আলিপুর চিড়িয়াখানার বাসিন্দা বাঘেদের কপাল ফিরতে চলেছে!
সাকুল্যে ওরা রয়েছে আটটি। কিন্তু তাদের পোষ্য নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই দরখাস্ত জমা পড়েছে অন্তত ৫০টি। আবেদনকারীদের মধ্যে যেমন শিল্পপতি রয়েছেন, তেমনই রয়েছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কয়েকটি স্কুলও। এ বছরে সুযোগ না পেয়ে তারা আগামী বছরের জন্য ওয়েটিং লিস্টে নিজেদের নাম তুলে রেখে দিয়েছে।
আজ, ররিবার থেকে আলিপুর চিড়িয়াখানার পশু-পাখি পোষ্য নেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার থেকে সাদা বাঘ, ভারতীয় সিংহ, গণ্ডার, জেবরারা ইতিমধ্যেই অভিভাবক পেয়ে গিয়েছে বলে চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর। চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বিনোদকুমার যাদব শনিবার বলেন, “সকলেই বাঘ, সিংহ, গণ্ডার পোষ্য নিতে চাইছেন। যাঁরা এই বছর সুযোগ পেলেন না, তাঁদের আমরা আগামী বছরের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছি। কারণ, আমরা এক বছরের জন্য এখন চুক্তি পত্রে সই করাচ্ছি। ওয়েটিং লিস্টে থাকা অনেকেই আশা করছি সুযোগ পেয়ে যাবেন।”
কেবলমাত্র গত সপ্তাহে পোষ্য নেওয়ার এই পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল আলিপুর চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানার ৭৬টি পশু-পাখির বেশ কয়েকটি ইতিমধ্যে তাদের অভিভাবক পেয়ে গিয়েছে। বিনোদ যাদবের দাবি, “ইতিমধ্যেই আমরা ২৫ লক্ষ টাকা নিশ্চিত করে ফেলেছি। রবিবার থেকে সেই সংস্থাগুলির কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু হবে।”
আলিপুর চিড়িয়াখানায় এই মুহূর্তে পাঁচটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আর তিনটি সাদা বাঘ। প্রত্যেকটির বার্ষিক পোষ্য-মূল্য দেড় লক্ষ টাকা। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, এই বছরের অভিভাবক পেয়ে গিয়েছে সব বাঘই। চিড়িয়াখানায় ভারতীয় সিংহ রয়েছে দু’টি। তারাও এই বছরের অভিভাবক পেয়ে গিয়েছে। অভিভাবক পেয়ে গিয়েছে চিড়িয়াখানার একমাত্র গণ্ডার এবং একমাত্র জাগুয়ারটিও। চিড়িয়াখানায় জেবরার সংখ্যা দু’টি। তাদের পোষ্য নেওয়ার জন্যও তৈরি হয়ে গিয়েছে ওয়েটিং লিস্ট। ওয়েটিং লিস্ট তৈরি হয়েছে শিম্পাঞ্জির জন্যও। |
তবে কপাল নেহাতই খারাপ জিরাফদের। একের পর এক জিরাফের জন্ম দিয়ে আলিপুর চিড়িয়াখানা ইতিমধ্যেই অন্য চিড়িয়াখানার কাছে ইর্ষার পাত্র হয়ে গিয়েছে। চিড়িয়াখানায় এখন সাতটি জিরাফ। অভিভাবক পেয়েছে মাত্র একটি।
পাখিদের মধ্যে ময়ূরের বাজার খুব ভাল। চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা জানাচ্ছেন, ময়ূর পোষ্য নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যেই আবেদন করেছে। আবেদন জমা পড়েছে ম্যাকাও ও সারসের অভিভাবকত্বের জন্যও। তিনটি হাতির মধ্যে অভিভাবক পেয়ে গিয়েছে দু’টি।
এত কম সময়ের মধ্যে এ ভাবে যে পোষ্য নেওয়ার হিড়িক পড়ে যাবে, ভাবতেও পারেননি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। তাই হরিণ, বাঁদরের মতো প্রাণীদের জন্যও মাসিক ভিত্তিতে অভিভাবক করা যায় কি না, ভাবছেন তাঁরা। ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বলেন, “যেই পশুপ্রেমীদের সামর্থ কম, তাঁদের উৎসাহ দিতে এই মাসিক পরিকল্পনার কথা ভাবতে হচ্ছে।”
একটি হাতির জন্য বছরে চিড়িয়াখানার খরচ হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। প্রতিটি বাঘ, সিংহের জন্য খরচ সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। সেখানে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে এক একটি পশু পোষ্য নিতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কত খানি যুক্তিযুক্ত?
ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বলেন, “এই পরিকল্পনায় কতটা সাড়া পাব, তা আগে বোঝা যায়নি। এখন ঠিক করেছি, ধাপে ধাপে পোষ্য নেওয়ার টাকা বাড়ানো হবে। মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ দেখা যাচ্ছে, তাতে বাড়তি টাকা দিয়ে তাঁরা যে পোষ্য নেবেন, তা বোঝাই যাচ্ছে।” রাঁচির ওরমানঝি চিড়িয়াখানার একটি বাঘকে পোষ্য নিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু কলকাতায় এখনও ব্যক্তিগত ভাবে কোনও ক্রীড়াবিদ এগিয়ে আসেননি। চিড়িয়াখানার এক কর্তা বলেন, “আমাদের আশা, আমাদের এখানকার ক্রীড়াবিদেরাও পোষ্য নিতে এগিয়ে আসবেন।” |