পোষ্য হয়েও সঙ্গিহীন, রাতুল-বাবুর মন খারাপ
রাতুল আর বাবুর কোনও সঙ্গী নেই। নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে কাটাতে বড্ড মনমরা হয়ে পড়েছে ওরা। এই একাকিত্ব ওদের আয়ু কমিয়ে দিতে পারে। তাই রাতুল ও বাবুর সঙ্গিনী খুঁজতে আলিপুর চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষ হন্যে।
ঢাকঢোল পিটিয়ে শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে গত রবিবার চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের দত্তক নেওয়ার অনুষ্ঠান হল। সেখানে রাতুল, বাবুরা অভিভাবক পেল বটে, কিন্তু ওদের একাকিত্ব কাটানোর সুরাহা হল না। বছরে দেড় লক্ষ টাকার চুক্তিতে রাতুল এবং বাবুকে পোষ্য দেওয়া হল। কিন্তু একাকিত্ব না কাটলে ভাল খাবার দিয়েও রাতুল বা বাবুকে চনমনে রাখা যাবে না বলে জানান পশু চিকিৎসকেরা। চিড়িয়াখানার এক পশু বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, “সুস্থ ভাবে ওদের বাঁচিয়ে রাখবে সঙ্গিনীরাই।”
রাতুল আলিপুরের একমাত্র একশৃঙ্গ গণ্ডার। বাবু একমাত্র শিম্পাঞ্জি। রাতুল বরাবরই একা থাকলেও বাবু কিন্তু তিন বছর আগেও নিঃসঙ্গ ছিল না। ওর সঙ্গে কখনও থাকত জেসি, কখনও রানি। বয়সে ছোট তুজো ছিল বাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু, ২০১০ থেকে ২০১১-র ভিতরে একে একে মারা যায় জেসি, তুজো ও রানি। ২২ বছরের জেসি মারা যায় গাছ থেকে পড়ে। অন্য দু’টি শিম্পাঞ্জির মৃত্যু হয় অসুস্থ হয়ে। রানি মারা যাওয়ার পর থেকেই বাবু নিঃসঙ্গ। দু’বছরের চেষ্টাতেও তার জন্য পাত্রী জোগাড় করা যায়নি।
মন্দ নয়, পাত্র ভাল
নাম কোন প্রাণী বয়স চিড়িয়াখানায় কত দিন আগের সঙ্গিনী
রাতুল একশৃঙ্গ গণ্ডার ২১ বছর ১৭ বছর প্রথম থেকেই একা
বাবু শিম্পাঞ্জি ২২ বছর ৭ বছর রানি ও জেসি
নেই জাগুয়ার ১৮ বছর এখানেই জন্ম প্রথম থেকেই সঙ্গীহীন
নেই লাল ক্যাঙারু ১ বছর এখানেই জন্ম এখনও সঙ্গী পায়নি


শুধু এরাই নয়, চিড়িয়াখানায় সঙ্গিহীন আরও তিনটি প্রাণীও পশুপ্রেমীদের চিন্তার কারণ। চেক প্রজাতন্ত্র থেকে বছর দুই আগে এসেছিল চারটি লাল ক্যাঙারু। এক বছরের মধ্যে সব ক’টিই মারা যায়। কারণ, এত দূর সফরের ধকল তারা নিতে পারেনি। ওই চারটির মধ্যে একটি স্ত্রী ক্যাঙারু গর্ভবতী ছিল। গত বছর সে একটি শাবকের জন্ম দেওয়ার কিছু দিন পরে মারা যায়। ওই লাল ক্যাঙারুটিই আলিপুর চিড়িয়াখানায় ক্যাঙারুকুলের একমাত্র প্রতিনিধি। রবিবার ওই পুরুষ ক্যাঙারুটি অভিভাবক পেলেও সঙ্গী জোটেনি তার। সঙ্গী নেই একমাত্র জাগুয়ারটির। এই চিড়িয়াখানাতেই ১৮ বছর আগে জন্মেছিল সেটি। তখন আলিপুর চিড়িয়াখানায় জাগুয়ারের সফল প্রজনন হত। জাগুয়ারের বদলে অন্য প্রাণীও আনা হত চিড়িয়াখানায়। সেখানেই এখন জাগুয়ার বাড়ন্ত। প্রথম থেকেই সঙ্গীহীন অবস্থায় রয়েছে ওই পুরুষ জাগুয়ারটি। সঙ্গিহীন একটি উটপাখিও। একা থাকায় সে ক্রমেই মেজাজ হারিয়ে ফেলছে। এক কর্মীর কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে জল-হাওয়ায় এখন এমু-র সফল প্রজনন হচ্ছে। চিড়িয়াখানায় উটপাখির প্রজননও সম্ভব। কিন্তু সমস্যা সঙ্গী জোগাড় করার প্রক্রিয়ায়। দেশের কোনও চিড়িয়াখানাতেই অতিরিক্ত উটপাখি নেই। আর এই মুহূর্তে বিদেশ থেকেও আনা যাচ্ছে না।”
জিরাফ প্রজননে আলিপুর এখন বিশ্বের অন্যতম সফল চিড়িয়াখানা। প্রতি বছরই এখানে জিরাফের বাচ্চা হচ্ছে। এই মুহূর্তে চিড়িয়াখানায় ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটি জিরাফ আছে। সাম্প্রতিক অতীতে বিভিন্ন চিড়িয়াখানাকে একটি বা এক জোড়া জিরাফ দিয়ে অন্য ধরনের প্রাণী নিয়ে এসেছে আলিপুর চিড়িয়াখানা। তা হলে জিরাফ দিয়ে রাতুল বা বাবুর সঙ্গী আনা হচ্ছে না কেন? চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বিনোদকুমার যাদব বলেন, “রাতুলের পরে আর কোনও গণ্ডারই আসেনি। কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা-কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু অসমের কোনও চিড়িয়াখানাই গণ্ডার পাঠাতে রাজি নয়।”
তা হলে কি বাকি জীবনটা একাকিত্বেই কাটাতে হবে রাতুলকে? উত্তর নেই অধিকর্তার কাছে।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.