|
|
|
|
আনন্দplus এক্সক্লুসিভ |
মিসেস ‘স্টাইলিস্ট’ সেন
জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসে মুনমুন সেন এ বার নতুন বাংলা ছবির স্টাইলিস্ট।
স্টাইলের বর্ণপরিচয় শিখলেন কী করে? লিখছেন ইন্দ্রনীল রায় |
নিজের সময় দুনিয়া কাঁপানো কোনও ক্রিকেটার যখন ২০১৩-তেও নেটের পাশে এসে দাঁড়ান, দর্শক থেকে মিডিয়া কেমন যেন নড়েচড়ে বসেন।
স্টান্স বদল করা থেকে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কী টিপস দিলেন সেটাই পরের দিন খবরের কাগজের শিরোনাম হয়।
২০১৩তে মুনমুন সেনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
হ্যাঁ, তিনি কামব্যাক করছেন। অভিনেত্রী হিসেবে নয়, সম্পূর্ণ অন্য একটি পেশায়।
কলকাতা তথা ভারতের অন্যতম স্টাইলিশ অভিনেত্রী এ বার নিজেই স্টাইলিস্ট। পরিচালক হিসেবে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম ছবির জন্যে নিজে থেকেই স্টাইলিস্ট হতে চেয়েছেন। চূর্ণী ছাড়াও তিনি করছেন শাশ্বত ও রাইমার স্টাইলিং।
রবিবার রাতে ব্যাংকক থেকে ফিরেছেন, সোমবার সন্ধ্যাবেলা যখন তাঁর বাড়ি গেলাম তখন তিনি পার্লারে। দশ মিনিট পরে ঢুকেই চা অর্ডার করলেন। ব্যাংকক থেকে নিয়ে এসেছেন ক্রিম রোল। সেই ক্রিম রোল অফার করেই শুরু হল আড্ডা।
স্টাইলিং নিয়ে কথা উঠতেই তিনি বললেন, “ব্যাংকক থেকে উইগ কিনে এনেছি। রাইমার জন্য ওখানকার একটা ট্রাইবাল ব্যাগ কিনেছি। নিজের কিছু টাঙ্গাইল শাড়ি দেব রাইমাকে এই ছবিতে। আর ব্যাংককে আমি তো টুকটুক চড়ে ঘুরে বেড়াই আর শপিং করি,” হাসতে হাসতে বলেন তিনি। ব্যাংকক থেকে অনেক ছোট ছোট অ্যকসেসারিস কিনে এনেছেন তিনি।
মা যখন এ সব কথা বলছেন তখন পাশের সোফায় বসে আপেল খাচ্ছেন রাইমা। হাসতে হাসতে বললেন, “মা ইজ ভেরি সিনসিয়ার। এক বার যখন কাজে ঢুকে গেছেন তখন ওঁর কনসেনট্রেশন সাঙ্ঘাতিক।” |
অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (আই ফোন) অথবা গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড) থেকে ABP AR Appটি
ডাউনলোড করে উপরের ছবিটি স্ক্যান করুন। আর দেখে নিন মুনমুন সেন-এর ফ্যাশন ট্রেন্ড |
মুনমুন সেনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় স্টাইলিং সম্পর্কে তাঁর ধ্যান-ধারণা একেবারেই কনভেনশনাল নয়।
“আপনি জানেন আমার সবচেয়ে প্রিয় শাড়ি কী? টাঙ্গাইল। টাঙ্গাইলের ওপর কোনও শাড়ি হয় না। আমি তো রাইমাদের সব সময় টাঙ্গাইল পরতে বলি। বাংলার অত ভাল স্টাইল স্টেটমেন্ট আর কিছু হতে পারে না। আর তা ছাড়া টাঙ্গাইল শাড়ি না কিনলে তাঁতিদের সংসার চলবে কী ভাবে বলুন? এত দিন পরে আমি বুঝেছি মা-বাবা হিসেবে আমরা যাই টাকা উপার্জন করি সেটা ছেলেমেয়েদের জন্য। তো আমরা টাঙ্গাইল না কিনলে তাঁতিদের ছেলেমেয়েদের কী হবে?” নিজস্ব ভঙ্গিতে বলেন তিনি।
কিন্তু স্টাইলিস্ট হওয়াটা সুচিত্রা তনয়ার মাথায় এল কী ভাবে?
চা খেতে খেতে তিনি বললেন “আমার কিন্তু স্টাইলিস্ট হওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না। রাইমার সঙ্গে মিটিং করতেই চূর্ণী এসেছিল বাড়িতে। তখন আমি নিজেই বলি এই ছবিটার স্টাইলিস্ট আমি হতে পারি? চূর্ণী সঙ্গে সঙ্গে বলে, ইট উড বি এ গ্রেট অনার। ব্যস তার পর থেকেই কাজ শুরু করে দিলাম। চূর্ণী নিজেও স্টাইলিশ, তাই ওর সঙ্গে ওয়েভ লেংথটা ম্যাচ করে আমার।”
সত্যি ২০১৩-র মুনমুন সেনের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, ইমেজটা অন্য রকম হলেও বাঙালিয়ানা তাঁর পরতে পরতে।
“আমি একেবারে বাঙালি। সব বাঙালি মায়ের মতো মেয়েরা কী পরবে তা নিয়ে আমি দারুণ সচেতন। ভীষণ ফিনিকি,” বলেন তিনি।
শুধু কি স্টাইল নিয়ে ফিনিকি? নাকি সব ব্যাপারেই ফিনিকি?
প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেন রাইমা। মুনমুন বলেন, “সব ব্যাপারে ফিনিকি। আমি ভীষণ শুচিবাইগ্রস্ত। ডিনারের আগে দশ বার হাত ধুই।
তা হলেই বুঝতে পারছেন কতটা ফিনিকি।”
তাঁর স্টাইলিস্ট হওয়ার খবর পেয়ে পুরো ইন্ডাস্ট্রি যে ঝাঁপিয়ে পড়বে সে কথা কি তিনি ভেবেছেন?
“এটা ব্যাতিক্রম। আমি বাবা সবার স্টাইলিং করতে পারব না। একটা প্রিটি হিরোইন গাছের পাশে নাচবে, তার স্টাইলিং করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়,” সোজাসুজি বলেন তিনি। ছেলেদের স্টাইলিং করবেন? যেমন ধরুন দেবের?
“না, ছেলেদের স্টাইলিং আমি পারব না। হাবি ইজ বেস্ট ফর দ্যাট। আর দেবের তো স্টাইলিং দরকার আছে বলে মনে হয় না। হি ড্রেসেস ওয়েল,” বলেন মুনমুন।
কিন্তু কাল যদি অপর্ণা সেন আপনাকে তাঁর ছবির জন্য স্টাইলিং করতে বলেন, তা হলে করবেন?
“ও দ্যাট উড বি গ্রেট। খুব খুশি হব যদি অপর্ণা সেনের ছবির স্টাইলিংটা করি। উড লভ টু ডু দ্যাট,” বলেন সুচিত্রা কন্যা।
২০১৩-র মুনমুন কিন্তু স্টাইলিং করেই থেমে থাকতে চান না। তাঁর আর একটা স্বপ্ন রয়েছে।
“আমি একটা ছোট্ট রেস্তোরাঁ খুলতে চাই। আ কফি শপ কাম আর্ট গ্যালারি। পৃথিবীর বহু আর্টিস্ট আমার বন্ধু। তাঁদের কাজ ডিসপ্লে করা থাকবে। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। ওটা আমি রিয়ার সঙ্গে করতে চাই। রিয়া ইজ এ গ্রেট কুক। রাইমা কিছু রাঁধতে জানে না। তবে আমার একটা শর্ত আছে। কফি শপ খুললে সেটা হবে গড়িয়াহাট অঞ্চলে,” চুল ঠিক করতে করতে বলেন তিনি। |
|
কিন্তু হঠাৎ গড়িয়াহাট কেন? আলিপুর, কী ক্যামাক স্ট্রিট কী সল্ট লেক কী দোষ করল?
“ধুর আমি তো বাঙালি। আজকেও বাঙালিদের প্রিয় জায়গা গড়িয়াহাট। ওখানেই বাঙালিরা সব চেয়ে স্বচ্ছন্দ। আমি বাংলা ছবি করে বড় হয়েছি। আমার মা বাংলা ছবি করেই সুচিত্রা সেন হয়েছেন। তা হলে কফি শপ আমি বাঙালিদের প্রিয় জায়গা ছেড়ে অন্য কোথাও খুলতে যাব কেন?” চমকে দিয়ে উত্তর দেন তিনি।
কিন্তু এত সব কথার মধ্যে নিজেই নিজেই রিয়া-রাইমার স্টাইল স্টেটমেন্টেরও সমালোচনা করেন। “রিয়া-রাইমা ভীষণ এক্সপেনসিভ জিনিস কেনে। আমি কোনও দিন ষাট হাজার টাকার ব্যাগ কিনব না। কেউ গিফট দিল, সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমার ভ্যালু সিস্টেম বলে অত টাকা দিয়ে ব্যাগ কেনা আমার কাছে টাকা নষ্ট করা ছাড়া কিছু নয়,” মেয়ের সামনেই বলেন তিনি।
ইনফ্যাক্ট ব্র্যান্ডেড জিনিস তাঁর কতটা অপছন্দ তাও সরাসরি বলেন তিনি।
“লোকে আমাকে স্টাইলিশ বলে কিন্তু ব্র্যান্ডেড জিনিস প্রায় ব্যবহারই করি না। আমার কাছে রাস্তার ছোট জিনিসও ভীষণ স্টাইলিশ। লোক দেখাতে আমি ব্র্যান্ডেড জিনিস কিনতে পারব না। আর কী জানেন ছোট ছোট জিনিস বুঝিয়ে দেবে আপনি কতটা স্টাইলিশ। যেমন ধরুন আপনার জুতো। আপনি কী রকম জুতো পরেন সেটাই বুঝিয়ে দেবে আপনি মানুষটা কেমন। যে সত্যিকারের স্টাইলিশ, সে যখন বাড়িতে ঢুকে বাইরের জুতো ছেড়ে বাড়ির চটিটা পরবে সেই চটিতেও স্টাইল থাকে,” সাফ উত্তর তাঁর।
বালিগঞ্জের এই বাড়িতে আসলে যাঁর অদৃশ্য উপস্থিতি সর্বক্ষণ রয়েছে তাঁর কথা না জিজ্ঞেস করলে কি আড্ডা সম্পূর্ণ হয়?
সেই মতোই জিজ্ঞেস করি সুচিত্রা সেনের কথা। এই যে কামব্যাক করছেন তা নিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা হয়েছে?
“মায়ের সঙ্গে কথা বলিনি। মা এ সব নিয়ে আর ইন্টারেস্টেড বলে তো মনে হয় না। এটুকু বলতে পারি, আমার যত স্টাইল
মিসেস সেন। |
সেরা পাঁচ |
মা
আমার ওপর মায়ের স্টাইল স্টেটমেন্টের প্রভাব খুব বেশি। মায়ের মেক আপ, শাড়ি পরার ধরন, মায়ের সেই নেটের শাড়ি, সাটিনের পেটিকোট, মায়ের জুতো অত স্টাইলিশ আমি আর কাউকে দেখিনি। সেদিন রিয়া আমাকে একটা ফেরাগামোর জুতো দেখাতে নিয়ে এসেছিল। আমি দেখেই বলেছিলাম এক্স্যাক্টলি এই ডিজাইনের জুতো মা ব্যবহার করত। স্টাইলিংয়ে মা আলটিমেট |
গায়ত্রী দেবী
গায়ত্রী দেবীকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। অত ক্যাজুয়াল স্টাইলিং অন্য কাউকে করতে দেখিনি। একটা শিফন শাড়ি আর মিনিমাম গয়নাতেই গায়ত্রী দেবী ওয়াজ আ হেড টার্নার। উনি একটা কথা বারবার বলতেন, স্কিন যদি ভাল থাকে তা হলে মেক আপ কোরো না। আজও ওঁর উপদেশ মেনে চলি |
জ্যাকলিন কেনেডি
জ্যাকলিন কেনেডি আমার দেখা অন্যতম স্টাইলিশ লেডি। জ্যাকি কেনেডির জ্যাকেট, জুতো সব সময় পারফেক্টলি ম্যাচড্ হত। এমনকী জন এফ কেনেডির ফিউনারেলে হার স্টাইল স্টেটমেন্ট ওয়াজ একস্ট্রা অর্ডিনারি |
রিতু কুমার
আমি ওঁর ব্যক্তিগত স্টাইল স্টেটমেন্টের কথা বলছি না। আমার কাছে রিতু কুমার স্টাইলিশ কারণ, উনি ভারতীয় ফ্যাশনের সংজ্ঞাটাই পালটে দিয়েছেন। রিতু রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন বলেই সব্যসাচী, অনামিকা খন্না এত রকম কাজ করতে পেরেছে |
সিমি গারেওয়াল
সিমি দুর্দান্ত স্টাইলিশ। ওর চুল, ওর গ্রুমিং, ওর মেক আপ করার ধরন আমার কাছে দারুণ প্রিয় |
|
|
|
|
|
|