শেষ পর্যন্ত নির্বাসন ঠেকানো গেল ওদের দু’জনের!
আলিপুর চিড়িয়াখানায় ওদের সংখ্যা আসলে তিন। তিন জনকে নির্বাসনে পাঠানোর জন্যই চিঠি এসে গিয়েছিল দিল্লি থেকে। অনেক কাকুতিমিনতি করে শেষ পর্যন্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ওদের দু’জনকে রাখতে পেরেছেন। তবে অন্য এক জনকে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে জলদাপাড়ায়। চিড়িয়াখানা সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে রবিবার।
কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছিল, চিড়িয়াখানার বদ্ধ পরিবেশে আর হাতি রাখা চলবে না। আলিপুর চিড়িয়াখানায় যে তিনটি হাতি রয়েছে, তাদের জলদাপাড়া কিংবা উত্তরবঙ্গের অন্যত্র পাঠিয়ে দিতে হবে। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। চিড়িয়াখানায় যে সব পশুপাখি দেখতে সব থেকে বেশি ভিড় হয়, তার মধ্যে হাতি অন্যতম। ছোটদের কাছে জনপ্রিয়তায় এক নম্বর প্রাণি হাতি। তাই হাতি না থাকলে চিড়িয়াখানার আকর্ষণ কমে যাবে। দিল্লিকে বারবার চিঠি দিয়ে জানানোর পরে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এক প্রতিনিধিদল পাঠায় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। চিড়িয়াখানার সূত্রটি বলেন, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল সব দেখেশুনে জানিয়ে গিয়েছে, শর্তাধীনে আরও কিছু দিন হাতি রাখা যেতে পারে আলিপুর চিড়িয়াখানায়।
কী সেই শর্ত? কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছে তিনটি নয়, দু’টি হাতি থাকতে পারবে আলিপুর চিড়িয়াখানায়। আর বর্তমানে যে এলাকা রয়েছে, তার থেকে আরও বেশি জায়গা দরকার। |
শনিবার শহরের একটি পাঁচতারা হোটেলে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের দত্তক প্রদান অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ চিড়িয়াখানা পর্ষদের সদস্য-সচিব ব্রিজরাজ শর্মা জানান, আলিপুরে এখন যেখানে চিতাবাঘ এবং জাগুয়ারদের থাকার জায়গা রয়েছে, তা ভেঙে দেওয়া হবে। হাতির জন্য বর্তমানে যে খোলা জায়গা রয়েছে, তা বাড়িয়ে নেওয়া হবে জিরাফের খাঁচার কাছাকাছি। তবে শেষ পর্যন্ত যে হাতিরা থেকে যাচ্ছে, তাতে যারপরনাই খুশি আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
হাতির যে কদর রয়েছে, তা বোঝা গিয়েছে পশুপাখিদের দত্তক প্রদান অনুষ্ঠানে। রাজ্যের বনকর্তারা জানালেন, চিড়িয়াখানার তিনটি হাতিকেই দত্তক নেওয়া হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে একটি নিয়েছেন অভিনেত্রী-বিধায়ক দেবশ্রী রায় (একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে)। অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তীও একটি হাতি দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনটি হাতিই তাদের অভিভাবক পেয়ে যাওয়ায় এ যাত্রা ইচ্ছেপূরণ হয়নি সব্যসাচীবাবুর। হাতির সঙ্গে বাঘও দত্তক নিয়েছেন শিল্পপতি রাধেশ্যাম অগ্রবাল এবং রাধেশ্যাম গোয়েন্কা। ক্রিকেট-কর্তা জগমোহন ডালমিয়ার মেয়ে বৈশালী একটি জাগুয়ার দত্তক নিয়েছেন। শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া, সন্দীপ ভুতোরিয়া বাঘ দত্তক নিলেও আর এক শিল্পকর্তা সঞ্জয় বুধিয়া দত্তক নিয়েছেন একশৃঙ্গ গন্ডারকে। আবার নামের সঙ্গে মিল রেখে লায়ন্স ক্লাব দত্তক নিয়েছে এক জোড়া ভারতীয় সিংহ।
তবে শুধু দত্তক নেওয়াই নয়, সন্দীপ সিংহরায় কিংবা অভি ভট্টাচার্যের মতো অনেকে আবার সন্তানের জন্মদিনে তাকে উপহার হিসেবে এই দত্তক নেওয়া প্রাণী তুলে দিয়েছেন। চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বিনোদকুমার যাদব জানালেন, এ দিন পর্যন্ত দত্তক বাবদ প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে।
বন দফতরের ভাঁড়ারে টান পড়াতেই কি নতুন আয়ের পন্থা হিসেবে দত্তক প্রথা চালু করল সরকার? বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, বন্যপ্রাণী নিয়ে জনমানসে সচেতনতা বাড়াতেই এই পদক্ষেপ। বনসচিব সুবেশ দাস আরও জানান, ঝড়খালিতে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের ১০০ একর জমি মিলেছে। সেখানে আলিপুর চিড়িয়াখানার একটি শাখা কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। মহানন্দা অভয়ারণ্যে সাফারি পার্ক গড়া নিয়ে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট গিয়েছে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের কাছে।
তবে এ সবের পাশাপাশি রাজ্য অবশ্য এখন জোর দিচ্ছে আলিপুর চিড়িয়াখানার উন্নয়নেও। ইতিমধ্যেই নতুন গেট বসেছে। এর পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়নেও টাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ান নিজের সাংসদ তহবিল থেকে ১ কোটি টাকা দিয়েছেন। এ দিন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনিও। ডেরেক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই টাকা দিতে বলেছিলেন। তবে আমি নিজেও চিড়িয়াখানা নিয়ে উৎসাহী।” |