পাহাড়ে অশান্তি চলছে। তার জেরে পুজোর মাস অক্টোবরে দার্জিলিং-কালিম্পঙে সরকারি ট্যুরিস্ট লজগুলির বুকিং বাতিল হলে পর্যটকদের জন্য ডুয়ার্সে বিকল্প বন্দোবস্ত রাখবে রাজ্য পর্যটন দফতর।
বুকিং বাতিল না-করে পাহাড়ের বদলে ডুয়ার্সে বিকল্প বন্দোবস্তের উদ্যোগ এই প্রথম। এত দিন এমন পরিস্থিতিতে বুকিং বাতিল হলে পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হত পর্যটকদের। এ দিকে, লোকসানের বোঝা কমাতে পর্যটন দফতরের কয়েকটি ট্যুরিস্ট লজ চালানোর দায়িত্ব চুক্তির ভিত্তিতে বেসরকারি হাতে দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে বলে পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী মঙ্গলবার জানান। রাজ্যে পর্যটন দফতরের ২৫টি ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি লোকসানে চলছে।
লোকসানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ের বর্তমান অবস্থা। দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পঙে মোট চারটি ট্যুরিস্ট লজ আছে পর্যটন দফতরের। পাহাড় ফের অশান্ত হয়ে ওঠায় এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা অনির্দিষ্ট কালের বন্ধ ডাকায় ওই সব লজের অগস্টের বুকিং বাতিল করে পর্যটকদের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে পর্যটন দফতর। সেপ্টেম্বরের বুকিংও বাতিল করতে চান বলে জানিয়েছেন বহু পর্যটক। তবে অক্টোবরে অর্থাৎ শারদোৎসবের মাসে যাঁরা পাহাড়ের ওই তিন জায়গার সরকারি লজে ঘর বুক করেছেন, তাঁদের বুকিং পর্যটন দফতর এখনই বাতিল করছে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান পর্যটন দফতরের কর্তারা।
পর্যটনমন্ত্রী বলেন, “মোর্চার আন্দোলনকারীরা জোর করে বিভিন্ন লজ থেকে পর্যটকদের বার করে দিয়েছে। আন্দোলনের জেরে শিলিগুড়ির সরকারি লজেও পর্যটকের সংখ্যা কমে গিয়েছে। পর্যটকদের একটা বিরাট অংশ দার্জিলিঙে না-গিয়ে সিকিমে চলে যাচ্ছেন।”
এই অবস্থায় পুজোর বুকিং এখনই বাতিল করা হচ্ছে না বলে জানান পর্যটন দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভীষ্মদেব দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “শারদোৎসবের আগে দার্জিলিঙের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশা করছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিকল্প ব্যবস্থাও ভাবা হয়েছে।” পর্যটন দফতরের কর্তারা জানান, বিকল্প মানে ডুয়ার্সে থাকার ব্যবস্থা করা হবে পর্যটকদের জন্য। কিন্তু ডুয়ার্সে সব সরকারি লজ ও বাংলোর প্রায় সমস্ত ঘরের অক্টোবরের বুকিং তো জুলাইয়েই সেরে ফেলেছেন পর্যটকেরা। সে-ক্ষেত্রে পুজোয় পাহাড়ে সরকারি লজগুলিতে বুকিং বাতিল হলে সেই সব পর্যটক ডুয়ার্সে থাকবেন কোথায়?
পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়াঙে তাদের চারটি লজে ৬০টিরও বেশি ঘর আছে। ডুয়ার্সে বিকল্প বন্দোবস্ত করতে হলে সমসংখ্যক ঘরের ব্যবস্থা করতে হবে। ডুয়ার্সে মূর্তি নদীর ধারে পর্যটন দফতরের ২০টি কটেজ এক রকম তৈরি, শুধু আসবাবপত্র ঢোকা বাকি। অক্টোবরের আগেই ওই ২০টি কটেজ পুরোদস্তুর চালু করা হবে বলে দফতরের এক কর্তা জানান। ওই এলাকার লাটাগুড়িতে কিছু বেসরকারি রিসর্টের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে পর্যটন দফতর। পর্যটকেরা ঘর পাবেন সেখানেও। প্রয়োজনে আরও কয়েকটি রিসর্টের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা হবে। জলদাপাড়াতেও কয়েকটি বেসরকারি রিসর্টের সঙ্গে প্রয়োজনে একই রকম উদ্যোগে সামিল হবে পর্যটন দফতর।
যাঁরা পাহাড়ের বিকল্প হিসেবে পুজোর মাসে ডুয়ার্সে যেতে চাইবেন না, তাঁদের কী হবে?
ওই সব পর্যটকের বুকিংয়ের পুরো টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পর্যটন দফতর। |