বাজারের থলি হাতে বেরিয়েছিলাম। মোড়ের বাঁক ঘুরতেই মুখোমুখি সকালে যিনি খবরের কাগজ দেন তাঁর সঙ্গে। আমায় দেখে সাইকেল থেকে নেমেই পড়লেন, ‘স্যর, আপনি প্রেসিডেন্সি ছেড়ে কোথায় গেলেন তা হলে? যা-যাদবপুর? নাকি আবার বিদেশেই ফিরে যাবেন?’
ভোরবেলায় ঘুমজড়া উপস্থিতবুদ্ধি কাজ করতে একটু সময় লাগে। আমায় স্তম্ভিত দেখে একটু খোলসা করেই বললেন, ‘...আসলে কাগজে রোজই প্রায় দেখছি তো সবাই প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওরা নাকি কাউকে মাইনে-টাইনে দিতে পারছে না। আবার উপাচার্য ম্যাডামকে নাকি অবসর নিইয়ে ছাড়বে। আপনারা তো ও দিকে ভাল ছাত্রও পাচ্ছেন না। সিট-টিট ফাঁকা পড়ে আছে...।’
মাঝেমধ্যে সকালে কাগজ খুলে দেখা যায় প্রেসিডেন্সির আরও এক অধ্যাপক নাকি ‘ফুড়ুৎ’ করে অন্যত্র প্রস্থান করেছেন। এর থেকে অনেকেরই ধারণা, প্রেসিডেন্সির অধ্যাপককুল উধাও। যে ছবিটা মনে ভাসে প্রেসিডেন্সি নামক জগদ্দল টাইটানিক তুষারশৈলের ধাক্কায় বরফজলে তিল তিল করে নিমজ্জমান, আর আতঙ্কপীড়িত ছাত্র-অধ্যাপকের দল লাইফবোটে পলায়নরত। এই সব ভেবেই আমার সংবাদ-প্রবাহক সে দিন আমায় দেখে সাইকেল থেকে নেমেই পড়লেন। তাঁর উদ্বেগ, আমি লাইফবোট পেলাম তো এই মহানিষ্ক্রমণে?
কিছু দিন আগে অ্যাডমিশনের কাউন্সেলিং করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম জনমানসে এই টাইটানিক-চিত্র কতটা ব্যাপক ভাবে খোদাই হয়েছে। প্রেসিডেন্সিতে নির্বাচনী পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হয়েও রেজিস্টারে নামে লেখাবার আগে উদ্বিগ্ন ছাত্র-অভিভাবকের প্রশ্ন, আমরা যে ভর্তি হব, অধ্যাপকেরা থাকবেন তো?
বার্মিংহামের বারো বছরের বসত ছেড়ে আসার সময় বন্ধুদের হাতে পোষা কুকুর বেড়াল মুরগি তুলে দিতে অনেক কান্নাকাটি হয়েছিল। আপেল গাছের বাগানওয়ালা বাড়ি বিক্রি করে তিন হাজার বই বাক্সবন্দি করে জাহাজে চাপিয়ে এই অনির্দেশ যাত্রা, তাতে বন্ধুমহলে আমাদের মাথার ব্যামো নিয়ে জল্পনা হয়েছে। কিন্তু এই ‘বেপরোয়া বোকামি’ সত্ত্বেও আমার মাইনে যে এক-পঞ্চমাংশ হবে তা না জেনেই কি এসেছি? সহকর্মীরাও কি এত নির্বোধ নাকি যে মাইনে-টাইনে না বুঝে নিয়ে চাকরি নিয়ে বসেন? |
তবে অবশ্যই, এ চাকরি নেওয়ার আগে মাইনে ছাড়াও আমি আরও প্রশ্ন করেছিলাম। কী ভাবে নেওয়া হবে অন্য সহকর্মীদের? গত সরকারের আমলে এ রাজ্যের কলেজে, এমনকী প্রেসিডেন্সিতেও, সর্বজনবিদিত ছিল, সরকারের কাছের লোক না হলে চাকরি মেলা ভার। এ সরকারের আমলে যদি তা ঘটে, তা হলে আমি এই কাজ নিতে চাইনি। প্রেসিডেন্সির উন্নয়ন একমাত্র সম্ভব যদি শিক্ষকদের একমাত্র শিক্ষাগত মান অনুযায়ী নিযুক্ত করা হয়।
আমায় বলা হল, দেখবেন আসুন, কী ভাবে আমাদের শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। আমি দেখলাম, নির্বাচন কমিটি আনা হয়েছে রাজ্যের বাইরে থেকে, যাতে স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব ন্যূনতম হয়। পদার্থবিদ্যার কমিটিতে দেখলাম সবাই নিজের ক্ষেত্রে নামজাদা বিজ্ঞানী, কোনও সন্দেহ নেই তাঁদের কমিটমেন্ট নিয়ে। পাঁচটা পদের জন্য ছশো আবেদন, বেছে পঞ্চাশজনকে ইন্টারভিউ করা হবে দু’দিন ধরে। যেটা দেখে অবাক হলাম তা হল যে, বিদেশবাসী অনেক বাঙালি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন ভিডিয়োর মাধ্যমে। দেওয়ালে স্ক্রিনে প্রার্থীর অবয়ব, ওয়েবক্যাম-এর মাধ্যমে ইন্টারভিউ চলছে ক্যালিফর্নিয়া-অক্সফোর্ড-টোকিয়োবাসী বাঙালিদের সঙ্গে। এ দেখে আমার প্রেসিডেন্সির এই নবজাগরণের প্রক্রিয়া সম্বন্ধে অনেক দ্বিধাই ঘুচেছিল।
প্রায় ৭০০০ অ্যাপ্লিকেশন ঘেঁটে, দিনের পর দিন হাজারখানেক ইন্টারভিউয়ের পর আজ অবধি ১২০ জন অধ্যাপক যোগ দিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্সির ১৫টা বিভাগে। এর মধ্যে ১৪ জন প্রফেসর পদে নিযুক্ত হয়েছেন, তাঁদের গড় বয়স ৫৩.২ বছর। আর যে ১০৬ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট বা অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের বয়সের গড় হল ৩৬.৫ বছর। আরও ২২ জন নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছেন, আগামী কয়েক মাসেই তাঁরা এসে হাজির হবেন। আগামী বছরে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে এর ওপর আরও একশোর বেশি অধ্যাপক নিযুক্ত হবেন আশা করা যায়।
এই এক বছরে এঁদের মধ্যে আট জন চাকরি নেওয়ার পর প্রেসিডেন্সি ছেড়ে চলে গিয়েছেন নানা কারণে। কারও স্বামী-স্ত্রী বা বাচ্চার অসুবিধে হচ্ছিল, কারও বেশি মাইনের চাকরি মিলল অন্যত্র, কারও পেনশন ভাতার চিন্তা, কারও প্রমোশন না পেয়ে অভিমান। এ সব হয় না, এমন কোনও প্রতিষ্ঠান আছে কি? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে হয় না এমন? যদি না হয়, তা হলে বুঝতে হবে যে প্রেসিডেন্সিতেই এমন উৎকর্ষের অধ্যাপকেরা আসছেন যে, দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে তাঁরা কাঙ্ক্ষিত, অন্য কোথাও তাঁরা আসছেন না।
যখন প্রেসিডেন্সি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়, তখন যাঁরা অধ্যাপক ছিলেন, তাঁদের গড় বয়স ছিল প্রায় পঞ্চাশ। তাঁদের অনেককেই বদলি হয়ে চলে যেতে হয়েছে বা হচ্ছে। তাঁদের জায়গায় এসেছেন দেশের তথা বিশ্বের আনাচকানাচ থেকে তরুণ অধ্যাপকের দল। অনেকেই প্রেসিডেন্সি কলেজের অথবা কলকাতার অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনী।
ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে তো নয়ই, পৃথিবীর অন্যত্র এমন কমবয়সি ফ্যাকাল্টি আছে কি না সন্দেহ। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্সির বিস্তীর্ণ শুভাকাঙ্ক্ষী ও প্রাক্তনী মহলে দুই প্রান্তবর্তী ধারণা উৎপন্ন হয়েছে।
এক মহলের বিশ্বাস, এই নবীকরণে প্রেসিডেন্সির ভাল হতে বাধ্য। আমারও এই বিশ্বাস। অন্য মহলের ধারণা, প্রেসিডেন্সির উৎকর্ষের কারণ যে বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা, তাঁদের প্রস্থানের ফলে প্রেসিডেন্সির অবস্থা শোচনীয় হবে। ভাল শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন পক্বকেশ। যারা এই ক’দিন আগে নিজেরাই ছাত্র ছিল, তারা আবার কী পড়াবে? কয়েক জন বরেণ্য শিক্ষাব্রতী এই মত প্রকাশ করেছেন গত কয়েক মাসে। আমার বক্তব্য, প্রেসিডেন্সির অধ্যাপকমহলের এই নবীকরণের সমালোচকরা ভুলে যাচ্ছেন যে প্রেসিডেন্সি আর কলেজ থাকতে চায়নি। অন্য কিছু হতে চেয়েছে।
স্বাধীনতার পর দেশ গড়ার সময় ভারত সরকার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে একটা মৌলিক ভ্রান্তি করে বসেছিল। সরকারের উচ্চতম মহলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে বিজ্ঞান আর কলা দুই শাখাতেই গবেষণায় বিশেষজ্ঞ যাঁরা, তাঁদের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে না রেখে আলাদা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রাখা হবে। এর ফলে এই বিশেষজ্ঞরা শুধুই গবেষণা করার অনেক সময় পাবেন, ছাত্র পড়িয়ে তাঁদের সময়ের অপচয় করতে হবে না। সারা দেশে বেশ কিছু গবেষণাকেন্দ্র গড়া বা বর্ধিত করা হল সেই সময়, কিছু সরকারি অর্থে, কিছু বেসরকারি অর্থানুকূল্যে। বিজ্ঞানে যেমন টাটা ইনস্টিটিউট বা সাহা ইনস্টিটিউট, সমাজবিজ্ঞানে তেমনই টি আই এস এস বা সি এস এস এস। এর ফলে হল কী, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকের অভাবে ছাত্রদের কোনও ধারণাই হয় না, তাদের বিষয়ে তাদের শহরে বা দেশের অন্যত্র গবেষণার কী সুযোগ আছে। কলেজে তারা বি এ/এম এ করার সময় যা পড়ে, তিন, চার বা পাঁচ বছর ধরে, তার সবই পুথিগত। গবেষণার জগতে কী কাজ হচ্ছে, তা তারা জানতেই পারে না। গত পঞ্চাশ বছর ধরে এই চলেছে। আমাদের যারা সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রী, যারা গবেষণা করতে চায়, তারা তাই কলেজে কাজ শেষ হলে পরীক্ষাটরিক্ষা দিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভিড় করে। আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়েরা এত দিন তাই ভারতের এই দাক্ষিণ্যকে ধন্য ধন্য করেছে। ছাত্র তৈরি করতে হয় না তাদের, ভারতের কলেজগুলো থেকে তৈরি ছাত্র-গবেষক এসে অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কাজ করে।
এ দিকে ভারতের ইনস্টিটিউটগুলোতে যাঁরা গবেষক, তাঁরা ডক্টরেটের কাজ করাবার মতো ছাত্র পান না। কেউ কেউ বিদেশ থেকে ফেরে, তবে বেশির ভাগই থেকে যায়। তাই স্বাধীনতার পর আজ প্রায় ৭০ বছর হল, গবেষণার সব ক্ষেত্রে ভারত পিছিয়ে আমেরিকা, ইউরোপ, জাপান, চিনের থেকে। গত দশ-কুড়ি বছরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে পাঠ্য সিলেবাস ঘনঘন বদলাতে হয়, তার ওপর আজকাল জগৎ জুড়ে হাতে-কলমে পড়াশোনার চল। শিক্ষকদের গবেষণার অভিজ্ঞতা না থাকলে ছাত্রদের পূর্ণ শিক্ষা ও গবেষণার স্বাদ দেওয়া অসম্ভব। পাঠ্যক্রম স্থিতিশীল অচল হয়ে গেলে ছাত্রদের আগ্রহ চলে যায়। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, বিশেষত এ রাজ্যে, পাঠ্যসূচি পিছিয়ে পড়েছে ক্রমাগত। তার ফলে ভাল ছাত্ররা পড়াশোনা করতে আগ্রহ পাচ্ছে না। যারা পড়ছে, সেই ছাত্রদের এই রাজ্যের কলেজগুলো থেকে দেশের অন্যত্র ও বিদেশে গিয়ে তাল মিলিয়ে পড়াশোনা করতে অসুবিধে হচ্ছে।
শোনা যাচ্ছে প্রেসিডেন্সিতে নাকি ভাল ছাত্র আসছে না। গত রবিবার এম এসসি-র প্রবেশিকা পরীক্ষা হল। পদার্থবিদ্যায় ৮৩০ জন, রসায়নে ৮৯০ আর জীববিদ্যায় ৯৩০ জন ছাত্রের জন্য ঘর বার করতে ঘাম ছুটে গেল। বি এসসি-তে ৫৫ শতাংশ পেতে হয় এই পরীক্ষায় বসতে গেলে! আর বি এসসি-র তিন বছরে জি এস টি-র ইন্সপায়ার বৃত্তি পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা শতাধিক। এরা সবাই তাদের উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের ওপরের ১ শতাংশের মধ্যে আছে। এই বৃত্তিপ্রাপকের সংখ্যাও গত দুই বছরে বেড়েছে।
প্রেসিডেন্সিতে আমাদের দরকার অভিজ্ঞতাবান শিক্ষকদের পাশে পাশে নবীন গবেষকের দল, যাঁদের শিক্ষাদানের হাতেখড়ি হবে দেশের সেরা ছাত্রদের পড়াবার মাধ্যমে, আবার এই ছাত্রদের তাঁরা দেখাতে পারবেন তাঁদের গবেষণার জগৎ, যাতে ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করা যায়।
আমার পদার্থবিদ্যা বিভাগে এখন আমরা ১১ জন। প্রেসিডেন্সি ও অন্যান্য সরকারি কলেজে পড়াতেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে পাঁচ জন শ্রেষ্ঠ গবেষক-শিক্ষককে রাখা হয়েছে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ ছাড়া কলকাতার অন্য কলেজ বা গবেষণাকেন্দ্র থেকে এসেছেন দু’জন, আমি এসেছি ইংল্যান্ড থেকে, এক জন এসেছেন আমেরিকা থেকে, এক জন আয়ারল্যান্ড আর এক জন সাউথ আফ্রিকা থেকে। আমরা সবাই বাঙালি, অনেকেই প্রেসিডেন্সির প্রাক্তন ছাত্র, কেউ কেউ যাদবপুরের। আগামী তিন মাসে আসছেন আরও তিন জন। এক জন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, অন্য দু’জন আমেরিকা ও জার্মানি থেকে।
এমনি উঠে আসছে এক এক করে সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই। ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, ভূবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনেক প্রতিভাবান নবীন অধ্যাপকের বরণ হয়েছে। ধরা যাক, আমাদের নতুন জীববিদ্যা (বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস) বিভাগ। কলেজ জীবনে ছিল ছ’টা ভিন্ন বিভাগ: বটানি, জুলজি, ফিজিয়লজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি, মলিকিউলার বায়োলজি। অন্যান্য আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাঁচে এই সব বিষয়কে একত্র করে এখন এই বিভাগে ৩৭ জন অধ্যাপক। এঁদের মধ্যে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সব মিলিয়ে ৩১ জন, যাঁদের বেশির ভাগের বয়স চল্লিশের নীচে। এঁদের মধ্যে ১৪ জন অধ্যাপিকা। এঁদের অনেকেই কলকাতায় পিএইচ ডি করেছেন, তার পর বিদেশে গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকে। এই ৩১ জনের মধ্যে আমেরিকা থেকে এসেছেন ৭ জন, আরও ৬ জন এসেছেন জার্মানি, ইংল্যান্ড, সুইটজারল্যান্ড, কানাডা, জাপান আর কোরিয়া থেকে।
এই উদাহরণ বলে দেয় প্রেসিডেন্সিতে এখন এ দেশে বসেই পড়াশোনা করা, কলেজে পড়ানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অধ্যাপকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিদেশে পড়া ও কাজকর্মের অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক নবীন অধ্যাপক। জুলাই থেকে চালু হয়েছে আমাদের নতুন পাঠ্যক্রম। অনার্স বিষয়ে নতুন করে ঢালা সিলেবাস, নতুন ভাবে ভাবা হচ্ছে ল্যাবরেটরি, গবেষণাধর্মী পেপার আছে অনেক, আছে বিকল্প পত্র। পাস কোর্স উঠে গিয়ে শুরু হয়েছে জেনএড প্রোগ্রাম, যাতে পড়ানো হচ্ছে নতুন ধরনের আন্তঃবিষয়ী কোর্স। বিজ্ঞানের ছাত্রদের পড়তে হচ্ছে সাহিত্য। শেক্সপিয়র পড়ানো হচ্ছে ফিল্ম আর সংগীতের মাধ্যমে। আর্টসের ছাত্ররা পড়ছে ভূগোল আর মহাকাশবিদ্যা। এই আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন অধ্যাপকের দল ক’মাসেই বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছেন।
রাজ্যপাল, মন্ত্রী, আমলা, প্রাক্তনী বিদ্বজ্জন, শিক্ষাব্রতী সংবাদমাধ্যম অভিভাবক এবং পাড়ার মোড়ের রকের দাদাদের কাছে প্রেসিডেন্সির অধ্যাপক আর ছাত্রবৃন্দের পক্ষ থেকে আমাদের একটা মিলিত আর্তি আছে। আমাদের একটু সময় দিন। অনেক স্বপ্ন, সদিচ্ছা আর আদর্শবাদিতা নিয়ে দেশ-প্রবাস ছেড়ে আমরা একত্র হয়েছি কলকাতায় বিশ্বমানের নতুন ধাঁচের এক বিদ্যাস্থান গড়ে তোলার জন্য। এ কাজ এক দিনের নয়, আর আমরা কেউ ম্যাজিক জানি না। আমরা চোর-ডাকাত নই, ব্যবসা-বাণিজ্য বা রাজনীতি করতে আসিনি, তবে পড়াশোনা আর গবেষণায় আমাদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে।
ভাল ছাত্রছাত্রীদের প্রেসিডেন্সিতে আসা বজায় থাকুক। আমাদের পড়তে আর পড়াতে দিন, নতুন করে গড়তে দিন। |