ডিআরএস এখন
ভিআরএস নিক
ত দিন যাচ্ছে ততই ডিআরএস (ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম) নিয়ে ভারতের আপত্তির ব্যাপারটা সঠিক প্রমাণিত হচ্ছে। ডিআরএসের ভাবনাটাই চূড়ান্ত হাস্যকর। সমস্যার সমাধান করার বদলে ডিআরএস বরং অহেতুক বিতর্কই বেশি বাঁধাচ্ছে।
আম্পায়ারিংয়ের ভুলভ্রান্তি যতটা সম্ভব কমানোর উদ্দেশ্যে দু’হাজার ছয়ে আইসিসি ডিআরএস প্রথা চালুর চেষ্টা করে। যেখানে মাঠের আম্পায়ারের দেওয়া আউটের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাটসম্যান কিংবা নট আউটের সিদ্ধান্তকে ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক রিভিউ চাইতে পারে। তখন মাঠের আম্পায়ার তৃতীয় আম্পায়ারের কাছে ওই সিদ্ধান্তটি প্রযুক্তির সাহায্যে পুনর্বিবেচনা করার জন্য পাঠায়। যা তিন রকম প্রযুক্তি হক আই (বলের লাইন-লেংথ পরীক্ষার জন্য), হট স্পট (ব্যাট-বলের ঘর্ষণজনিত তাপে উৎপন্ন ছবি) ও স্নিকোমিটার (ব্যাট-বলের শব্দের রেখচিত্র)-এর সাহায্যে তৃতীয় আম্পায়ার রিভিউ করে থাকে।
সৌভাগ্যক্রমে ডিআরএস নিয়ে নিজেদের অবস্থান চূড়ান্ত করার আগে বিসিসিআই কয়েক জন আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির মতামত চেয়েছিল। আমরা আইসিসি-র প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলাম মূলত তিনটে কারণে।
এক) ক্রিকেটে একই জায়গায় পিচ পড়া বল সব সময় যে একই আচরণ করবে তার কোনও মানে নেই। কারণ, একই জায়গায় পিচ পড়া বলেরও বাউন্স ও মুভমেন্ট আলাদা-আলাদা হতে পারে। সে জন্য হক আই বলের যে বাউন্স আর লাইন নির্ধারণ করে সেটা পুরোপুরি নিখুঁত নয়।
দুই) স্নিকোমিটারের পক্ষেও বল ব্যাট স্পর্শ করেছে, না ব্যাটসম্যানের শার্ট-প্যাড ঘষে চলে গিয়েছে, দুটোকে আলাদা করে বোঝানো সম্ভব নয়।
তিন) তা ছাড়া একজন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত যদি পাল্টে দেওয়া হয়, তার অর্থ হল জনসমক্ষে সেই বিচারককে হেনস্থা করা। আর সেই চাপের মুখে আম্পায়ার আরও ভুলভাল করতে পারে।
বোর্ডকে আমরা এ-ও অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে, ডিআরএস নিয়ে আমাদের দেশের আম্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের মতামত নেওয়া হোক। যত দূর জানি সচিনও আমাদের এই ভাবনার সঙ্গে পুরো একমত। আর সেই মতোই বোর্ড আইসিসি-র ডিআরএস প্রথা ভারতের সিরিজে চালুর প্রস্তাবে ‘না’ বলে দিয়েছিল। যদিও আইসিসি-র বারবার অনুরোধ-উপরোধে বিসিসিআই শেষমেশ ২০০৮-এ ধোনির দলের শ্রীলঙ্কা সফরে কেবল পরীক্ষামূলক ভাবে ডিআরএস নিয়ম ব্যবহারে রাজি হয়। কিন্তু ওই সিরিজের আম্পায়ার ও টেকনিশিয়ানরা ডিআরএস প্রযুক্তির ব্যবহার খুব খারাপ ভাবে করেছিল। যেটা ধোনির মতো ঠান্ডা মাথার অধিনায়কের পর্যন্ত ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। তো এখন তেন্ডুলকর-ধোনির কেউই ডিআরএস না চাওয়াতে বিসিসিআই একটুও দেরি না করে আইসিসি-কে বলে দেয়, ভারত ঘরের মাঠে ও বিদেশে কোথাও ডিআরএস সম্বলিত কোনও সিরিজ খেলবে না। ডিআরএস নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের মূল আপত্তি এই সিস্টেম সম্পূর্ণ সঠিক নয় এবং সে জন্য এটাকে পুরোপুরি বর্জন করা উচিত।
দুর্ভাগ্যবশত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অন্য দেশগুলোর মধ্যে হওয়া সিরিজে ডিআরএস ব্যবহার হচ্ছে। তবে এখন অন্য দেশগুলোরও ক্রমশ বোধগম্য হচ্ছে যে, ডিআরএস নিয়ে ভারত একেবারে ঠিক জায়গায় কোপটা মেরেছে। চলতি অ্যাসেজ সিরিজে অসংখ্য আম্পায়ারিং সিদ্ধান্ত ডিআরএসের অন্ধকার দিকটা দেখিয়ে দিয়েছে। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া, দু’টো দলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট বোর্ড, দু’তরফ থেকেই এর বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠেছে। তবে এখনও কেউ স্বীকার করছে না যে, ডিআরএস নিয়ে ভারতের সঙ্গে একমত না হয়ে ওরা ভুল করেছে।
ঘটনাচক্রে যে লোকটা অনেক বছর যাবত মনেপ্রাণে ডিআরএসের সমর্থক, সেই সাইমন টফেল ইদানীং এই নিয়মের জয়গান করার ব্যাপারে কিছুটা পিছিয়ে এসেছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা আম্পায়ারও মত বদল করে বলেছে, ডিআরএস পুরোপুরি নিখুঁত নয়। আর ঠিক এটাই ভারত আগাগোড়া বলার চেষ্টা করে এসেছে বিশ্ব ক্রিকেটকে।
ডিআরএস পুরোপুরি নিখুঁত নয় বলার অর্থ বলের লাইন পরীক্ষার যে প্রযুক্তি, সেই হক আই জিনিসটা বোগাস। ক্রিকেটটা খেলেছে এমন যে কেউই জানে যে, বলের বাউন্স কখনও একই রকম হতে পারে না। বাউন্সের হেরফেরের জন্য আলাদা দিনও লাগে না, একই দিনে সেটা হতে পারে। তা ছাড়া কারও পক্ষেই একটা ক্রিকেট বলের মুভমেন্ট সম্পর্কে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। একটা ডেলিভারি ভেতরে সুইং করে ঢোকার পরেও বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তির পক্ষে কি সম্ভব সেটা আগাম বলে দেওয়া? কখনওই নয়। আর হট স্পট নিয়ে তো খোদ আইসিসি-ই বলেছে, ব্যাপারটা ৯৫ শতাংশ নিখুঁত। বাকি পাঁচ শতাংশ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। যার অর্থ, ভারতের দাবি মতোই পুরোপুরি নিখুঁত নয়।
এমনকী রেফারেল ও রিভিউএই দুটো সিস্টেম ক্রিকেট দর্শকের কাছে সব সময় পরিষ্কার নয়। রেফারেল হল, যখন মাঠের আম্পায়ার তার সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে সেটার ব্যাপারে তৃতীয় আম্পায়ারের মতামত চায়। হিট উইকেট, স্টাম্পিং, রান আউট, ক্যাচ পরিষ্কার করে ধরা হয়েছে কি না, এ সব ধরনের আউটের ক্ষেত্রে টিভি রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার মাঠের আম্পায়ারকে জানায়। মাঠেই জায়ান্ট স্ক্রিনে সেটা ফুটে ওঠে। আবার নো-বল, বাম্প ক্যাচ কিংবা বল বাউন্ডারি পেরিয়েছে কি না, এই তিনটে জিনিস মাঠের আম্পায়ার তার ওয়াকি-টকির মাধ্যমে তৃতীয় আম্পায়ারের থেকে জেনে নিয়ে তার পর নিজের সিদ্ধান্ত জানায়। সেখানে ডিআরএস ব্যবহার করা হয়, মাঠের আম্পায়ার তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে।
ডিআরএস আসলে সম্পূর্ণ অন্য ব্যাপার। এটা নিয়ে ভারতের মতামত আইসিসি মন দিয়ে শুনলে ভালই হবে। নইলে যেহেতু আম্পায়াররা ক্রমাগত চাপে পড়ছে, সে কারণে আরও অনেক বিতর্ক বাঁধতে পারে। আমাদের বরং বাস্তববাদীর চোখে মেনে নেওয়া উচিত যে, আম্পায়ারিংয়ে ভুলভ্রান্তি ক্রিকেট খেলারই একটা অঙ্গ। ক্রিকেট বরাবরই মহান অনিশ্চয়তার খেলা হিসেবে বিখ্যাত। সেটাই থাক না!

হক আই

হক আই বোগাস। বলের বাউন্স কখনও এক হয় না। একটা ডেলিভারি ভেতরে
সুইং করে ঢোকার পরেও বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তি সেটা আগাম বলতে পারে?
হটস্পট

হটস্পট নিয়ে আইসিসি-ই বলেছে, ব্যাপারটা ৯৫ শতাংশ নিখুঁত। বাকি পাঁচ
শতাংশ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। যার অর্থ, ভারতের দাবি মতোই পুরোপুরি নিখুঁত নয়।
স্নিকোমিটার

স্নিকোমিটারের পক্ষেও বল ব্যাট স্পর্শ করেছে, না ব্যাটসম্যানের শার্ট-প্যাড ঘষে
চলে গিয়েছে, দুটোকে আলাদা করে বোঝানো সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.