সোনা চুরি করে মেয়ে চলে গিয়েছে বলে দমদম থানায় অভিযোগ করা হয়। মনামি জানান, পুলিশ তাঁদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে চুরির কোনও তদন্তই তারা করেনি। মনামির অভিযোগ, “আমার স্বামীকে বারবার হুমকি দেওয়ার কথা পুলিশকে জানিয়েও ফল হয়নি।” অভিযোগ, গত ৬ ফেব্রুয়ারি মনামির শ্বশুরবাড়িতে কিছু লোক চড়াও হয়ে তাঁর স্বামীকে মারধর করেন। আর জি কর হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসাও হয়।
মারধরের ঘটনার পর থেকে তাঁরা বেশ কিছু দিন নাগেরবাজারের বাড়িতে থাকতে ভরসা পাননি বলে জানান আশিস। তাঁরা কলকাতায় বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আশিস বলেন, “আমরা দমদম থানায় গিয়ে সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু পাইনি। চুরির অভিযোগ যে মিথ্যা, সেটাও গত সাত মাসে প্রমাণিত না-হওয়ায় আমরা মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ি। কাজকর্মও করতে পারছিলাম না।”
১৫ মে মনামির বাপের বাড়ির তরফে ব্যারাকপুর আদালতে তাদের মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রি সার্টিফিকেট জাল বলে অভিযোগ করে জানানো হয়, মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। আদালত দমদম থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পুলিশ তদন্তের জন্য ফের আশিসের বাড়িতে যায়।
মনামির অভিযোগ, “পুলিশ অপহরণের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দিল। অথচ আমার স্বামীকে যে মারধর করা হয়েছে, তার তদন্ত আদৌ এগোল না। আমি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাগেরবাজারের বাড়িতে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।”
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “আমরা ওই তরুণী এবং তাঁর বাপের বাড়ি, দু’পক্ষের অভিযোগেরই তদন্ত করছি। পুলিশ ওই দম্পতির নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও গাফিলতি করেনি। তবে ওই দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক বলে তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।”
এই বিষয়ে মানমির মা গৌরী ঘোষকে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, “যা বলার পুলিশকে বলেছি। এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।” |